রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের (ভারতীয় দণ্ড বিধি আইনের ধারা ১২৪ এ) উপর স্থগিতাদেশ দেওয়ায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টকে অভিনন্দন জানিয়েছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন।

রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের সাংবিধানিকতা চ্যালেঞ্জ করে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে করা এক আবেদনের উপর শুনানির সময়ে কোর্ট এই আদেশ দেয়। 

কোর্ট তার আদেশে বলেছে, এটা স্পষ্ট যে ১২৪-এ ধারার কঠোরতা বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই বিষয়টি সরকারও স্বীকার করেছে। ঔপনিবেশিক এই আইনটি পুনর্বিবেচনা করবে কেন্দ্রীয় সরকার, তত দিন পর্যন্ত এই আইনে কোনও মামলা করা যাবে না।

রোববার (২২ মে) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল বলেন, ভিন্নমত, প্রতিবাদ ও আন্দোলন দমনে সাম্প্রতিককালে ভারতে রাষ্ট্রদ্রোহ আইন, মানহানি আইনসহ বিভিন্ন আইনের অপব্যবহার বেড়ে চলেছে। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশ ভিন্নমতকে দমন করতে এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতা লঙ্ঘন করার জন্য ভারত সরকার কর্তৃক রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের ব্যাপক অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বার্তা হিসাবে কাজ করবে। উনিশ শতক এবং বিশ শতকের প্রথম দিকে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার ব্যাপকভাবে ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাদের এবং ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের কাছ থেকে স্বাধীনতা চাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এই রাষ্ট্রদ্রোহ আইনটি ব্যবহার করে। এই বিধানটি এখন স্বাধীন ভারতের পরবর্তী সরকাররা দমনের একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।

ফারুখ ফয়সল আরও বলেন, বাংলাদেশও উত্তরাধিকার সূত্রে একই আইন পেয়েছে। ভারত সরকারের মতো, বাংলাদেশ সরকারকেও ১৮৬০ সালের দণ্ড বিধির ১২৪-এ ধারার অধীনে প্রদত্ত ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের বিধানটি পর্যালোচনা করে বাতিল করা উচিত।

ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ড বিধির ১২৪-এ ধারা ব্যবহার করে ছাত্র, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মানবাধিকারকর্মী, রাজনৈতিক কর্মী এবং যারা সরকারের সমালোচনা করে তাদেরকে দমন করার অভিযোগ রয়েছে। 

১২৪-এ ধারার যে কঠোরতা তা এই সময়ের সঙ্গে মানানসই নয়। কারণ এটি তৈরি হয়েছে ঔপনিবেশিক কালে। সুপ্রিম কোর্ট তার আদেশে রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের ব্যবহার স্থগিত করে সরকারকে আইনটি পর্যালোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্রদ্রোহের নতুন কোনো অভিযোগ আমলে নেওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছে। বিচারাধীন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে কারাগারে বন্দি ব্যক্তিরা আদালতের কাছে যেতে এবং জামিন চাইতে পারবেন। সরকার প্রথমে আইনটির পক্ষে যুক্তি দিলেও পরবর্তীতে তার অবস্থান পরিবর্তন করে আইনটি পর্যালোচনা করতে রাজি হয়।

এর আগে, ভারত সরকারকে রাষ্ট্রদ্রোহের বিধান সম্পূর্ণরূপে বাতিল করার এবং রাষ্ট্রদ্রোহ আইনের অধীনে দায়ের করা সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করার আহ্বান জানায় আর্টিকেল নাইনটিন।

একইসঙ্গে ভারত সরকারকে এই ধরনের অন্যান্য আইন পর্যালোচনা করারও আহ্বান জানায় যেমন আনলফুল অ্যাকটিভিটিজ (প্রিভেনশন) অ্যাক্ট ১৯৬৭, ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট ১৯৮০, পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট ১৯৭৮, আর্মড ফোর্সের (স্পেশাল পাওয়ারস) অ্যাক্ট ১৯৫৮ যা ভিন্নমত ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণে ব্যবহার হয়।

এসআর/আইএসএইচ