জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডিজি (মহাপরিচালক) ছাড়া ভোক্তাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বর্তমান কাঠামোর আওতায়ও কোনোভাবেই ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই ভোক্তার অধিকার সংরক্ষণের জন্য অধিদপ্তর যথেষ্ট নয়।

আমরা অন্তত একটা বিভাগ চাই। সেটা হবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ বিভাগ। যে বিভাগ স্বতন্ত্রভাবে ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে সরকারের পলিসি লেভেল এবং প্রশাসনিক জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করবে।

সোমবার (২৩মে) দুপুরে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম জুমে আয়োজিত ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন। কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এই সেমিনারের আয়োজন করে।

সেমিনারে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন। বক্তব্য রাখেন ক্যাবের মুখপাত্র ভোক্তাকণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান, ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম প্রমুখ।

সেমিনারে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, এমন কোনো খাত নেই, যেখানে অসাধু ব্যবসা মাথাচাড়া দেয়নি। সমস্ত খাত একযোগে ভোক্তাদের অধিকারের ওপর তীর বর্ষণ করছে। এসব জায়গায় ভোক্তারা বন্দী হয়ে গেছে। সেই দশা থেকে মুক্ত করার জন্য দেশের আইন ও প্রতিষ্ঠান কেউই সফল নয়। ভোক্তাদের বিশেষভাবে বলব, ভোক্তা অধিকার সুরক্ষা আইনের আওতায় ফৌজদারি আদালতে মামলা করা যায়, নিজ নিজ জেলায় এমন অন্তত একটি ঘটনা চিহ্নিত করুন।

লিখিত বক্তব্যে ক্যাবের সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোতে বড় দিন উপলক্ষে এবং আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারতে পূজার সময় মূল্য ছাড়ের রীতি চলমান। অথচ তার বিপরীত চিত্র আমাদের দেশে। দাম কমা তো দূরের কথা ভিন্ন মাত্রায় প্রতারণা করে অতি মুনাফা লাভে ব্যস্ত হয়ে পড়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা। তাদের অপতৎপরতা ঠেকাতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি করপোরেশন বাজার অভিযান পরিচালনা করছে। অপরাধের জন্য আদায় করা হচ্ছে জরিমানা, করা হচ্ছে সতর্ক। কিন্তু তারপরও অসাধু ব্যবসায়ীদের অপতৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না।

তিনি বলেন, অব্যাহত প্রতারণার সঙ্গে নতুন করে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে পণ্যের নির্ধারিত মূল্যে ঘষাঘষি করে নতুন মূল্য লিখে দেওয়া। বিভিন্ন উৎসব, বিশেষ করে ঈদ সামনে রেখে পণ্যের মূল্যের হরহামেশা পরিবর্তন করা। একই পণ্যের ওপর একবার নয়, দুবার নয়, তিনবার পরিবর্তন করে নতুন মূল্য স্টিকার লাগানোর ঘটনা ঘটছে। প্রতারণার ফাঁদে পড়ে গ্রাহকদের কষ্টের টাকার এই জলাঞ্জলি কষ্টের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ক্যাব সহ-সভাপতি বলেন, এ কথা সত্য যে, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। তারপরও রমজানকে কেন্দ্র করে অনেক মুসলিম দেশে পণ্যের দাম কমিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে রমজান মাস এলেই খাদ্য-পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ে। অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ীর আবির্ভাবও ঘটে। বাজারমূল্যের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে প্রতিটি পণ্যের ক্রয় এবং বিক্রয় মূল্যের চার্ট ঝুলিয়ে রাখার জন্য ভোক্তা সংরক্ষণ আইনে বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা অনেকেই মানছেন না।

তিনি আরও বলেন, ব্যবসা শুধুমাত্র একটি অর্থ উপার্জনের উপায় নয়, এটা একটি সেবাও বটে। পণ্যের মূল্য ঘষামাজা করে অতিমুনাফা আদায়ে সচেষ্ট হওয়াকে ব্যবসা বলা যাবে না। এটা প্রতারণা আর এই প্রতারণা ফৌজদারি অপরাধও বটে। তবে আইন দিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সব সময় সম্ভব না ও হতে পারে। এজন্য প্রয়োজন অতিমুনাফালোভী, প্রতারক, মজুতকারী ও অসাধু ব্যবসায়ীদের সামাজিকভাবে বয়কট করা। তাহলেই হয়ত ব্যবসা-বাণিজ্যে জবাবদিহিতা ও সুশাসন নিশ্চিত হবে।

এএজে/এসকেডি