দেশে টিকার কোনো অভাব নেই, হবেও না
ঢাকা ডেন্টাল কলেজে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক
বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে এখনও টিকা পৌঁছায়নি, অথচ বাংলাদেশ শুরুর দিকেই টিকা পেয়েছে। এ কৃতিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। তিনি বলেছেন, ‘টাকা যা লাগে দিয়ে দাও। আমরা সবার আগে টিকা পেতে চাই।’
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা ডেন্টাল কলেজে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার মতো বড় দেশগুলো ঠিকমতো টিকা পাচ্ছে না। আমরা শুরুতেই ভ্যাকসিন পেয়ে গেছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শুরুতেই অগ্রিম টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার ফলেই আমরা দ্রুতই টিকা পেয়েছি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ৭০ লাখ টিকা দেওয়ার কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে চলছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় টিকাদান কার্যক্রমে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ভ্যাকসিনের অ্যাপসে প্রায় ২৫ লাখ নিবন্ধন হয়েছে। দেশের প্রায় ৬০০ হাসপাতলে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমে আমাদের ৪২ হাজার কর্মী কাজ করছে।
বিজ্ঞাপন
‘করোনার এ দুঃসময়েও বাংলাদেশের প্রত্যেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা পেয়েছে। আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় করোনা প্রতিরোধে এগিয়ে বাংলাদেশ। অথচ এ সময়ে বিরোধীদল শুধু সমালোচনাতেই মেতে ছিল, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রয়োজন বোধ করেনি।’
টিকা কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমে গেছে উল্লেখ করে জাহিদ মালেক বলেন, এখন আর কেউ টিকা নিয়ে সমালোচনা করে না। এতো সুন্দর ভাবে ভ্যাকসিনেশন আর কোথাও হয়নি। বাংলাদেশে একমাত্র দেশ যারা পাবলিকলি টিকা দিচ্ছে। সর্বোচ্চ সুন্দর ব্যবস্থাপনায় আমরা টিকা দিচ্ছি। শুরুতে যারা টিকা নিয়ে সমালোচনা করেছে, তারা এখন সবার আগে নিচ্ছে। আপনারা দেখবেন টিকা কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমে গেছে।
টিকা গ্রহীতাদের এসএমএস জটিলতা প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, একটি কেন্দ্রে যতগুলো লোক একদিনে দেওয়া যাবে, সেই প্রোগ্রাম অনুযায়ী এসএমএস যাবে। ভ্যাকসিনের কোনো অভাব বাংলাদেশে নাই, ভবিষ্যতেও হবে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, প্রথম টিকা নেওয়ার পর তিন মাস পর্যন্ত দ্বিতীয় টিকার সময় থাকে। যত পরে নেওয়া হয় টিকার কার্যকারিতা তত বেশি হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী ৮ সপ্তাহ পর টিকা দেওয়ার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। যারা প্রথম ডোজ নিয়েছেন তাদের কাছে নতুন করে মেসেজ পৌঁছে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সব অসুখেই গুরুত্ব সহকারে দেখি। দেশে এখন নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ অনেক বাড়ছে। মৃত্যু এখানেই বেশি হয়। প্রায় ৬০ শতাংশের ওপরে মানুষের মৃত্যু হয় নন-কমিউনিকেবল ডিজিজে। কিন্তু কমিউনিকেবল ডিজিজেও কম মৃত্যু হয় না। এটা যদি একবার ধরে তাহলে করানো ভাইরাসের মতো হয়ে যায়। তাই কমিউনিকেবল ডিজিজ এবং নন কমিউনিকেবল ডিজিজ দুটোতেই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
মুখের ক্যান্সার বাড়ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে মুখের ক্যান্সার অনেক বাড়ছে। মানুষ পান খায়, জর্দা খায়, গোল খায় আর এসব কারণেই মুখের ক্যান্সার বাড়ে। মুখে কেন ক্যান্সার হয়, করণীয় কী, এগুলো সাধারণ মানুষকে আমাদের জানাতে হবে। মানুষের মুখটাই তো আসল। তারমধ্যে দাঁতটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দাঁতের প্রতি এখনও বাংলাদেশে এতটা সহজ নয়। দাঁতের যত্ন না নিয়ে অবহেলা এখনও রয়েছে। কিন্তু দাঁতের যত্ন নেওয়া খুবই প্রয়োজন। শুধু দেখতে ভালো লাগার জন্যই না, আমরা সারাদিনে যা খাই দাঁত-মুখ দিয়েই পেটে প্রবেশ করে।
আমাদের দেশে দাঁতের ফ্রি চিকিৎসা হচ্ছে। অন্যদেশে কিন্তু এই দাঁতের চিকিৎসা ফ্রি না সেটা আপনারা জানেন। আমরা চাই দাঁতের চিকিৎসকদের কাছ থেকে ভালো সেবা।
এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, টিকা নেওয়ার বয়সসীমা ৪০ বছরই থাকছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) অধ্যাপক ডা. এম. ইকবাল আর্সলান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা ডেন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. হুমায়ুন কবীর।
টিআই/এসএম