করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী প্রায় ২ বছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনায় বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলেও মাঙ্কিপক্স ইস্যুতে এবার সেপথে হাঁটছে না বাংলাদেশ। পৃথিবীর যেকোনো দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের দ্বার খোলাই থাকবে। তবে প্রত্যেককে যেতে হবে স্ক্রিনিংয়ের মধ্য দিয়ে।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মাঙ্কিপক্স যখন প্রথম শনাক্ত হয় তখন পশ্চিম আফ্রিকা এবং মধ্য আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার চিন্তাভাবনা করেছিল বেবিচক। এবিষয়ে নিয়মিত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে তারা। তবে অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই মাঙ্কিপক্স ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। তখন নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বেবিচক।

কোভিড-১৯ এর কারণে দেশের এভিয়েশন ও ট্যুরিজম খাত অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক ট্রাভেল এজেন্সি, টিকিটিং এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর বন্ধ হয়েছে, চাকরি হারিয়ে বেকার হয়েছে অনেকে। তাই এবার নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করতে চায় না তারা। সেজন্য নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে স্ক্রিনিংয়ের দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। 

আফ্রিকা ছাড়াও বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, পর্তুগাল, স্পেন, সুইডেন, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

বেবিচক বলছে, কোভিড-১৯ এর কারণে দেশের এভিয়েশন ও ট্যুরিজম খাত অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক ট্রাভেল এজেন্সি, টিকিটিং এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর বন্ধ হয়েছে, চাকরি হারিয়ে বেকার হয়েছে অনেকে। তাই এবার নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করতে চায় না তারা। সেজন্য নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে স্ক্রিনিংয়ের দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। 

বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘বর্তমানে আমরা কোনো দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে চাইছি না। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। কোনো দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিলে অন্যান্য দেশগুলোও এসব পর্যবেক্ষণ করে। অন্য দেশের যাত্রীরাও বাংলাদেশে আসতে অনীহা দেখাতে পারেন। পরিস্থিতি আইসোলেটেড হয়ে যেতে পারে। তাই আমরা নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছি না, তবে প্রত্যেকের উপর নজরদারি চলবে।’ 

চেয়ারম্যান আরও বলেন, বাংলাদেশে আসা প্রত্যেক যাত্রীকে একটি হেলথ ডিক্লারেশন ফরম দেওয়া হবে। সেখানে বাংলাদেশে আসা যাত্রীরা মাঙ্কিপক্স সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেবেন। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে যাত্রীকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে। এছাড়াও প্রতিটি বিমানবন্দরের ক্রু’দের আমরা ব্রিফ করে দেব। তারা প্লেনের ভেতরেই যাত্রীদের নজরদারি করবে। কারো মধ্যে মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ বা উপসর্গ থাকলে তাকে আলাদা করে রাখবে। 

বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাঙ্কিপক্স দেখা দিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলো সতর্ক রয়েছে। 

কী থাকছে হেলথ ডিক্লারেশন ফরমে? 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরামর্শে তৈরি করা হেলথ ডিক্লারেশন ফরমটি বাংলাদেশে আসা প্রতিটি যাত্রীকে প্লেনের ভেতরেই দেওয়া হবে। ফরমে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত তথ্য, কোভিড-১৯ টিকা সংক্রান্ত তথ্য থাকবে। এর সঙ্গে মাঙ্কিপক্স নিয়ে ৩টি প্রশ্ন থাকবে। 

ফরমে উল্লেখ থাকবে, আপনি মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত কি না? আপনার মধ্যে মাঙ্কিপক্সের কোনো লক্ষণ-উপসর্গ আছে কি না (লক্ষণগুলো লেখা থাকবে)? মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়েছে গত ১৫ দিনে এমন কোনো দেশে ভ্রমণ করেছেন কি না?

সাধারণত হালকা ভাইরাল সংক্রমণের জন্য দায়ী এই ভাইরাস। ভাইরাসটি গুটিবসন্তের মতো একই প্রজাতির সদস্য। এই প্রজাতির মধ্যে রয়েছে ভেরিওলা ভাইরাস; যা গুটিবসন্তের কারণ, ভ্যাক্সিনিয়া ভাইরাস (গুটিবসন্ত ভ্যাকসিনে ব্যবহৃত) ও কাউপক্স ভাইরাস।

যাত্রী এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পর তাদের উত্তর যাচাই-বাছাই করবেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসকরা। এছাড়াও প্রতিটি যাত্রীর চেহারা, শরীর ও হাত-পা সচক্ষে পর্যবেক্ষণ করবেন। 

গুজব ও আতঙ্ক এড়িয়ে সতর্কতার পরামর্শ

বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো মাঙ্কিপক্স রোগী শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মাঙ্কিপক্স নিয়ে গুজব বা আতঙ্ক নয়, বরং আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। 

মাঙ্কিপক্স কী?

মাঙ্কিপক্স একটি বিরল ও স্বল্প পরিচিত রোগ। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস এ রোগের জন্য দায়ী। বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার উষ্ণ ও আর্দ্র বনাঞ্চলের বানররা ছিল এ রোগের প্রথম শিকার। তারপর একসময় মানবদেহেও সংক্রমণ ঘটায় মাঙ্কিপক্স।

মহামারি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ সাধারণত ‘একেবারে বিরল’। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (সিডিসি) মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সতর্ক করে বলেছে, পর্তুগাল ও স্পেনের প্রাদুর্ভাবের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যেও এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে।

সাধারণত হালকা ভাইরাল সংক্রমণের জন্য দায়ী এই ভাইরাস। ভাইরাসটি গুটিবসন্তের মতো একই প্রজাতির সদস্য। এই প্রজাতির মধ্যে রয়েছে ভেরিওলা ভাইরাস; যা গুটিবসন্তের কারণ, ভ্যাক্সিনিয়া ভাইরাস (গুটিবসন্ত ভ্যাকসিনে ব্যবহৃত) ও কাউপক্স ভাইরাস।

মাঙ্কিপক্স কতটা প্রাণঘাতী?

আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে কঙ্গো প্রজাতির প্রাদুর্ভাব অত্যন্ত গুরুতর। ওই অঞ্চলে কঙ্গো প্রজাতিতে আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর হার ১০ শতাংশের বেশি। আর এতে বাচ্চাদের মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি। অন্যদিকে, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতির তীব্রতা তুলনামূলক কম। এই প্রজাতিতে আক্রান্তদের মৃত্যুর হার ১ শতাংশের মতো।

এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১২টি দেশে শনাক্ত হওয়া মাঙ্কিপক্স আসলে কোন প্রজাতির তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। যদিও যুক্তরাজ্যে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতি শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।

মহামারি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ সাধারণত ‘একেবারে বিরল’। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র (সিডিসি) মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং সতর্ক করে বলেছে, পর্তুগাল ও স্পেনের প্রাদুর্ভাবের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যেও এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এরিক ফেইগল-ডিং বলেছেন, ‘এটা একেবারে অস্বাভাবিক। তারপরও লোকজন বলছে, এটা ঠিক ফ্লুর মতো, এছাড়া কিছু নয়। আমরা কি নতুন তথ্য-উপাত্ত দেখে শিক্ষা নিচ্ছি?’

এআর/জেডএস