দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে বিমা চালু করা জরুরি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ। 

শনিবার (২৮ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে আয়োজিত ‘হৃদরোগ প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুততম সময়ে চিকিৎসা না দিতে পারায় অনেক সময় রাস্তায় মৃত্যুবরণ করেন। তাই হৃদরোগের চিকিৎসা কেন্দ্রগুলো শহর বা বিভাগকেন্দ্রিক না হয়ে জেলা শহরে বা প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়া উচিত। এতে এসব অঞ্চলের লোকজন দ্রুত এবং সঠিক চিকিৎসা পাবে এবং মৃত্যুর হার অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।

প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ‘হৃদরোগ প্রতিরোধে চ্যালেঞ্জ এবং করণীয়’ শীর্ষক আলোচনায় গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. এস এম মোস্তফা জামান। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, উপ-কমিটির স্বাস্থ্য ও সদস্য কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক বখতিয়ার রাণা প্রমুখ।

সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই হার্ট ক্যাম্পে তিন শতাধিক সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। হার্ট ক্যাম্পে ব্লাড প্রেসার পরিমাপ, রক্তের গ্লুকোজ পরিমাপ, লিপিড প্রোফাইল, ইসিজি পরীক্ষাসহ চিকিৎসা বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়। হার্ট ক্যাম্পের সহযোগীতায় ছিল ল্যাবএইড। 

হৃদরোগকে নীরব ঘাতক হিসেবে উল্লেখ করে এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, হৃদরোগ বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি। এসময় তিনি হৃদরোগ চিকিৎসা সহজলভ্য এবং এর ব্যয় কমানোর উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। একইসঙ্গে তিনি বুকে ব্যথা হলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার উপদেশ দেন।

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ডা. এস এম মোস্তফা জামান বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৫ লাখ ৭২ হাজার ৬শ মানুষের মৃত্যু হয় অসংক্রামক ব্যাধির কারণে, যার মধ্যে ৩০ শতাংশ মৃত্যু হৃদরোগের কারণে। হৃদরোগ চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ সহজ। হৃদরোগ প্রতিরোধযোগ্য। প্রতিটি নাগরিকের হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ তৈরিতে কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে হবে।

এছাড়া ধূমপান বর্জন করতে হবে। সাদাপাতা, জর্দা পরিহার করতে হবে। চর্বিযুক্ত খাদ্য পরিহার করতে হবে। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি এবং ব্যায়াম করতে হবে। একই সঙ্গে দেশেই হৃদরোগের শতভাগ চিকিৎসা করানো সম্ভব বলেন তিনি।

ওয়াল্ড হার্ট ফাউন্ডেশনের তথ্য উল্লেখ করে এস এম মোস্তফা জামান জানান, বিশ্বে প্রতিবছর অসংক্রামক রোগে চার কোটি ১০ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করে, তার মধ্যে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১ কোটি ৭৯ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ, ভারতসহ এ অঞ্চলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেশি। এছাড়া বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগ পরিচালিত গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশের ৩৫ বছর কম বয়সী নারী ও পুরুষের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি উন্নত বিশ্বের সমবয়সী মানুষের তুলনায় ১৭ গুণ বেশি।

অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসা দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান ক্লাব সদস্যদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এবং ল্যাব এইড কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ক্যাম্প আয়োজনের কথা জানান।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি হাসান হাফিজ, যুগ্ম সম্পাদক মাঈনুল আলম ও আশরাফ আলী, কোষাধ্যক্ষ শাহেদ চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আইয়ুব ভূঁইয়া, কাজী রওনাক হোসেন, শাহনাজ সিদ্দিকী সোমা, শাহনাজ বেগম পলি, সৈয়দ আবদাল আহমদ, ভানুরঞ্জন চক্রবর্তীসহ ক্লাবের সিনিয়র সদস্যরা।

টিআই/জেডএস