চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে স্মার্ট গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বিএম কনটেইনার ডিপোয় বিকট শব্দে বিস্ফোরণের পর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আগুন। এর নেপথ্যে ছিল হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড বোঝাই কনটেইনার।

কাস্টমসের ছাড়পত্র ও বিস্ফোরক পরিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইডের মতো দাহ্য কেমিক্যাল মজুত করা হয়েছিল— দাবি প্রতিষ্ঠানটির। তবে বিস্ফোরক পরিদপ্তর বলছে, তাদের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এমনকি তালিকায়ও নেই এ প্রতিষ্ঠানের নাম।

ফায়ার সার্ভিস ও ডিপো সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে স্মার্ট গ্রুপের বিএম কনটেইনার ডিপোসহ অন্য সব ডিপোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় রয়েছে ত্রুটি। দাহ্য পদার্থ আমদানিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের কড়াকড়ি নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি।

গতকাল শনিবার (৪ জুন) রাত ৯টা থেকে টানা আট ঘণ্টা আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে অঙ্গার হয়েছে নয় শ্রমিকসহ ৩৭ জন।  আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে শুধু ফায়ার সার্ভিসেরই আট কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিদগ্ধদের অনেকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। আহতদের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে ৩০০।

প্রাথমিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কেমিক্যাল বহন করা কনটেইনার থেকে বলা হলেও বিএম কনটেইনার ডিপোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় মারাত্মক ত্রুটির কথা জানা গেছে প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত কর্মচারীদের কাছ থেকে।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক রাকিবুল ইসলাম বলেন, কনটেইনারে আমদানি করা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ছিল। ফলে দ্রুত বিস্ফোরণ হয়েছে। যদিও রোববার দুপুর ১টা পর্যন্ত ডিপোর মালিক বা কোনো কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসেননি।

মালিকপক্ষের কেউ না থাকায় কনটেইনার ডিপোতে কী ধরনের কেমিক্যাল রয়েছে তা জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল। ফায়ার সার্ভিস বলছে, এ কারণে তারা উদ্ধার তৎপরতায় বেকায়দায় পড়েন।

সরেজমিনে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, কনটেইনার ডিপোটির মালিকপক্ষের কাউকে এখনো পাওয়া যায়নি। এখানে কী ধরনের কেমিক্যাল আছে, তা বলা যাচ্ছে না। পানি দিয়ে সব কেমিক্যালের আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ কারণে নিয়ন্ত্রণে সময় লাগছে।

কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয় তা জানতে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও উদ্ধার অভিযানে কাজ শুরু করেছে।

বিএম কনটেইনার ডিপো একটি বেসরকারি আইসিডি (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোট), এটি স্মার্ট গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালে নেদারল্যান্ডস-বাংলাদেশ যৌথ বিনিয়োগে চালু করা হয়েছিল বেসরকারি এ কনটেইনার ডিপো।

একটি আইসিডিতে কী পরিমাণ যন্ত্রপাতি থাকতে হবে, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরে শর্তাবলি নির্ধারণ করা রয়েছে। এসব শর্ত না মানলে লাইসেন্স স্থগিত রাখারও সুপারিশ করেছিল নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি। আইসিডি নীতিমালা অনুযায়ী, আধুনিক অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার শর্ত থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি তার অনেকটা মানেনি বলে জানা গেছে।

যোগাযোগ করা হলে বিএম কন্টেইনার ডিপোর পরিচালক মুজিবুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কী কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা আমরা এখনো নিশ্চিত নই। তবে কন্টেইনার থেকেই আগুন ধরেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড কনটেইনার এক্সপোর্ট বা ইমপোর্ট করতে হলে বন্দর, কাস্টমস ও বিস্ফোরক পরিদপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হয়। আমাদের সবই আছে।

তবে বিস্ফোরক পরিদপ্তরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক মোহা. নায়েব আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের এখানে কার্যবিধি সীমা রয়েছে। তার আওতায় বিএম কনটেইনার ডিপোর কোনো নাম নেই। তারা আমাদের এখান থেকে অনুমতি নেয়নি। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমতি নিয়েছে কি না, সেটা তারা বলতে পারবে।
 
জেইউ/এসকেডি