সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ফলে হতাহতদের বেশিরভাগকেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চমেকের পার্শ্ববর্তী হাসপাতালগুলোও আহতদের ভর্তি করা হয়। আগুন লাগার পর থেকে অগ্নিদগ্ধ ও বিস্ফোরণে হাত-পা হারানোদের সেবায় শনিবার রাত থেকে নিববচ্ছিন্ন কাজ করে যাচ্ছেন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, হঠাৎ করেই শত শত রোগী হাসপাতালে আসতে শুরু করায় অনেকটাই সংকটে পড়ে যান কর্তব্যরত স্বাস্থ্যকর্মীরা। অপ্রস্তুত অবস্থাতেই ঝাঁপিয়ে পড়েন স্বাস্থ্য সেবা যুদ্ধে।

শুরুতে এক রোগী আসে বিস্ফোরণে নাঁড়িভুঁড়ি সব বের হয়ে যাওয়া এমন। এরপর কারো বুকে লোহার পাত ঢুঁকে গেছে, কারো বুকের মাংসই উড়ে গেসে, একজনের কোমড়ের পেছনে মাংস নাই; সেখান থেকে কিডনি-নাঁড়িভুঁড়ি বাইরে ঝুলছে, আবার কোনো রোগীর শরীর থেকে মাংস খসে খসে পড়ে যাচ্ছে...!

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি-১ ইউনিটের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে কর্মরত অভ্র ভট্টাচার্য নামক এক চিকিৎসক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এভাবেই ঘটনার বর্ণনা করেন।

তার লেখার আংশিক হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘চমেকের সার্জারি ইউনিট-১ এর ইমার্জেন্সি ওটি (অপারেশন থিয়েটার) বরাবরই বিকেলে শুরু হয়ে মাঝরাতে শেষ হয় (মাঝে মধ্যে পরদিন সকালও হয়ে যায়)। গতকালও বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে শুরু করে লাগাতার আমাদের ইমার্জেন্সি অপারেশন চলছিল...

রাত সাড়ে ১১টায় তখন আর মাত্র ২ জন রোগীর অপারেশন বাকি। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চিন্তা করলাম আজ হয়তো রাত ২টার মধ্যে বাসায় যেতে পারবো; পরদিন (রোববার) আবার সকাল ৮টা থেকে মর্নিং ডিউটি আছে আমার।

অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে থাকায় তখন আমরা বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। ঠিক সেই সময়ই খবর এলো চট্টগ্রামে বড় ধরনের দুর্ঘটনা হয়েছে। শ’য়ে শ’য়ে অ্যাম্বুলেন্স চমেকের উদ্দেশ্যে আসছে। সবাই প্রস্তুত হও।

এর ঠিক ১০ মিনিট পরই একজন রোগী এলেন নাঁড়িভুঁড়ি সব বের হয়ে গেছে। এভাবে পর পর দুর্ঘটনায় আহত রোগী এসে ভিড় করতে লাগলো আমাদের ওয়ার্ডে। কারো বুকে লোহার পাত ঢুঁকে গেছে তো কারো বুকের মাংসই উড়ে গেছে। একজনের কোমরের পেছনে মাংস নাই; সেখান থেকে কিডনি-নাঁড়িভুঁড়ি বাইরে ঝুলতেছে। আবার কোনো রোগীর শরীর থেকে মাংস খসে খসে পড়ে যাচ্ছে। এরকম অসংখ্য অসংখ্য আহত রোগীদের চিকিৎসা দিতে দিতেই রাত পার হয়ে আজ বিকেল এখন... কিন্তু থেমে নেই চিকিৎসা সেবা...।

খবর পাওয়া মাত্রই সব চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল স্টুডেন্ট, স্বেচ্ছাসেবীরা একত্রে লড়ে গেছেন এ দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের রক্ষার্থে... স্যালুট তাদের সবাইকে...।'

প্রসঙ্গত, সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোর আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও এখনো নেভেনি। ঘটনাস্থলে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনী সদস্যরাও।

সোমবার (৬ জুন) সকাল ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এখনো আগুন নেভানোর কাজ করছি। আগুন পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগবে।

সবশেষ পাওয়া তথ্য মতে, কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ এ আগুন ও বিস্ফোরণে ৯ ফায়ার ফাইটারসহ ৪৬ জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। দগ্ধ ও আহত হয়ে হাসপাতালে বিছানায় কাতরাচ্ছেন দেড় শতাধিক মানুষ। এর মধ্যে গুরুতর কয়েকজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

টিআই/এসএম