রোহিঙ্গাদের একটি দলকে প্রত্যাবর্তন করতে চায় বাংলাদেশ
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্মরণসভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন / ঢাকা পোস্ট
রোহিঙ্গাদের একটি দলকে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন করতে চায় বাংলাদেশ— জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বুধবার (১৫ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত প্রয়াত সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের স্মরণসভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞাপন
ড. মোমেন বলেন, ‘তিন বছর পর বাংলাদেশ-মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন সংক্রান্ত ওয়ার্কিং গ্রুপের পঞ্চম বৈঠক গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমরা প্রথমে একটি গ্রুপ (দল) পাঠাতে চাই। কিন্তু দিন-তারিখ ঠিক হয়নি।’
‘আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমরা আট লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তথ্য দিয়েছি। কিন্তু যাচাই-বাছাই হয়েছে মাত্র ৫৮ হাজারের। এটি তাদের (মিয়ানমার) দ্রুততার সঙ্গে করতে বলা হয়েছে’— বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিজ্ঞাপন
প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার (১৪ জুন) রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসে ঢাকা-নেপিডো। মিয়ানমারের অং সান সু চি’র সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখলের পর অর্থাৎ দেড় বছরের বেশি সময় পর সামরিক জান্তা সমর্থিত সরকারের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত বৈঠকে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। অন্যদিকে, নেপিডোর পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব উ চান আয়।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ এ বছরই প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায়। বৈঠকে এমনটাই আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে অনেক দিন পর দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে এবং আগামী দিনে এটি অব্যাহত থাকবে।
গতকালের বৈঠক নিয়ে কূটনৈতিক চ্যানেলগুলোর বার্তা বলছে, প্রত্যাবাসনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে মিয়ানমার। ছোট আকারে হলেও তারা প্রত্যাবাসন চায়। এ ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আরও কাজ করবে দেশটি। এক্ষেত্রে আসিয়ান ও জাতিসংঘের সহায়তা নিতেও রাজি আছে তারা।
বাংলাদেশও প্রত্যাবাসন শুরু করতে রাজি হয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব কারণে প্রত্যাবাসন শুরু করা যাচ্ছে না সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পুরোনো বেশকিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসন, পুরো পরিবার বা এলাকা ধরে নেওয়া। এছাড়া মিয়ানমারের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গাদের রাজি করাতে হবে। এতে রাজি হয়েছে মিয়ানমার।
তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে মিয়ানমারের ওপর আস্থা রাখতে না পারার বিষয়টিও অবগত করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে একটি প্রতিনিধি দল পাঠাতে রাজি হয়েছে দেশটি। তবে কবে নাগাদ প্রতিনিধি দল পাঠাবে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো বার্তা দেয়নি মিয়ানমার।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনা অভিযান শুরুর পর কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল চার লাখের অধিক রোহিঙ্গা। আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।
২০১৮ সালের নভেম্বর এবং ২০১৯ সালের আগস্টে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। ওই সময় রাখাইন রাজ্যের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ফিরতে রাজি হয়নি রোহিঙ্গারা।
এনআই/এমএআর/