টানটান উত্তেজনা নিয়ে শেষ হলো কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন। বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়ে ইতিহাস গড়লেন নৌকার প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। এর মধ্য দিয়ে ১০ বছর পাঁচ মাস ১০ দিন পর কুমিল্লাবাসী পেল নতুন মেয়র। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পেল দলীয় মেয়র।

বুধবার (১৫ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী এ ফল ঘোষণা করেন।

গত দুবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু যদিও ঘোষিত ফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবে গুটিকয়েক কেন্দ্রের ফল আটকে রেখে তাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আইনি লড়াইয়ে যাবেন বলেও ঘোষণা দেন।

বুধবার সকাল ৮টা থেকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের ১০৫টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হয়।

কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার দুই লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। তাদের মধ্যে এক লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারী ভোটার এবং পুরুষ ভোটার এক লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার দুজন।

এর আগে ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু দ্বিতীয়বার জয়লাভ করেন। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছিলেন ৬৮ হাজার ৯৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমা নৌকা প্রতীক নিয়ে পেয়েছিলেন ৫৭ হাজার ৮৬৩ ভোট। অর্থাৎ ১১ হাজার ৮৫ ভোটের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার মেয়র হন সাক্কু।

ওই সময় ১০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০১টির ফল ঘোষণা করা হয়। দুটি কেন্দ্রের ফল স্থগিত রাখা হয়। নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন দুই লাখ সাত হাজার ৫৬৬ জন। ভোট পড়ে এক লাখ ৩২ হাজার ৬৯০টি।

২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি ছিল কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) প্রথম নির্বাচন। তখন হাঁস প্রতীকে ৬৫ হাজার ৫৭৭ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন বিএনপি থেকে অব্যাহতি নেওয়া মনিরুল হক সাক্কু।

ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে আপত্তি জানিয়ে ওই নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। যান্ত্রিক পদ্ধতিতে দেশের প্রথম নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থী আফজল খান। আনারস প্রতীক নিয়ে আফজল খান পেয়েছিলেন ৩৬ হাজার ৪৭১ ভোট।

কুমিল্লার ২৭ ওয়ার্ডের ৬৫টি কেন্দ্রের সবকটিতে নির্বাচন হয় ইভিএমে। ওই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন এক লাখ ৬৯ হাজার ২৭৩ জন। পুরুষ ভোটার ৮৩ হাজার ১৯৯ জন এবং নারী ভোটার ৮৬ হাজার ৭৪ জন। নির্বাচনে এক লাখ ২৭ হাজার ৭২ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। ভোটের হার ছিল ৭৫ দশমিক ০৬ শতাংশ।

উল্লেখ্য, কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভাকে একীভূত করে ২০১১ সালের ১০ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এক অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মর্যাদা দেয়। প্রায় ৫৩ দশমিক ৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ সিটিকে ২৭টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়। অধুনালুপ্ত কুমিল্লা পৌরসভা ১৮টি ওয়ার্ডে বিভক্ত ছিল। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভা ছিল নয়টি ওয়ার্ডে বিভক্ত।

এনএ/এমএআর/