ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডে বিধ্বস্ত চুড়িহাট্টা/ ফাইল ছবি

রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা এলাকার আকাশে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে লালচে আভা। সেই লালচে আভায় ওই এলাকায় মুহূর্তেই নেমে এলো বিষাদের কালো ছায়া। একে একে আসতে থাকে মৃত্যুর খবর। প্রাণ যায় ৭১ জনের। সেদিনের সেই ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনার কথা ভুলে যাওয়ার মতো নয়। ওই ঘটনার দৃশ্য মনে পড়লে এখনও শিউরে উঠবেন যে কেউ। 

সে দিনের সেই দুর্বিশহ ঘটনা আজও কাঁদায় স্বজনদের। যাদের বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তান সেদিন আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে, তারা কী করে ভুলবেন স্বজন হারানোর ব্যথা? বছর পার হয়ে ভয়াবহ এ দিনটি আসলে স্বজন হারানোর কষ্ট যেন আরও বেড়ে যায়। বুকভারী হয় স্বজনদের। মেলে না কোনো সান্ত্বনা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও হয়তো কারো নেই। চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের দুই বছর পূর্ণ হলো আজ। এই দিনে তাদের একটিই চাওয়া সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি হোক।

২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারাতে হয় ৭১ জনকে। স্বজন হারানোর কথা জিজ্ঞেস করতেই মামলার বাদী আসিফ বলেন, ‘প্রতি বছর ২০ ফেব্রুয়ারি এলে সবাই আমাদের খবর নেয়। এরপর আবার সবাই আমাদের ভুলে যায়।’

ঘটনায় দুই বছর পূর্ণ হলেও ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা। তবে তদন্ত কর্মকর্তা আশা করছেন, খুব শিগগিরই ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারবেন।

ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডে বিধ্বস্ত চুড়িহাট্টা/ ফাইল ছবি 

এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাবা হারানো সন্তান আসিফ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় দুই জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলায় আসামি করা হয় ওয়াহিদ ম্যানশনের মালিক মো. হাসান ও সোহেলকে। তারা দুইজন ভাই। পরে দুই আসামি উচ্চ আদালতে জামিন পেয়েছেন। বর্তমানে মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।

মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আরও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি আছে। কাজগুলো শেষ হলেই খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করব।

কবির হোসেন, তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ পরিদর্শক, চকবাজার থানা

মামলার তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তা চকবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। আরও আনুষঙ্গিক কিছু কাজ বাকি আছে। কাজগুলো শেষ হলেই খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করব।’

মামলার বাদী আসিফ বলেন, ‘মামলা করার পর দুই বছর পার হয়ে গেল। এখনও তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ। তদন্ত কি হচ্ছে, কতটুকু তদন্ত এগুলো, আমরা তো কিছুই জানি না। বিচার পাব কিনা তা নিয়ে মনে সংশয় কাজ করছে। আমরা বাবা, আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের হারালাম। বিচার তো আজও পেলাম না।

বিচার পাব কিনা তা নিয়ে মনে সংশয় কাজ করছে। আমরা বাবা, আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীদের হারালাম। বিচার তো আজও পেলাম না।

আসিফ, মামলার বাদী 

আসিফ আরও বলেন, ‘প্রতিবছর ২০ ফেব্রুয়ারি এলে অনেকে খোঁজ নেন। এরপর আবার ভুলে যায়। আগুনের ঘটনায় আমরা অনেকে নিঃস্ব হয়ে গেছি। শুনলাম আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের জন্য সব ব্যাংক মিলে প্রায় ৩০ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছে। কিন্তু সে টাকা তো পেলাম না। টাকা যদি দিয়ে থাকে তাহলে ওই টাকা কোথায়? আমরা চাই মামলার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি হোক।’

ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডে বিধ্বস্ত চুড়িহাট্টা/ ফাইল ছবি 

আসামিপক্ষের আইনজীবী মোস্তফা পাঠান ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এ মামলায় যারা আসামি তারাও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আসামিদের মা আগুনে আহত হয়েছেন। কেউ তো আর ইচ্ছে করে আগুন লাগায় না। এ আগুনে তো আসামিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তারা তো এখন অসহায়। বাড়ি ভাড়ার টাকা দিয়ে তাদের সংসার চলত। সেই বাড়িটাও নষ্ট হয়ে গেছে। ওইদিন তো কোনো রকমে তারা প্রাণ নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পেরেছেন। তা না হলে তো সেদিন তারাও আগুনে পুড়ে যেত। বর্তমানে মামলার দুই আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিনপ্রাপ্ত হয়ে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন।’ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হলে আসামিরা নির্দোষ প্রমাণিত হবেন বলে তিনি মনে করেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিকের দুই ছেলে মো. হাসান ও সোহেল ওরফে শহীদ তাদের চতুর্থ তলার বসতবাড়ির বিভিন্ন ফ্লোরে দার্হ্যপদার্থ ক্রয়-বিক্রয়কারীদের কাছে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় ভাড়া দেন। এরপর ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে চকবাজার মডেল থানাধীন চুড়িহাট্টা শাহী জামে মসজিদের সামনে রাস্তায় চলাচলরত একটি প্রাইভেটকারের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে পামের বিদ্যুতের ট্রান্সমিটারে আগুন লাগে। সঙ্গে সঙ্গে পাশে আরেকটি প্রাইভেটকারে আগুন লাগলে সেই গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়। নন্দকুমার দত্ত রোড চুড়িহাট্টা বিল্ডিংয়ের সামনে একটি পিকআপ গ্যাস সিলিন্ডার ভর্তি অবস্থায় দাঁড়িয়ে ছিল। ওই পিকআপের সিলিন্ডারগুলো বিস্ফোরিত হয়ে বাড়ির নিচতলা ও রাজমহল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে আগুন লাগে। ওই রাতে চুড়িহাট্টার অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন মারা যায়। ওই ঘটনায় চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

টিএইচ/এসএসএইচ