সিলেটের বিভিন্ন বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ। রোববার (১৯ জুন) পরিদর্শনকালে সেনাবহিনী প্রধান সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক ও নিকটবর্তী বন্যাকবলিত এলাকায় বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন এবং বন্যা কবলিত মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন।

রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানায়, এসময় সেনাবহিনী প্রধান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিরলসভাবে উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রাখা, জরুরি ত্রাণকার্য পরিচালনা, চিকিৎসা সহায়তা প্রদান এবং বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মকভাবে আত্মত্যাগের মাধ্যমে সহায়তার নির্দেশনা প্রদান করেন।

সেনাবাহিনী প্রধান উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আমরা সবাই মিলে যদি সম্মিলিতভাবে কাজ করি এই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে পারব। তাই সেনা সদস্যদের সর্বাত্মকভাবে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে আন্তরিকতার কাজ করতে হবে। এছাড়া বন্যা পরবর্তী সময়েও সব ধরনের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন সেনাবাহিনী প্রধান।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাস্টার জেনারেল অব অর্ডন্যান্স মেজর জেনারেল মো. আবু সাঈদ সিদ্দিক, ১৭ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল হামিদুল হক, সেনাসদরের ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা, সিলেট জেলার পুলিশ সুপার ও গণমাধ্যম কর্মীরা।

শুক্রবার (১৭ জুন) থেকে সেনাবাহিনীর সিলেট অঞ্চলের ১৭ পদাতিক ডিভিশন সিলেট জেলার সিলেট সদর, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট, জয়িন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলা এবং সুনামগঞ্জ জেলার সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দোয়ারা বাজার, দিরাই ও জামালগঞ্জ উপজেলা এবং কুমারগাঁও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দায়িত্ব পালন করছে। সেনাবাহিনীর অন্যান্য ফরমেশন থেকে সিলেট এলাকায় উদ্ধার কাজে সহায়তার জন্য বিভিন্ন নৌযান মোতায়েন করা হয়। এছাড়াও কমান্ডো ব্যাটালিয়ানের সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। একই সঙ্গে নৌবাহিনীর একটি দল সিলেট এলাকায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করেছে।

নেত্রকোনার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার প্রেক্ষাপটে শনিবার (১৮ জুন) ঘাটাইল অঞ্চল থেকে ১৯ পদাতিক ডিভিশনের ১২৫ জন সেনাসদস্য নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, উদ্ধার কার্যক্রম, ত্রাণ বিতরণ এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদানের জন্য মোতায়েন রয়েছে।

উল্লেখ্য, সেনাবাহিনীর সদস্যরা শনিবার সুনামগঞ্জ থেকে এমআইএসটির ১৫ জন শিক্ষার্থী এবং আজ সুনামগঞ্জের ছাতকে আটকে পড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে এসেছে। এছাড়া সিলেট ও সুনামগঞ্জ থেকে ২০১০ জন বন্যা দুর্গত ব্যক্তিকে উদ্ধার করে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে প্রেরণ, ৩৬২৫ জনকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান ও ২২০০ জনের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি বন্যার্তদের মধ্যে সুপেয় পানির ব্যবস্থা, পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধ বিতরণ এবং ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেল গঠন করেছে।

সেনাবাহিনী প্রধানের নির্দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্যান্য সব অঞ্চলের ফরমেশনগুলো নিজস্ব দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে এবং অসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত জাতির আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এই মানবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।

এসএসএইচ