রাত ৮টায় দোকান বন্ধের সিদ্ধান্তকে অনেকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন, অনেকে আবার নেতিবাচকভাবে দেখছেন। 

• সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে গতকাল থেকে 
• ৮টার পর দোকান খোলা নিয়ে দ্বিধায় অনেক দোকানি 
• কোরবানির ঈদ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত স্থগিত চান ব্যবসায়ীরা 
• দোকান বন্ধ হয়ে গেলে যাত্রী পাওয়া যাবে না, চিন্তা একজন রিকশাচালকের 
• কোনোটা বন্ধ থাকবে কোনোটা চালু থাকবে, এটা ঠিক না, মনে করেন একজন ব্যবসায়ী 

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয় করতে রাত ৮টার পর থেকে দোকান, বিপণিবিতান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ সিদ্ধান্তকে অনেকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন, অনেকে আবার নেতিবাচকভাবে দেখছেন। 

এ সংক্রান্ত যে নির্দেশনা সরকার দিয়েছে তা নিয়ে মুদি দোকানদার, জেনারেল স্টোরের দোকানদাররা আছেন দ্বিধায়। তাদের দোকান খোলা রাখা যাবে কি যাবে না সে বিষয়ে তারা পরিষ্কার হতে পারছেন না।  

সরকারি নির্দেশনায় রাত ৮টার পর তরি-তরকারি, মাংস, মাছ, দুগ্ধজাতীয় সামগ্রী বিক্রির দোকান খোলা রাখা যাবে বলা হলেও মুদি দোকানের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা নেই। তার ফলে দোকানি তরি-তরকারি বা দুগ্ধজাতীয় সামগ্রীও বিক্রি করেন তারা বুঝতে পারছেন না তাদের জন্য আসলে নির্দেশনা কী। 

সরকারের এ নির্দেশনা ঈদুল আজহা পর্যন্ত স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।  

সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে গতকাল থেকে 

সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করেছে ঢাকা পোস্ট। 

রাজধানীর বেইলি রোডে কথা হয় রিকশাচালক সোহেল মিয়ার সঙ্গে। রিকশার প্যাডেল ঘুরিয়ে চলে তার সংসার। সোহেল বলেন, আমি মালিবাগ, মগবাজার এলাকায় রিকশা চালাই। এদিকে অনেক মার্কেট, দোকানপাট আছে। এসব দোকানের ক্রেতারাই আমাদের যাত্রী। রাত ৮টায় যদি দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায় তাহলে রিকশার যাত্রী পাওয়া হবে দুষ্কর। এটা কোনোভাবেই আমাদের জন্য ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে না।

বেইলি রোডে প্রিয়দর্শিনী নামক কাপড়ের দোকানদার মনির বলেন, সরকার যে বিবেচনা থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা যৌক্তিক। তবে এটা কোনো কোনো পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থগিত বা টাইম রিশিডিউল করতে হবে। যেমন- সামনে ঈদ। ঈদকেন্দ্রিক বেচাকেনার জন্য আমরা মুখিয়ে থাকি। চাকরিজীবী ক্রেতাদের আমরা হারাব, যদি এই সিদ্ধান্ত ঈদেও বহাল থাকে।

মালিবাগের সোহেল মোটরসের দোকানদার আলামিন হোসেন বলেন, সরকার বিদ্যুত সাশ্রয় করতে চায়৷ মার্কেটসহ দোকানপাট বন্ধকে যৌক্তিক মনে করি। তবে কোনোটা বন্ধ থাকবে কোনোটা চালু থাকবে, এটা ঠিক হবে না। জরুরি সেবার দোকান ছাড়া সবই বন্ধ রাখার পক্ষে তিনি। 

রিকশাচালক সোহেল মিয়ার চিন্তা রাত ৮টায় দোকান বন্ধ হয়ে গেলে যাত্রী পাবেন না তিনি

দ্বিধায় আছেন মালিবাগের খান জেনারেলের স্টোরের মালিক তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী আমার দোকান বন্ধ থাকবে। কিন্তু আমার দোকানে পচনশীল খাদ্য-পণ্য আছে। আলু-পটল আছে, তরকারি আছে। দুগ্ধজাত পণ্যও আছে। এখন আমি কোন তালিকায় পড়েছি তা স্পষ্ট নয়। এটা স্পষ্ট করা উচিৎ ছিল। এই দ্বিধা কিন্তু অনেকের মনেই। 

সাধারণ ক্রেতা হিসেবে সরকারের আগের ও এখনকার সিদ্ধান্তকে বিপরীতমুখি বলছেন আফসার আলী। মগবাজারের এ ক্রেতা বলেন, ‘বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য না কি এই সিদ্ধান্ত। কিন্তু সরকার তো সারা বছর গান গাইল বিদ্যুতের উৎপাদন না কি চাহিদার চেয়েও বেশি। তবে এখন কেন সাশ্রয়ের কথা আসছে। অনেক মানুষ আছেন যাদের অন্ন জোগানোর বন্দোবস্ত শুরু হয় সন্ধ্যার পর। এসব ভেবে দেখা উচিৎ।’ 

কার্যকর হয়েছে গতকাল থেকে 
রাত ৮টার পর সারা দেশে দোকান, শপিং মল, মার্কেট, বিপণিবিতান খোলা না রাখার সিদ্ধান্ত গতকাল (সোমবার) থেকে কার্যকর হয়েছে। প্রথম দিন রাজধানীর বড় বড় শপিং মল ও বিপণিবিতানগুলো যথাসময়ে বন্ধ হলেও ফুটপাতে যথারীতি বেচাবিক্রি চলে। 

রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, এলিফেন্ট রোড, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, মগবাজার, মৌচাক মালিবাগ, রামপুরা এবং বাড্ডা এলাকায় শপিং মল ও বড় বড় মার্কেট বন্ধ দেখা গেছে। কিন্তু এসব মার্কেটের সামনের সব ফুটপাতে আগের মতোই পণ্য বিক্রি করতে দেখা যায়।

ঈদুল আজহা পর্যন্ত সরকারের সিদ্ধান্ত স্থগিত চান ব্যবসায়ীরা

সিদ্ধান্ত স্থগিত চান ব্যবসায়ীরা  
লোকাল গার্মেন্টস (অভ্যন্তরীণ পোশাক) বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে রাত ৮টার পর দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপনি বিতান, কাঁচাবাজার খোলা না রাখার নির্দেশনা আগামী ঈদুল আজহা পর্যন্ত স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 

ব্যবসায়ীরা বলেন, কোভিডকালীন গত দুই বছরে ঈদ ও নববর্ষসহ অন্যান্য উৎসবে পুরোমাত্রায় বেচাকেনা না হওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে।

ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ঈদুল আজহা পর্যন্ত রাত ৮টার পর দোকান, শপিংমল, মার্কেট, বিপনিবিতান, কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখার আহ্বান জানান এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।

তিনি বলেন, উৎসবকেন্দ্রীক কেনা-বেচায় মূলত সন্ধ্যার পরই অফিস ফেরত ক্রেতাদের সমাগম শুরু হয়। এমন প্রেক্ষাপটে রাত ৮টা পর্যন্ত কেনা-বেচা সীমিত করা হলে দেশের লাখ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী বিপাকে পড়বেন, একইসঙ্গে ক্রেতা সাধারণকেও ভোগান্তি পোহাতে হবে।

জেইউ/এনএফ