দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে শনিবার (২৫ জুন)। এ উপলক্ষে দুপুর ১২টায় মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়িতে জনসভায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে ১০ লাখ মানুষের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে।

জনসভার আয়োজন দেখতে আগের দিন শুক্রবার নদীপাড়ে ভিড় করেন ওই অঞ্চলের আশপাশের মানুষ। পরিবারসহ আসেন অনেকে। সব বয়সী মানুষের উপস্থিতি ছিল ওই এলাকায়। তাদের মধ্যে একজন দাদন ব্যাপারী। বয়স সত্তরের বেশি।

প্রধানমন্ত্রী তার এলাকায় আসছেন, এতে তিনি বেশ খুশি। প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক নেতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিকরাও এসেছেন। এসব দেখতে সভাস্থলে আসেন দাদন ব্যাপারী। কিন্তু জনসভার প্যান্ডেলের কাছে ঘেঁষতে চাইলেও নিরাপত্তার কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বারবার সরিয়ে দিচ্ছে বলে আফসোস তার।

দাদন ব্যাপারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের অনেক উন্নয়ন করেছেন। আর পদ্মা সেতু এ এলাকার সবচেয়ে বড় উন্নয়ন। আগে সবজি-মাছ ঘাটে থাকতে থাকতেই পচে যেত। এখন আর পচবে না। আগে ঢাকা যেতে অনেক কষ্ট হতো, ফেরিতে বসে থাকতে হতো। এখন হবে না।

তিনি বলেন, আগে ঢাকা যেতে অনেক সময় লাগত। নাতনীকে ঢাকায় বিয়ে দিয়েছি। সময় বেশি লাগায় তাকে দেখতে যেতে পারি না। ওরাও কম আসে। এখন তো পদ্মা সেতু হলো। শুনছি এক ঘণ্টায়ই ঢাকায় যেতে পারব। এখন নাতনীরে দেখতে বেশি বেশি ঢাকা যাব, ওরাও আসবে।

দাদন ব্যাপারী বলেন, আগে ঢাকা গেলে একদিন লাগত। আবার রাতে থেকে আরেক দিন আসতে হতো। এক কাজে গেলে দুদিন লাগতো। এমন এক সময় ছিল, কলাপাতায় করে ভাত নিয়ে ঢাকায় যেতাম। এখন ব্রিজ হলো। আগে রোগী নিয়ে গেলেও অনেক কষ্ট হতো। এখন হবে না।

কাঁঠালবাড়িতে জনসভাস্থলের চারপাশ বাঁশের বেড়া দিয়ে পৃথক করা হয়েছে। আবার নিরাপত্তার স্বার্থে রাস্তার পাশে বাঁশ দিয়ে স্থানীয়দের এই সীমানার বাইরে থাকতে বলা হয়েছে। 

সেখানেই বাঁশের বেড়ায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন দাদন ব্যাপারীসহ আরও তিন চারজন বৃদ্ধ। সবার বয়স ষাটের ওপরে। একজন আরেকজনের সঙ্গে পদ্মা সেতু ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে গল্প করেন। পদ্মা সেতু হওয়ায় বেশ খুশি তারা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বহুল প্রত্যাশিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করবেন, যা রাজধানী ঢাকা এবং অন্যান্য বড় শহরের সাথে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক অগ্রগতি বয়ে আনবে। 

সেতুটির জমকালো উদ্বোধন উপলক্ষে বিশেষ করে যোগাযোগের সরাসরি সুবিধা লাভ করবে এমন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোসহ সারাদেশে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

সকাল ১০টায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১১টায় তিনি স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করবেন। 

বেলা ১১টা ১২ মিনিটে মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেবেন।

বেলা ১১টা ২৩ মিনিটে মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন তিনি। পরে ১১টা ৪৫ মিনিটে জাজিরা পয়েন্টে পৌঁছে সেতু ও ম্যুরাল-২ এর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন।

এএজে/আরএইচ