পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আয়োজন দেখতে এসেছেন তারা

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়িতে জনসভায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জনসভায় ১০ লাখ মানুষ অংশগ্রহণ করবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার (২৪ জুন) দিনব্যাপী স্থানীয়দের আগমনে পরিপূর্ণ ছিল কাঁঠালবাড়ি এলাকা। বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছিলেন অনেকে। 

মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের ওসমান খার কান্দি গ্রামে তিন পুরুষ ধরে বসবাস করছেন থান্ডু মোড়ল। তার গ্রামের পাশেই বিশাল এ আয়োজন এক নজর দেখতে স্ত্রী মাকসুদা আক্তারসহ দুই মেয়ে ও ভাতিজাকে নিয়ে আগের দিন (শুক্রবার) জনসভাস্থলে আসেন তিনি।

সন্ধ্যায় মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়িয়া ঘাটে থান্ডু মোড়লের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা পোস্টের। তিনি বলেন, উত্তাল পদ্মার ওপর দিয়ে নির্মিত সেতু উদ্বোধন করতে কাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এলাকায় আসবেন। অনেক প্রস্তুতি ও বিশাল আয়োজন। এ ঘটনার সাক্ষী হতেই পরিবারের সবাইকে নিয়ে এসেছি। আগামীকাল আসতে পারবো কি না জানি না, তাই আগেই এলাম।

পেশায় কৃষক থান্ডু মোড়ল বলেন, বিশাল এ আয়োজন দেখে ভালো লাগছে। কাল প্রধানমন্ত্রী সেতু উদ্বোধন করে এখানে ভাষণ দেবেন। এলাকার মানুষ হিসেবে দিনটি আমাদের জন্য গর্বের। প্রধানমন্ত্রী আসবেন বলে স্টেজ সাজানো হয়েছে, মাঠ সাজানো হয়েছে। সেগুলোই পরিবারের সবাইকে দেখাতে নিয়ে এলাম।
 
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে কোনোদিন নিজ চোখে দেখিনি। সেজন্য কাল প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে সকাল সকাল জনসভায় চলে আসব। সবার সামনে বসতে পারলে হয়তো তাকে দেখতে পাব। 

জনসভাস্থল দেখতে আসা তার স্ত্রী মাকসুদা আক্তার বলেন, দেশের রাজা (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের এলাকায় আসছেন, এটা তো আমাদের জন্য আনন্দের। অন্য এলাকায় হলে যেতে পারতাম না। নিজের এলাকায় হচ্ছে বলে দেখতে আসতে পেরেছি।

অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া তাদের মেয়ে নিশি আক্তার বলে, ছোটবেলা থেকে শুনেছি পদ্মা সেতু হবে। সেটা হয়েছে অবশেষে। কাল সেটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই বাবার সঙ্গে এলাম বিশাল আয়োজন দেখতে। আমার খুব ভালো লাগছে, বিশেষ করে জনসভার জায়গায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এটা আমার খুব ভালো লেগেছে। 

কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নেই বাড়ি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ মোতালিবের। তিনিও পরিবারসহ জনসভা প্রাঙ্গণ দেখতে এসেছেন। ঢাকা পোস্টকে তারা বলেন, এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হয় না। পদ্মা সেতুর ফলে যাতায়াত ব্যবস্থায় অনেক উন্নয়ন হবে। আগে দূর-দূরান্ত থেকে ট্রাক এসে এখানে আটকে থাকত। এখন আর সেই দুর্ভোগ থাকবে না। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বহুল প্রত্যাশিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু উন্মুক্ত করবেন, যা রাজধানী ঢাকা এবং অন্যান্য বড় শহরের সাথে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক যোগাযোগে ব্যাপক অগ্রগতি বয়ে আনবে। 

সেতুটির জমকালো উদ্বোধন উপলক্ষে বিশেষ করে যোগাযোগের সরাসরি সুবিধা লাভ করবে এমন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোসহ সারাদেশে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

সকাল ১০টায় মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১১টায় তিনি স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম ও বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করবেন। 

বেলা ১১টা ১২ মিনিটে মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেখানে মোনাজাতেও যোগ দেবেন।

বেলা ১১টা ২৩ মিনিটে মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবেন তিনি। পরে ১১টা ৪৫ মিনিটে জাজিরা পয়েন্টে পৌঁছে সেতু ও ম্যুরাল-২ এর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন।

এএজে/আরএইচ