প্রভাত ফেরিতে নানা শ্রেণিপেশার মানুষের শ্রদ্ধা
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ভাষা শহীদদের স্মরণে রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) প্রভাত ফেরিতে সারিবদ্ধভাবে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ।
শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে আসা সবার হাতে দেখা গেছে ফুল ও ব্যানার। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষার জন্য শহীদদের বেদিতে এভাবেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ। তাদের কারো কারো ব্যানারে লেখা ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে’। পাশাপাশি শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে আসা সবাই সারিবদ্ধভাবে ব্যানার হাতে নিয়ে গাইছেন শহীদদের স্মরণে নানা গান।
বিজ্ঞাপন
প্রভাত ফেরিতে একে একে শ্রদ্ধা জানাতে আসে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি, ২১ আগস্ট কেন্দ্রীয় কমিটি, বাংলাদেশ কৃষক লীগের নেতৃবৃন্দ, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড, ঢাকার সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় ও উদয়ন উচ্চ বিদ্যালয়।
বিজ্ঞাপন
এদিন ভোর থেকে শহীদ মিনার এলাকায় লোকজন কম ছিল। তবে যতই বেলা বাড়ছে ততই শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে আসা লোকের সমাগম হচ্ছে।
এর আগে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাত ১২টা এক মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। এরপর ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ গানের সুর বাজতে থাকে। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর তিন বাহিনীর প্রধানরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
পরে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদসহ আনসার গ্রাম ও প্রতিরক্ষা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এরপর বিরোধী দলের উপনেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও বিদেশি সংস্থার প্রধানরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে ঢাবি শিক্ষকরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী এবং সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে গিয়ে পুষ্পস্তবক নিবেদন করছেন। সুশৃঙ্খলভাবে তারা শহীদ মিনার এলাকা ত্যাগ করছেন।
ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান নিরাপদ রাখতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা।
উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালের এই দিনে (২১ ফেব্রুয়ারি) বাংলা ভাষা আন্দোলনকে দমন করতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে বাংলা ভাষার দাবিতে রাজপথে মিছিল করেন। সেই মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ অনেকে। আহত হন আরও অনেক ভাষাপ্রেমী।
টিএইচ/এসএসএইচ