গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন ঢাবি উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান/ ছবি: ঢাকা পোস্ট

পাঁচমিশালী ভাষা মাতৃভাষায় অনেক সময় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।

রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) শহীদ মিনারে প্রভাত ফেরিতে শ্রদ্ধা জানাতে এসে এ মন্তব্য করেন তিনি। এদিন সকাল সাড়ে ৭টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন উপাচার্য।

এরপর বাংলা ভাষার সঠিক ও পরিশীলিত চর্চা নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন উপাচার্য মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘পরিমিত ও পরিশীলিত অপরিশোধ্য ভাবে ভাষার বিকাশ ঘটানো যায়, সেদিকে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিপর্যায়ে নানাবিধ প্রয়াস লাগবে। কেননা তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নয়নের ফলে পাঁচমিশালী ভাষা আমরা লক্ষ্য করি। সেটি অনেক সময় আমাদের মাতৃভাষায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কিন্তু আমাদের বিশ্ব সংস্কৃতির ভাণ্ডারের ভেতরেও প্রবেশ করা জরুরি। পরিমিত ও পরিশীলিত ভাষা ব্যবহারে আমাদের স্বতন্ত্র প্রয়াস লাগবে। যাতে করে শিক্ষা অনুরাগী স্কুলছাত্ররা অনুপ্রাণিত হয়।’

৬৮ বছরেও বাংলা ভাষার পরিমিত ও পরিশীলিত ভাষা এখনও হয়নি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, ‘আসলে হয়নি এটা ঠিক নয়। তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নয়নের সফলতার ফলে ও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সারাবিশ্বের সংমিশ্রণে একটি শিশু বা শিক্ষার্থীরা নানাভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। এগুলো নিয়ে যেন প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, সেদিকেও আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে।’

এর আগে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে রাত ১২টা এক মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান। এরপর ভাষা শহীদদের স্মরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এ সময় ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ গানের সুর বাজতে থাকে। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর তিন বাহিনীর প্রধানরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পরে মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

পরে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদসহ আনসার গ্রাম ও প্রতিরক্ষা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

এরপর বিরোধী দলের উপনেতা ও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও বিদেশি সংস্থার প্রধানরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে ঢাবি শিক্ষকরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

পরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

এসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও পেশাজীবী এবং সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে গিয়ে পুষ্পস্তবক নিবেদন করছেন। সুশৃঙ্খলভাবে তারা শহীদ মিনার এলাকা ত্যাগ করছেন।

ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান নিরাপদ রাখতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা।

উল্লেখ্য, ১৯৫২ সালের এই দিনে (২১ ফেব্রুয়ারি) বাংলা ভাষা আন্দোলনকে দমন করতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। ছাত্ররা ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে বাংলা ভাষার দাবিতে রাজপথে মিছিল করেন। সেই মিছিলকে ছত্রভঙ্গ করতে পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ অনেকে। আহত হন আরও অনেক ভাষাপ্রেমী।

টিএইচ/এসএসএইচ