‘জাজিরায় রেখেই সন্তানকে ঢাকার কলেজে পড়াব’
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর খুলেছে বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার। এই সেতু দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের ভাগ্য বদলে নতুন দিগন্ত উন্মোচনে ভূমিকা রাখবে। গড়ে উঠবে শিল্প কলকারখানাসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। বাড়বে মানুষের কর্মসংস্থান, কমবে বেকার সমস্যা।
স্থানীয়রা বলছেন, পদ্মা সেতুর কল্যাণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে যাতায়াতের সময় কমে যাচ্ছে ৩-৪ ঘণ্টা। মানুষের চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মা সেতু। সবক্ষেত্রে ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে।
বিজ্ঞাপন
তারা বলছেন, পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে আমাদের জীবনমানে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। আমরা কম খরচে ব্যবসা করতে পারব, যথাসময়ে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারব, সন্তানদের ঢাকায় পড়াশোনা করাতে পারব। এ পরিবর্তন ও উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
জাজিরা উপজেলার মুদি দোকানদার ফজলুল হক বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় আমরা এখন আরেকটু কম দামে জিনিসপত্র কিনতে পারব। আমরা আমাদের সন্তানদের এখানে রেখে ঢাকার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে পারব। পদ্মা সেতু আমাদের সবার জন্য আশীর্বাদ।
বিজ্ঞাপন
দিনমজুর আব্দুল হামিদ পদ্মা সেতুর কথা বলতেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমাদের আর কষ্ট থাকব না। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাদের জন্য পদ্মা সেতু করে দিয়েছেন। আমাদের এলাকা উন্নত হয়ে যাবে, আমাদের সন্তানরা বেকার থাকবে না। আমরা অনেক খুশি।
ভ্যানচালক জমির উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় আমাদের এলাকায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে, রাস্তাঘাট ভালো হয়েছে। এখানে অনেক শিল্প কারখানা হবে, সেখানে আমরা কাজ করতে পারব। আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।
আরেক দিনমজুর ইবাদত রহমান বলেন, আমার ভাই বোন ঢাকায় পড়াশোনা করে তাদের জন্য এখন যাতায়াত করা সহজ হবে, সময় কম লাগবে। আমাদেরও কোনো প্রয়োজনে দ্রুত ঢাকায় যেতে পারব। এছাড়া এখানে কল-কারখানা হলে আমরা কাজ করতে পারব।
জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাজিরা একটি অবহেলিত এলাকা। পদ্মার ভাঙন, বন্যা, প্লাবনে বছর বছর মানুষের ভিটেমাটি বিলীন হতো। বর্ষায় ফসল পানিতে তলিয়ে যেতো। যার ফলে এই এলাকার মানুষ যুগ যুগ ধরে দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। পদ্মা সেতু হওয়ায় ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ হবে, এই এলাকা আর অবহেলিত থাকবে না।
তিনি আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, এখানে বাণিজ্যিক ইনস্টিটিউট হবে, পর্যটন কেন্দ্র, ইপিজেডসহ বিভিন্ন ধরনের ইন্ডাস্ট্রি হবে। পার্ক, রেস্টুরেন্ট, হোটেল, মোটেল হবে। এলাকার মানুষের জন্য প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিরোধিতাকারীদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে সাহস দেখিয়েছেন তারই ফল পদ্মা সেতু। দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলের মানুষ সেতুর স্বপ্ন দেখছে, প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার পেয়ে তাই সবাই উচ্ছ্বসিত। শরীয়তপুরের মানুষের উচ্ছ্বাস একটু বেশি এই কারণে যে পদ্মা সেতু মিশেছে শরীয়তপুরের জাজিরায়। এখানে বেশ কিছু কৃষিভিত্তিক ইন্ডাস্ট্রি আসছে। আমাদের মৃৎশিল্প আছে, কাঁচা শিল্প আছে, জাজিরার কালোজিরা আছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এগুলোকে আমরা ব্র্যান্ডিং করার চেষ্টা করছি। সর্বোপরি পদ্মা সেতু এ অঞ্চলের মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করবে।
এইচআর/এআর/জেডএস