বাংলাদেশের সঙ্গে দৃঢ় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনে ইতালির ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

অর্থনৈতিক কূটনীতি সপ্তাহ পালনের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য প্রসারের জন্য ‘ম্যাপিং এক্সারসাইজ: বাংলাদেশ-ইতালি ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপারচুনিটিজ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এমন আগ্রহের কথা জানায় ইতালির ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীরা।

রোববার (৩ জুলাই) রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, ইতালি, মন্টেনিগ্রো ও সার্বিয়াতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শামীম আহসান স্বাগত বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত বাংলাদেশের দীর্ঘতম পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের সুসংবাদ উপস্থিত সবাইকে জানান রাষ্ট্রদূত।

ইতালি ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, দুদেশের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে এবং সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগিয়ে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে গতিশীলতা আনয়নে যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। আমি আশাবাদী যে ইতালির বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে অধিকতর বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) সাব্বির আহমেদ চৌধুরী অর্থনৈতিক মুক্তিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন টেকসই উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু। ফুড প্রসেসিং, কৃষি, প্রযুক্তি, ব্লু ইকোনমি প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্র বের করে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার আহ্বান জানান সচিব সাব্বির।

ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান জিয়ানপাওলো নেরি বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ়তর করতে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিভিন্ন ক্ষেত্র, সম্ভাবনা ও সুযোগ-সুবিধাগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে দুদেশের মধ্যে একটি বিজনেস কাউন্সিল গঠনের ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন।

দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে ইতালির বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের নেতারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে একযোগে কাজ করবেন বলে জানান।

আলোচনা সভায় টেক্সটাইল, চামড়া শিল্প, নবায়নযোগ্য শক্তি, কৃষি এবং ফুড প্রসেসিং, ফুড রিটেলিং এবং বেকারি, আইসিটি, সিরামিকস, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাট এবং পাটজাত পণ্য, সোলার মডিউল, সুনীল অর্থনীতি, রোবোটিকস, স্বাস্থ্য সেবা খাতের যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতগুলোকে দুদেশের সহযোগিতার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিভাগের মহাপরিচালক, ইপিবির মহাপরিচালক, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বেসিস, এলএফএমইএবি, এপেক্স ফুটওয়্যারের প্রেসিডেন্ট এবং ওয়াল্টন, ই-ক্যাবের প্রতিনিধিরা এবং ইতালির পক্ষে নিউ দিল্লিতে অবস্থিত ইতালির দূতাবাসের ট্রেড কমিশনার, ইটা, কনফিন্ডাস্ট্রিয়া, এআইসিই, রিফলাইন, এনি, মাগালদি পাওয়ার, ডিএম ইটালিয়ার প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন। নেপোলি ও ফ্লোরেন্স-এ বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেলরাও আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

রোমের বাংলাদেশ দূতাবাস বলছে, ইতালি-বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ২.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ইতালি বাংলাদেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।

এনআই/এসএসএইচ