গত ১০ মে রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেসের একটি টিকিটে যাত্রীর নামের স্থানে ‘ভ্লাদিমির পুতিন’ নামটি দেখা যায়। এসি বি ক্লাসের ‘খ’ বগিতে তার আসন নং- ১৫ ও ১৬। টিকিট মূল্য দুই হাজার ৪৪৬ টাকা। এটি কাটা হয়েছে মে মাসের ৭ তারিখে। সেখানে রয়েছে একটি টেলিটক নম্বরও।

২০ মে কাটা অপর একটি টিকিটে যাত্রীর নামের স্থানে লেখা কিম জং উন। টিকিটের অর্ধেক কাটা থাকায় গন্তব্য বোঝা যায়নি। শোভন শ্রেণির ওই টিকিটের আসন নম্বর ছিল ৩০। মূল্য ৪৫ টাকা।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন আসলেই কি বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট কেটেছিলেন? যদিও তাদের নামে কাটা টিকিটে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে দেখা যায়নি তাদের। বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিটে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের নাম দেখে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়েছে সাধারণের মনে। কীভাবে এটা সম্ভব?

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এবং যাত্রীর নামের জায়গায় কয়েকটি সংখ্যা বসানো ট্রেনের টিকিট / ছবি- সংগৃহীত

জানা যায়, টিকিটের কালোবাজারি রোধে ‘টিকিট যার, ভ্রমণ তার’ নীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ প্রক্রিয়ায় যাত্রীর মোবাইল নম্বর ও জাতীয় পরিচয়পত্র টিকিটে উল্লেখ করার ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এরপরও কীভাবে বেনামে টিকিট ইস্যু হয়?

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন আসলেই কি বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট কেটেছিলেন? যদিও তাদের নামে কাটা টিকিটে নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে দেখা যায়নি তাদের। বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিটে দুই রাষ্ট্রপ্রধানের নাম দেখে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়েছে সাধারণের মনে। কীভাবে এটা সম্ভব

বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট অনলাইনে বিক্রির বর্তমান সহায়ক প্রতিষ্ঠান ‘সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি’। তারা একটি ওয়েবসাইট এবং অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইন প্লাটফর্মে টিকিট বিক্রি করে। ওই প্লাটফর্মে রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে নাম, মোবাইল নম্বর, আইডেন্টিফিকেশনের ধরন ও নম্বর, পোস্ট কোড এবং ঠিকানার প্রয়োজন হয়। কিন্তু সেখানে ভুয়া নাম, নম্বর ও ঠিকানা দিয়েও রেজিস্ট্রেশন করা যায়। ফলে একজন গ্রাহক সঠিক না ভুল তথ্য দিল, সেটি যাচাই করার কোনো সুযোগ থাকে না। এ সুযোগই নিচ্ছেন টিকিটপ্রত্যাশীরা। তারা ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জং উনের নাম ব্যবহার করে প্রোফাইল খুলে টিকিট সংগ্রহ করছেন। যদিও একবার জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর দিলে সেটি আর পরিবর্তনের সুযোগ থাকে না।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (ডানে) এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের (বাঁয়ে) বিশেষ এক মুহূর্ত / ছবি- সংগৃহীত

ভ্লাদিমির পুতিন ও কিম জং উনের বাংলাদেশ রেলওয়ের টিকিট কাটার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়। সশরীরে ভ্রমণ না করলেও তাদের নামে টিকিটপ্রাপ্তি অনলাইন মিডিয়ায় ব্যাপক রসিকতার জন্ম দেয়।

এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ডেটাবেজের এক্সেস পায়নি বাংলাদেশ রেলওয়ে। ফলে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার কোনো সুযোগ নেই টিকিট বিক্রির সহায়ক প্রতিষ্ঠানটির হাতে। তবে, রেলওয়ের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের চুক্তি হয়ে গেলে যেকোনো সময় এটি সমন্বয় করা সম্ভব হবে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে এখনও আলোচনা চলছে

শুধু ভ্লাদিমির পুতিন কিংবা কিম জং উনের টিকিট কাটা নয়, গত ১৪ মে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী তিস্তা এক্সপ্রেসের অপর একটি টিকিটে যাত্রীর নামের জায়গায় কয়েকটি সংখ্যা বসানো দেখা যায়। এসি ক্লাসের ‘ঘ’ বগিতে গ্রাহকের আসন নং- ২৩। টিকিটের মূল্য ৩৩২ টাকা। তবে, সেখানে কোনো মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়নি।

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট পেতে কমলাপুর রেল স্টেশন মানুষের ভিড়। রোববার ছবিটি তোলা / ঢাকা পোস্ট

কীভাবে সম্ভব

জানা গেছে, এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের ডেটাবেজের এক্সেস পায়নি বাংলাদেশ রেলওয়ে। ফলে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ার কোনো সুযোগ নেই টিকিট বিক্রির সহায়ক প্রতিষ্ঠানটির হাতে। তবে, রেলওয়ের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের চুক্তি হয়ে গেলে যেকোনো সময় এটি সমন্বয় করা সম্ভব হবে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও নির্বাচন কমিশনের মধ্যে এখনও আলোচনা চলছে।

যদি কেউ জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ভুল দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে, সেটি ধরার কোনো সুযোগ আছে কি না— জানতে চাইলে সহজ’র জনসংযোগ কর্মকর্তা ফারহাত আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কার এনআইডিতে কী নম্বর আছে, সেটি তো আমাদের দেখার সুযোগ নেই। যখন আমরা নির্বাচন কমিশনের ডেটাবেজের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারব, তখন আমরা ভুলটা ধরতে পারব। কারও আসল নামও আমাদের জানার সুযোগ নেই। এ কারণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের নামে টিকিট ইস্যু হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের ডেটাবেজের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারলে এমন ভুল আর হবে না— বলছে সহজ / ছবি- সংগৃহীত

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের অধীন জাতীয় পরিচয়পত্রের যে ডেটাবেজ রয়েছে সেটি নিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের কথা চলছে। যখন রেলওয়ের সঙ্গে ওই ডেটাবেজ ব্যবহারের চুক্তি হবে তখনই আমরা ভুল নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাই করতে পারব।

এমএইচএন/এমএআর