২০১৭ সালে রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বন্ধুদের মাধ্যমে প্রথমবার ভয়ংকর মাদক এলএসডির সংস্পর্শে আসেন নাজমুল ইসলাম বিশ্বাস (২৬)। পরে ধীরে ধীরে এ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। 

এক পর্যায়ে বিদেশ থেকে নিজেই এলএসডি দেশে নিয়ে আসতে শুরু করেন নাজমুল। তখন থেকে তিনি এ মাদকের শুধু সেবনকারীই নয়, হয়ে যান বিক্রেতা। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে নাজমুল এলএসডি বিক্রি করে আসছিলেন।

এলএসডি সেবন ও বিক্রির অভিযোগে ২০২১ সালে প্রথমবার নাজমুলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তার কাছ থেকে ১০ পিস এলএসডি জব্দ করে পুলিশ। কিন্তু গ্রেপ্তারের ৪ মাস পর জামিনে বের হয়ে আবারও এলএসডি সেবন ও ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। 

সর্বশেষ মঙ্গলবার (৫ জুলাই) রাতে ভাটারা এলাকার জামিয়া মাদানি মসজিদ রোড থেকে নাজমুলকে ১৩৮ পিস এলএসডিসহ গ্রেপ্তার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ঢাকা মেট্রোর কার্যালয় (দক্ষিণ)।

ডিএনসি জানায়, নাজমুল ইন্টারনেট কারেন্সি বিট কয়েন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কুরিয়ারের মাধ্যমে দেশে এলএসডি নিয়ে আসেন। তার উদ্দেশ্য ছিল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাঝে জব্দ হওয়া এলএসডি বিক্রি করা।

বুধবার (৬ জুলাই) দুপুরে ডিএনসির ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ কার্যালয়ের আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএনসির ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জাফরুল্ল্যাহ কাজল।

আরও পড়ুন : আমিন-ফাতেমা দম্পতির কাছে লভ্যাংশসহ পাওনা ছিল ৩ কোটি টাকা

মো.জাফরুল্ল্যাহ কাজল বলেন, গতকাল রাতে ভাটারা এলাকার জামিয়া মাদানি মসজিদ রোড থেকে ডিএনসির এক অফিসার ২৫ পিস রঙিন প্রিন্টেড ব্লট পেপার স্ট্রিপ এলএসডিসহ নাজমুল ইসলাম বিশ্বাসকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করেন। পরে তার দেওয়া তথ্য মতে, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি ব্লকের ৭ নম্বর রোডের তার ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালানো হয়। সেই ফ্ল্যাটে কাঠের টেবিলের ড্রয়ার থেকে আরও ৭১ পিস রঙিন প্রিন্টেড ব্লট পেপার এলএসডি এবং ৪২ পিস হোয়াইট ব্লট পেপার স্ট্রিপ এলএসডি জব্দ করা হয়। এ সময় অনুসন্ধানের স্বার্থে তার ব্যবহৃত ১টি ল্যাপটপ এবং ১টি মোবাইল সেট জব্দ করা হয়।

তিনি বলেন, নাজমুল ইসলাম বিশ্বাসের গ্রামের বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়া থানার নগরবাড়িতে। তিনি ঢাকায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার জি ব্লকের ৭ নম্বর রোডে একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন।

নাজমুলকে জিজ্ঞাসাবাদের পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনি বলেন, নাজমুল ২০১৭ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে  অধ্যয়নের সময়ে এ মাদকের সংস্পর্শে আসেন। তখন বিদেশে অধ্যয়নরত তার বন্ধুদের থেকে সে এই মাদক সংগ্রহ করতেন। পরবর্তীতে তিনি ডার্ক ওয়েব ও বিট কয়েন ব্যবহার করে এই মাদক বিদেশ থেকে বাংলাদেশে এনে ব্যবসা শুরু করেন।

তিনি আরও বলেন, এর আগে নাজমুল ২০১৭ সালে পুলিশের হাতে ১০ পিস এলএসডিসহ গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তারের ৪ মাস পর জামিনে বের হয়ে আবারও এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। সর্বশেষ তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১৪০ পিস এলএসডি দেশে নিয়ে আসেন। এর মধ্যে তাকে গ্রেপ্তারের সময় ১৩৮ পিস উদ্ধার করা হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে মো. জাফরুল্ল্যাহ কাজল বলেন, অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রে এলএসডি অর্ডার করেন নাজমুল। পরে তিনি ইন্টার কারেন্সি বিটকয়েনের মাধ্যমে অর্ডারে মূল্য পরিশোধ করেন। এ মাদক আন্তর্জাতিক কুরিয়ারা মাধ্যমে তার কাছে পৌঁছায়। তবে এসব তথ্য আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি সঠিক কি না।

আরও পড়ুন : এমপিওভুক্ত হচ্ছে ২৭১৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

এলএসডি দেশে ছড়িয়ে দিতে আন্তর্জাতিক কোনো চক্র কাজ করছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা সব সময় চেষ্টা করে সারা বিশ্বে মাদক ছড়িয়ে দিতে। আমাদের দেশের যুবসমাজ মাদক ব্যবসায়ীদের টার্গেটে রয়েছে। তবে আমরা সচেষ্ট রয়েছি এবং গোয়েন্দা নজরদারি করছি মাদক ব্যবসায়ীদের প্রতিহত করার জন্য।

ডিএনসির এই কর্মকর্তা বলেন, কোনো ব্যক্তি বিশেষের কাছ থেকে নাজমুল এলএসডি দেশে নিয়ে আসতেন না। তিনি বিভিন্ন বিদেশি অনলাইন সাইট ব্যবহার করে এলএসডির অর্ডার দিতেন। পরে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এসব মাদক তিনি দেশে আনতেন।

এমএসি/এসকেডি