রাজধানীর কমলাপুর পশুর হাট ঘুরে রহমতগঞ্জ মাঠ পশুর হাটে এসেছেন পুরান ঢাকার মো. ইমরান। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ঘুরেও সাধ্যের মধ্যে গরু পাননি। অপেক্ষা করেছিলেন দাম কিছু কমে যাওয়ার। তবে বেপারিরা দাম ছাড়ছেন না। বাধ্য হয়ে রিকশা নিয়ে হাজারীবাগের পশুর হাটে যাচ্ছেন তিনি।

শুক্রবার (৮ জুলাই) সকালে ইমরান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকাল থেকে শতাধিক গরু দরদাম করেছি। সবাই গতবারের চেয়ে দ্বিগুণ দাম হাকাচ্ছেন। তাদের চাওয়া অনুযায়ী মাংসের দাম হিসাব করলে ১০০০ টাকার বেশি পড়ে।

পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের বাসিন্দা আক্তার হোসেন দুপুরে ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেপারিরা দাম দেখছেন। নানা অজুহাতে গরুর দাম বাড়াচ্ছেন। গরু ছাড়ছেন না। তাই আপাতত বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। রাতে আবার আসব।

গরু কিনতে আসা মোহাম্মদ সালেক নামের পুরান ঢাকার আরেক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি মাঝারি সাইজের একটি গরু ৯২ হাজার টাকায় কিনেছি। গত বছর একই গরু ৭৫ থেকে ৮০ হাজারে বিক্রি হয়েছে।

শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত পশুর হাটে ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতার সংখ্যা বাড়লেও হাটে পশু বেচাকেনা খুবই কম। ক্রেতারা দাম বেশি বলে অভিযোগ করলেও বিক্রেতারা বলছেন অন্য কথা। তারা জানান, পশুখাদ্যসহ সব জিনিসের দাম বাড়ায় গরুর দাম বেড়েছে। তবে একই কারণে এবার পশু কোরবানি কম হবে। অনেকেই কোরবানি করবেন না বা ভাগে কোরবানি দেবেন। তাই এবার পশু বিক্রি কম হবে।

রাজধানীর রহমতগঞ্জ পশুর হাটে নিজ খামারের ১৭টি গরু নিয়ে এসেছেন সিরাজগঞ্জের মো. সেলিম। তিনি ১৩টি মাঝারি সাইজের (৩-৪ মণ মাংস) এবং ৪টি বড় সাইজের (৬-৮ মণ মাংস) গরু নিয়ে এসেছেন। গত দুই দিনে তার মাত্র একটি গরু বিক্রি হয়েছে। পাঁচটি গরুর দামই জিজ্ঞেস করছে না কেউ।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যার পানি থাকা সত্ত্বেও গরুগুলোকে খুব যত্ন করে নিরাপদে রেখে ঢাকায় এনেছি। কিন্তু আজ (শুক্রবার সকাল) পর্যন্ত বাজারের অবস্থা ভালো না। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার বিক্রি বাড়বে ভেবেছিলাম, তবে ক্রেতা তেমন নেই। অল্প কিছু ক্রেতা হাটে এলেও তারা কেবল দেখছেন আর দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন। বিক্রি খুব কম। আমি একটি মাঝারি সাইজের গরু বিক্রি করেছি ৯৫ হাজার টাকায়। অথচ এটা আরও ১০ হাজার টাকা বেশিতে বিক্রির মতো। বাজার দেখে গরু বিক্রি করতে বাধ্য হলাম।

কুষ্টিয়া থেকে বাড়িতে পালন করা ৩৩টি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন বেপারি সাইজু ইসলাম। তিনি বলেন, আমি রমজান মাসে গরুগুলো কিনেছিলাম। চার দিন হলো হাটে এসেছি, বৃহস্পতিবার রাত ও শুক্রবার সকালে মোট পাঁচটি গরু বিক্রি করেছি। আমার সবচেয়ে বড় গরুটি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ৩ মাস আগে কিনেছিলাম। ৩ মাস খাওয়ানোর পর এটাকে ১ লাখ ৮০ হাজারে বিক্রির কথা ভেবেছিলাম। আজ সকালে সেটা ১ লাখ ৫৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। অন্যবারের তুলনায় এবার ক্রেতা অনেক কম।

পাবনা থেকে ঢাকায় তিনটি বড় গরু নিয়ে এসেছেন জয়নাল আহমেদ। তিনি বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী গরুগুলো লালন-পালন করেছি। আমার ৩টাই বড় গরু, এক সাইজের। মাংস হবে ১০ থেকে ১১ মণের মতো। গরুগুলো আমি ৪ থেকে সাড়ে ৪ লাখের মধ্যে বিক্রি করব ভেবেছিলাম। এখনও একটাও বিক্রি হয়নি। একটার সর্বোচ্চ দাম উঠেছে ২ লাখ ৫০ হাজার। গরুর মাংসের কেজি ৭২০ টাকা। ক্রেতারা এই দামও বলছে না।

এআর/এসএসএইচ