ঈদ কিংবা সরকারি ছুটিতে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত শিশু পার্কে শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি থাকত চোখে পড়ার মতো। কিন্তু ২০১৯ সালের পর থেকেই সেই চিত্র পাল্টে গেছে। সংস্কারকাজের জন্য বন্ধ রয়েছে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এ শিশু পার্কটি। দীর্ঘ তিন বছর যাবত শিশু পার্কটি বন্ধ থাকলেও রাজধানীর অনেক বাসিন্দা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন! তারই প্রমাণ পাওয়া গেল আজ। 

ঈদুল আজহার ছুটিতে পরিবারের শিশুদের নিয়ে পার্কে আসেন অনেকেই। কিন্তু পার্কটি বন্ধ দেখে হতাশ তারা। উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে বাড়িতে চলে যান অনেকেই, আবার কেউ কেউ রমনা পার্কে গিয়ে সময় কাটান। সোমবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ ও রমনা এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। 

আরও পড়ুন : ভ্যাপসা গরম থাকবে আরও দুদিন

সরেজমিনে দেখা গেছে, শিশু পার্কের চার পাশ ঘিরে রাখা হয়েছে টিন দিয়ে। সংস্কার সামগ্রী পরিবহন চলাচলের জন্য পুরাতন ফটক বরাবর রাখা হয়েছে টিনের দরজা। সেই দরজার সামনেই ভিড় করছেন বিনোদনপ্রেমী নগরবাসী। 

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা হাবিব। বেসরকারি চাকরীজীবী। সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন শিশু পার্কে। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, শিশু পার্ক কি বন্ধ? 

দাঁড়িয়ে থাকাবস্থায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পরিবারসহ ঘুরতে আসেন শনির আখড়া এলাকার বাসিন্দা মনসুর। অটোরিকশা থামিয়ে এসে শিশু পার্কে মূল ফটক খুঁজছিলেন। খুঁজে না পেয়ে তারও একই প্রশ্ন।

 

শিশু পার্কে ঘুরতে এসে বন্ধ পেয়ে অনেকটাই ক্ষোভ নিয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে তাদের। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন একটা শিশু পার্ক 'ঠিক' করতে কত সময় লাগে?

আরও পড়ুন : ফেসবুকে প্রেম, বিয়ে করতে গাজীপুরে ছুটে এলেন মার্কিন তরুণী

রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভারের বাসিন্দা রাসেল। ছেলে মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে এসেছিলেন শিশু পার্কে। গাড়ি থামিয়ে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেন ফটকে। অনেকের কাছেই কল দিয়ে জানতে চান আসলেই শিশু পার্ক বন্ধ কি না। পরে এই প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, শিশু পার্ক কি বন্ধ? 

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, একটা শিশু পার্ক এতদিন বন্ধ রাখে? কত সময় লাগে একটা শিশু পার্ক ঠিক করতে? 

রাসেল বলেন, আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন প্রায় প্রতি বছরই শিশু পার্কে আসতাম। এখনকার ছেলে-মেয়েদের ঘোরাতে কোথায় নিয়ে যাবেন?

অপর দিকে শাহবাগের শিশু পার্কে ঘুরতে আসা অনেকেই জাতীয় যাদুঘর পরিদর্শন করতে যান। পবিত্র ঈদুল আজহার জন্য বন্ধ রয়েছে জাতীয় যাদুঘরও। বন্ধ দেখে অনেকেই মূল ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে চলে যান। 

শিশু পার্কে ঘুরতে না পেরে সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে যাদুঘরে আসেন সাভারের রাসেল। গাড়ি থেকে নেমে যাদুঘর বন্ধ দেখে আক্ষেপ করেন। পরে সন্তানদের নিয়ে যাদুঘরের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে চলে যান। 

তিনি বলেন, আজ কপালটাই খারাপ। শিশু পার্ক বন্ধ, যাদুঘরও বন্ধ। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বের হওয়ার সময় পাই না। আজ আসলাম, আজকেই সব বন্ধ। 

সেখানে ফুচকার দোকানি শিমুলকে বলতে দেখা যায়, আসেন আসেন। আজকে যাদুঘর বন্ধ। কালকে খোলা পাবেন। বসেন, ফুচকা খান। 

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাড়ি, মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন যানবাহনে করে অনেকেই আসছেন যাদুঘরে। বন্ধ পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন মন খারাপ করে। কেউ কেউ মূল ফটকে ছবি তুলে ফিরে যাচ্ছেন। 

রাজধানীর পুরান ঢাকা থেকে ৮ বছরের সন্তানকে নিয়ে এসেছিলেন উপমা। যাদুঘর বন্ধ পেয়ে ছেলেকে নিয়ে ছবি তোলেন তিনি। তিনি বলেন, ছেলের স্কুলের কারণে ছুটি পাওয়া যায় না। ঈদের ছুটিতে যাদুঘরে নিয়ে এসেছিলাম বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য দেখানো ও শেখানোর জন্য। এসে দেখি বন্ধ। এটা কবে খোলা থাকে আর কবে বন্ধ থাকে বোঝা মুশকিল।

 এইউএ/এসকেডি