কোরবানির ব্যস্ততা সেরে ঈদের দ্বিতীয় দিনে শিশুদের নিয়ে রাজধানীর মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় এসেছেন অভিভাবকরা। সোমবার (১১ জুলাই) দিনভর চিড়িয়াখানায় ভিড় ছিল উপচেপড়া দর্শনার্থীদের। তারা কেউ মা-বাবার সঙ্গে আবার কেউ কেউ দল বেঁধে পরিবার কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ঈদ আনন্দে মেতে উঠেন।

সোমবার (১১ জুলাই) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চিড়িয়াখানা ঘুরে দেখা যায়, শিশু-কিশোরদের হৈ হুল্লোড়, চিৎকার-চেঁচামেচি আর আনন্দের খুনশুটি।

চিড়িয়াখানার প্রধান ফটকের সামনে অন্তত আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লেগে থাকা জট ঠেলে চিড়িয়াখানার দর্শনার্থীদের আসা-যাওয়া করতে দেখা যায়। ৫০ টাকায় টিকিট কেটে চিড়িয়াখানায় এসে অভিভাবকরাও উচ্ছ্বসিত শিশু-কিশোরদের আনন্দে।

চিড়িয়াখানায় ঘুরতে আসা মো. ফারহান নামে এক শিশু তার অনুভূতি প্রকাশ জানায়, বড় ভাই মো. ফাহিমের সঙ্গে এসেছি। ডাক বিভাগে কর্মরত বাবা আব্দুল্লাহ আল কাফি ব্যস্ত, মাও ব্যস্ত রান্নায়। তাই ভাইয়ের সঙ্গেই চিড়িয়াখানায় এসেছি। এখানে বাঘ, ভাল্লুক, সিংহ আর গরিলা দেখে খুব ভালো লাগছে।

বাবা-মায়ের সঙ্গে চট্টগ্রামে থাকে শিশু মো. মুনাদুল ইসলাম আবির। আবির বলে, নানু বাড়ি মিরপুর মুক্তিযুদ্ধ কমপ্লেক্সের পাশে। ঈদ উপলক্ষে এখানে বেড়াতে এসেছি। খুব ভালো লাগছে। পাঁচ কাজিনসহ একসঙ্গে এসেছি। খুব কাছে থেকে বনের পশু দেখে ভালো লাগছে। বানরের সঙ্গে বাদাম দিয়ে খুনশুটি, সিংহের গর্জন, ভাল্লুকের অনবরত হাঁটাহাঁটি আর হরিণের চাহনি মুগ্ধ করার মতো। বাঘ সিংহ দেখে ভয় লাগেনি। কারণ ওরা খাঁচায় বন্দি।

স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বড় ভাইয়ের বাসায় বেড়াতে এসেছেন প্রবাসী ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ঢাকায় আসছি অথচ মেয়ে আয়াতকে চিড়িয়াখানা দেখাব না তা কি হয়, তাই এখানে আসা। মেয়ে খুবই আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত। ওর আনন্দে খুব ভালো লাগছে। আয়াত জানায়, ভয় লেগেছে। বাবার কোলে বসেই দেখেছি বাঘ, গরিলা, শকুন আর সাপ।

নার্সারির শিক্ষার্থী শাহ কামাল অন্তর বলছিল, পাখি, হরিণ দেখে কিছু মনে হয়নি। বাঘ দেখেও ভয় পাইনি। খাঁচায় বন্দি বাঘ দেখে মজা পেয়েছি। 

উত্তরা থেকে মায়ের সঙ্গে চিড়িয়াখানার পার্কে ঘুরতে আসা শিশু মাফিয়া তুরিন বলে, অনেক ভালো লাগছে। আমি মায়ের সঙ্গে এখানে এসেছি। বানর দেখেছি, জিরাফ দেখেছি। ট্রাভেল কারে চড়েছি। আমি আবার আসব। এখানে পশু-পাখি দেখা যায়, আবার পার্কে ঘোরাও যায়।

তবে ঈদুল আজহা উপলক্ষে চিড়িয়াখানায় হাজার হাজার দর্শনার্থীর আগমন ঘটলেও ছিল না করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধির বালাই। করোনার ঊর্ধ্বগতির মধ্যে জাতীয় চিড়িয়াখানায় করোনা সতর্কীকরণ বার্তাও যেমন ছিল না, তেমনি টিকিট বিক্রেতা, চেকারসহ কর্মচারীদের মুখেও দেখা যায়নি মাস্ক। অধিকাংশ দর্শনার্থীর মুখেও ছিল না মাস্ক। এ নিয়ে হতাশাও প্রকাশ করেছেন জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর মুজিবুর রহমান।

তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজ প্রায় ৫০-৬০ হাজার দর্শনার্থী এসেছে। ঈদের দিন কোরবানির একটা ব্যস্ততা থাকে অভিভাবকদের। তাই আজ  গতকালের চেয়ে অনেক ভিড় এখানে। করোনার সংক্রমণ রোধে দর্শনার্থীদেরই এগিয়ে আসতে হবে, সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। আমরা আমাদের জায়গায় থেকে এনাউন্স করছি, মাস্ক পরতে বলছি। পানির ব্যবস্থা করেছি। সার্বক্ষণিক কাজ করছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কর্মীরা।

জেইউ/এসএসএইচ