মালয়েশিয়ার এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাদমান সাকিব রাফি

চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসা থেকে বেরিয়ে আর ফেরেননি মালয়েশিয়ার এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সাদমান সাকিব রাফি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ছেলেকে না পেয়ে ওইদিন রাজধানীর ভাটারা থানায় সাদমানের মা মনোয়ারা বেগম একটি সাধারণ ডাইরি (জিডি) করেন।

জিডির পর পুলিশের পাশাপাশি একাধিক সংস্থা সাদমান নিখোঁজের ঘটনার তদন্ত কাজ শুরু করে। কিন্তু মেলেনি কোনো সন্ধান।

গত ১৪ জানুয়ারি রাজধানীর বেগুনবাড়ি ফ্লাইওভার পূর্বপাশে উঠার মুখে হাতিরঝিলের পানি থেকে আনুমানিক (২২) বছরের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। সূত্র জানায়, মরদেহটি উদ্ধারের সময় শরীরের কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহটি পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। মরদেহটি শনাক্তকরণে কেউ দাবি না করায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে গত ১১ ফেব্রুয়ারি দাফন করা হয়।

এদিকে ভাটারা থানার জিডির সূত্র ধরে মরদেহটি সাদমানের হতে পারে এমন সন্দেহে সাদমানের মা মনোয়ারা বেগমকে ডাকে পুলিশ। পরে সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) হাতিরঝিল থানায় এসে মরদেহ উদ্ধার সময় পুলিশের তোলা ছবি দেখে ছেলেকে শনাক্ত করেন মনোয়ারা বেগম। তিনি পুলিশকে জানান, মরদেহের ছবিটি তার হারিয়ে যাওয়া ছেলের।

সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন হাতিরঝিল থানার ডিউটি অফিসার উপ-পরিদর্শক হারুন। তিনি বলেন, মনোয়ারা বেগম মরদেহের ছবি দেখে নিশ্চিত করেছেন যে এটা তারই ছেলে।

এর আগে গত ২৪ জানুয়ারি ভাটারা থানার জিডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন, সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি সকাল ৯টা ২২ মিনিটে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সি ব্লকের ৫/এ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান সাদমান সাকিব রাফি। তার কাঁধে ব্যাগ ছিল। নিখোঁজের আগের রাত থেকে সাদমানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ ও বিচ্ছিন্ন ছিলো তার ব্যবহৃত সিম।

সাদমান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় ডিএমপির ভাটারা থানায় নথিভুক্ত সাধারণ ডায়েরির তদন্ত কাজের সমন্বয় করেছিলেন ভাটারা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রফিকুল হক। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, থানা-পুলিশের পাশাপাশি একাধিক সংস্থা সাদমান নিখোঁজের ঘটনার তদন্ত ও উদ্ধারে কাজ করেছে। তবে আমরা এখন পর্যন্ত তার সন্ধান পাইনি। তার অবস্থানও নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও সিম বিচ্ছিন্ন থাকায় তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নিয়েও ট্রেস করা সম্ভব হয়নি।

ছেলের সন্ধান না মেলায় উদ্বিগ্ন মা মনোয়ারা বেগম গত ২৪ জানুয়ারি ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, ‘দেশে সাদমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব নেই। পরিচিত, আত্মীয়-স্বজন, সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেছি, কিন্তু সাদমানের খোঁজ কেউ দিতে পারেননি। আমার ছেলে অপহৃত হলে এতদিনে ফোন আসতো। হয়তো মুক্তিপণও চাইতো। সেরকম কিছু ঘটেছে কি-না সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলতে পারবে।’

তিনি আরও বলেছিলেন, কোথাও গিয়ে নিজে থেকে আত্মগোপন করবে সেরকম ছেলে সাদমান না। আজকে ১২টা দিন, প্রশাসন চেষ্টা করছে সব রকম। কিন্তু বুঝতে পারছি না, আমার এ রকম সহজ সরল, সৎ ও মেধাবী ছেলে আত্মগোপন করে থাকবে তা বিশ্বাস করি না।

ওই সময়ে সাদমানের নিখোঁজের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর এক প্রতারক সাদমানকে ফেনীতে পাওয়া গেছে ও উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে তার মা আনোয়ারাকে জানান। ওই প্রতারক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আট হাজার টাকাও নেন।

ওই প্রতারণার ঘটনায় করা জিডির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই হাফিজুর রহমান বলেছিলেন, প্রতারকের অবস্থান জামালপুরে। তাকে ধরতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কাজ করছে।

পরিবারের ভাষ্যমতে, নিখোঁজ সাদমান মালয়েশিয়ার এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির (এপিইউ) ট্রিপল ‘ই’ বিভাগের ছাত্র। গত ১৯ সেপ্টেম্বর লকডাউনের মধ্যে তিনি মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরেন। সেখান থেকে দ্বিতীয় সেমিস্টার শেষ করার পর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হন। সাদমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সৌদি আরবে। মাঝেমধ্যে সাদমান বিষণ্ণ থাকতেন। এ কারণে গত বছরের নভেম্বরে তার চিকিৎসা করানো হয়েছে।

এমএসি/এমএইচএস