আত্মহত্যা করতে ১০তলার কার্নিশে গিয়ে দাঁড়ায় এক কিশোর। কিন্তু নিচে তাকিয়েই গেল পিলে চমকে। ভয়ে আর্তচিৎকার। ঝুঁকিপূর্ণ সংকীর্ণ কার্নিশ। একটু এদিক-সেদিক হলেই পা পিছলে নিশ্চিত মৃত্যু। জীবনভিক্ষা চেয়ে চিৎকার করছিল ছেলেটি। দুঃসাহসিক ও শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে তাকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

ঘটনাটি রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী এলাকার। ২১শে ফেব্রুয়ারি (রোববার) দুপুরে। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় সোমবার। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার ঢাকা পোস্টকে জানান, ২১শে ফ্রেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার সময় ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমে একটি ফোন আসে। অপরপাশ থেকে একজন বলেন, সিদ্ধেশ্বরীর ১৬তলা হাফিজ টাওয়ারের ১০তলার কার্নিশে আটকে পড়েছে এক কিশোর। সংবাদ শুনে দ্রুত তাকে উদ্ধারে ছুটে যায় ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরের একটি ইউনিট। নেতৃত্বে দেন ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের স্টেশন অফিসার মিজানুর রহমান।

ফায়ার সার্ভিস জানতে পারে, ছেলেটির নাম মোতালেব। তার বয়স ১৩ বছর। অজ্ঞাত কারণে জীবনের মায়া ভুলে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল সে। আত্মহত্যার জন্য সে ভবনের ১০ তলার কার্নিশে গিয়ে দাঁড়ায়। তবে নিচের দিকে তাকিয়ে আর সাহস হয়নি। জীবনের মায়ায় ফিরে আসতে চায় সেখান থেকে। কিন্তু তা আর পারছিল না সে। তার আর্তচিৎকারে লোকজন ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়।

শাহজাহান শিকদার বলেন, সে ছিল ঝুঁকিপূর্ণ সংকীর্ণ কার্নিশে। পড়লেই নিশ্চিত মৃত্যু। ঘটনাস্থলে গিয়েই ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা মোতালেবকে উদ্ধারের কৌশল ঠিক করে ফেলে। ফায়ার সদস্য গিয়াসের সাথে রশি ধরে সহযোগিতা করার জন্য নির্ধারণ করে দেন ফায়ারফাইটার লিটন, সুজন আর হৃদয়কে। মূল অপারেশনে পাঠানো হয় দুঃসাহসিক ফায়ারফাইটার সোহাগ চন্দ্র কর্মকারকে। বডি হার্নেসসহ প্রয়োজনীয় পিপিই (ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম) পড়ে বারান্দা থেকে কার্নিশে নেমে যান সোহাগ। নেতৃত্বে থাকা এসও মিজানের নির্দেশনা অনুসরণ করে পৌঁছে যান মোতালেবের কাছে। উদ্ধার করেন তাকে।

অভিযান সম্পর্কে শাহজাহান শিকদার বলেন, একটু এদিক-সেদিক হলেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হবে মোতালেবের! না, তা হয়নি। হয়েছে আল্লাহর অপার কৃপা আর পেশাদারির বিজয়। সুরক্ষিত রেখেই সোহাগ নিরাপদে মোতালেবকে উদ্ধার করে আনেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শ্বাসরুদ্ধকর ১০ মিনিটে সম্পন্ন করা এই দুঃসাহসিক অভিযানকে উৎসুক জনতা বিপুল করতালির মাধ্যমে অভিনন্দন জানায়, সরব হয়ে উঠে ফায়ার সার্ভিসের প্রশংসায়।

এআর/এইচকে