নদীর গতিপথ পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত বাঁধ-সেতু-রাস্তা নির্মাণ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আকস্মিক বন্যার প্রধান কারণ। নদীর স্বাভাবিক গতিপথে বাঁধা দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে নদী নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন বক্তারা।

বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় কালের কণ্ঠের কনফারেন্সে রুমে ‘উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আকস্মিক বন্যা শিক্ষণীয়, করণীয় ও পুনর্বাসন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে।

কথাসাহিত্যিক ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের পরিচালক ইমদাদুল হক মিলনের সভাপতিত্বে এ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রওশন আরা বেগম।

আরও পড়ুন : সরকারি এক সংস্থাই ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে ৪৬৮ কোটি টাকার

অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হয়। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কোপ সম্মেলনে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে, এ বিষয়ে একমত। ক্যাপিটাল ড্রেজিং অচিরেই শুরু হবে। ৫৫০ মুজিব কেল্লা নির্মাণাধীন রয়েছে। আরও এক হাজার মুজিব কেল্লা ও এক হাজার সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেওয়া ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন হলে ৪০টি বন্যাপ্রবণ জেলায় বন্যার প্রাদুর্ভাব কমে যাবে।

তিনি বলেন, সিলেট ও সুনামগঞ্জের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। এ এলাকায় ৫০০ জলযান তৈরি করে বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আশ্রয়কেন্দ্র বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আলোচনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম বলেন, নদীকে বিরক্ত বা বাঁধা দেওয়া যাবে না। তাহলে বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে। প্রয়োজনে পানি বের হয়ে যেতে রাস্তা কাটার নির্দেশনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। এই রাস্তা আমাদের আবার করতে হয়। এসব বিষয় বিবেচনা করে আমাদের ৫০ বছরের দীর্ঘ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা কেয়া বলেন, অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না করে যেন পানিপ্রবাহ ভালোভাবে হয় সেদিকে নজর দিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে।  

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মাজেদা আক্তার বলেন, বন্যার কারণে রাস্তাঘাট একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ।

উল্লেখ্য, চলতি বছর দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় প্রায় ৭২ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে বাড়িঘর, অবকাঠামো, জীবিকা, ফসলাদি, গবাদি পশু ও গোখাদ্য, খাবার পানি, পয়োনিষ্কাশন ইত্যাদির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

আরএম/এসকেডি