তামাক খাত থেকে গত অর্থবছর ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে সরকার। তাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আনা প্রস্তাবসমূহ আদৌ যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য কিনা তা আরও স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে তামাক আইন একটি বৈধ শিল্পের জন্য হুমকিস্বরূপ।

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে পলিসি ডায়লগ অ্যান্ড ইটস ইমপ্যাক্ট (টোব্যাকো অ্যান্ড লিংকেজ সেক্টর) শীর্ষক একটি পলিসি ডায়ালগ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইপিএবি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এতে একাডেমিক সেক্টরের বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক ফোরামের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিল্প সেক্টরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও তামাক শিল্প খাতের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা বলেন, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ও সর্বশেষ ২০১৩ সালে সংশোধিত হয় এবং পরবর্তীতে ২০১৫ সালে এই আইনের বিধি চূড়ান্ত করা হয়। বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই আইনের অধিকতর সংশোধন আনার লক্ষ্যে একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে যার মধ্যে ধূমপান এলাকার ব্যবস্থা বিলুপ্তিকরণ, তামাক কোম্পানিগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি (সিএসআর) নিষিদ্ধকরণ, ই-সিগারেট নিষিদ্ধকরণ, তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয়ের জন্য পৃথকভাবে লাইসেন্স গ্রহণ, ফেরি করে তামাকজাত পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধকরণ, সিগারেটের একক শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধকরণ ইত্যাদিসহ বেশ কিছু বিতর্কিত প্রস্তাবনা রয়েছে; যা এই খাতের সঙ্গে জড়িত অংশীজনদের বিপাকে ফেলবে। নতুন এই আইন দেশে আদৌ বাস্তবায়নযোগ্য কিনা তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আবার তামাক সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন সভায় সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিনিধি ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোর মতামত নেওয়া হয়নি। ফলে এই আইনের সংশোধনী খসড়াটি সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত হয়েছে।

তারা বলেন, সর্বশেষ যখন এই আইনটি সংশোধিত হয় তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোর মতামত নিয়েই তা প্রণয়ন ও পরবর্তীতে বাস্তবায়ন করে। তাই বর্তমান সংশোধনী উদ্যোগেও এই খাতের সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের মতামত নেওয়া উচিত। কিন্তু এখনও তা দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়াও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্পষ্টতার ফলে এই ত্রুটিপূর্ণ আইনের অপপ্রয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে; যা মাঠ পর্যায়ে হয়রানি এবং নকল পণ্য বৃদ্ধির উদ্বেগ সৃষ্টি করবে।

পলিসি ডায়ালগ অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রস্তাবিত আইনটি কার্যকর হলে এ খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ৬০-৭০ লাখ মানুষ, সংশ্লিষ্ট নিম্ন ও মধ্যম আয়ের ব্যবসায়িক জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ সরাসরি হুমকির মুখে পড়বে। এর ফলে ভবিষ্যতে বৈদেশিক বিনিয়োগ, সরকারের বিপুল রাজস্ব এবং সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। 

পলিসি ডায়লগে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ ড. হারুনুর রাশিদ বলেন, দেশীয় রাজস্ব অর্জনে তামাক খাতের ব্যাপক গুরুত্ব আছে। এই খাত বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগ থেকেই প্রতিষ্ঠিত ছিল। তামাক উৎপাদন বাংলাদেশে ২৫০ বছর আগে শুরু হয়। একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে আকর্ষণীয় পণ্য হিসেবেই এটি বিবেচিত ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও এই খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। 

তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৫ বাস্তবায়ন হয়নি। ২০২২ সালে এসে আবার সংশোধনীর দিকে যাচ্ছে। কিন্তু সংশোধনীগুলো এমনভাবে হয়েছে যে, একটি বিশেষ গোষ্ঠীর প্রণোদনা ও প্ররোচনায় আইনের ধারা জনবান্ধব, সরকারবান্ধব ও রাজস্ববান্ধব না হয়ে এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যাতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে।  

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাহী পরিচালক টি আই এম নুরুল কবির,  রবির চিফ কর্পোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার ব্যারিস্টার সাহেদ আলম, বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফইউজে) সাধারণ সম্পাদক দীপ আজাদ প্রমুখ। আইপিএবির সভাপতি শামসুল আলম মল্লিকের সভাপতিত্বে ডায়লগ সেশনটি পরিচালনা করেন আইপিএবির ডিরেক্টর জেনারেল মো. আজিজুর রহমান এফসিএস।

এএজে/এসকেডি