ট্রেন আসছে দেখে কেউ কেউ ঝুঁকি নিয়েই পার হচ্ছেন রেললাইন। অনেকে আবার লাইন ধরেই হাঁটছেন। ট্রেন এলে সামান্য সময়ের জন্য নেমে ফের উঠে পড়ছেন লাইনে। অনিরাপদ, গেটবিহীন রেললাইনের এ অংশটি পড়েছে রাজধানীর কুড়িলে।

বিমানবন্দর সড়ক থেকে কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচের সড়কে আসা-যাওয়ায় পথচারীদের এ রেললাইন পার হতে হয়। ঢাকায় পথচারীদের জন্য অনিরাপদ রেললাইনের যতটুকু অংশ রয়েছে, তার মধ্যে এটুকু অন্যতম। প্রতিদিন হাজারো পথচারী এ রেললাইনের এপার-ওপার আসা যাওয়া করেন। 

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন ৩৪টি আন্তঃনগর, ১৪টি মেইল বা এক্সপ্রেস ট্রেন ও পাঁচটি কমিউটার ট্রেন চলাচল ছেড়ে যায়। একই সংখ্যক ট্রেন আবার ঢাকায় ফিরে আসে। ট্রেনের এ হিসাব দেখলেই বোঝা যায় কতটা ব্যস্ত এ রেললাইন। অথচ পথচারীরা ঝুঁকির তোয়াক্কা না করে পার হন এ রেললাইন।

সোমবার (১ আগস্ট) কুড়িল ফ্লাইওভার সংলগ্ন রেললাইনে সরেজমিনে দেখা গেছে, ট্রেনে আসছে দেখেও পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের সামনে দিয়ে পার হয়ে যাচ্ছেন। আর পথচারী দেখে অন্যান্য স্থানের তুলনায় ট্রেনচালক হুইসেল সংখ্যা বাড়িয়ে এ স্থান অতিক্রম করছেন।

এখানে নেই কোনো রেলগেট, নেই রেলসংশ্লিষ্ট কেউই। বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা প্রকৌশল বিভাগের একটি অস্থায়ী স্টোররুম এখানে চোখে পড়ে। সামনে গেলে দেখা যায় তালাবদ্ধ। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কারো দেখা মেলেনি। আর এ সময়ের মধ্যেই হাজার হাজার পথচারীদের কেউ কেউ রেল লাইন ক্রস করে বিমানবন্দর সড়কে উঠছেন, কেউবা সড়ক থেকে কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচের অংশে যাচ্ছেন।

পথচারীদের ভিড় থাকায় রেললাইন পারাপারের এ স্থানটিকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু অস্থায়ী দোকান। সেগুলোতে দাঁড়িয়ে পথচারীদের নানা পণ্য কেনাকাটা করতেও দেখা গেল। তাদের পাশ ঘেঁষে একের পর এক চলে যাচ্ছে ট্রেন। একটু অসাবধান হলেই ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা।

কুড়িলের এ রেললাইন পেরিয়ে আসা পথচারী সাজেদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদক। সাজেদুর বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার, তা ঠিক। কিন্তু আমাদের তো পার হতে হবে। অনেক পথচারী আছেন যারা সচেতনভাবে চারদিকে দেখে এরপর রেললাইনটি পার হন। আবার অনেকে আছে দৌড়ে ট্রেনের সামনে দিয়েই পার হন। সচেতনতা নিজের মধ্যে। তবে এখানে যেহেতু অসংখ্য মানুষ সারাদিনে পার হন তাই এখানে একটি রেলগেট স্থাপন করে তাতে গেটম্যান নিয়োগ করতে পারে রেল কর্তৃপক্ষ। অনেক সময় এখানে দুর্ঘটনাও ঘটে।

আরেক পথচারী তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আসলেই এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যস্ত পারাপারের স্থান। অনেকে এখানে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এখানে মূলত সবাই হেঁটেই লাইন পার হন, কোনো যানবাহন এখান দিয়ে পার হয় না। তাই কোনো রেলগেট ও গেটম্যান এখানে নেই। তবে সারাদিনে আমার মতো হাজার হাজার মানুষ এ ব্যস্ত স্থানটি দিয়ে লাইন পার হন। রেললাইনে পথচারী প্রতিবন্ধক একটি স্ট্যান্ড স্থাপন করে গেটম্যান নিয়োগ করা হলে সবাই নিরাপদে পার হতে পারবেন।

রেললাইন পারাপারের স্থানটিকে কেন্দ্র করে প্যান্ট-শার্টের একটি অস্থায়ী দোকান দিয়ে বসেছেন নাজমুল হক নামের এক ব্যবসায়ী। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতিদিন এখান দিয়ে যেহেতু অসংখ্য পথচারী পারাপার হন, তাই এখানে এসব অস্থায়ী দোকান গড়ে উঠেছে। সারাদিনে একশর বেশি ট্রেন যাতায়াত করে এ লাইন দিয়ে। আর এ স্থানটিও পথচারী পারাপারের জন্য খুব ব্যস্ত একটি স্থান। তাই এখানে রেললাইন পারাপারের সময় পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।

তিনি বলেন, কিছু মানুষ সচেতন। বাকিরা সবাই অসচেতন। তারা ঝুঁকি নিয়েই ট্রেনের সামনে দিয়ে পার হয়ে যান। কিন্তু নিজেদের নিরাপত্তার কথা ভাবেন না। ট্রেনগুলো এখানে এসে এত মানুষ দেখে অতিরিক্ত হর্ন বাজায়। তবুও মানুষ সচেতন হয় না। ফলে এখানে একটি গেট স্থাপন করে গেটম্যান নিয়োগ করা জরুরি।

এএসএস/আরএইচ