চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার জন্য জলহস্তী, সিংহ, জিরাফ, উট, ক্যাঙ্গারু, ওয়াইল্ড বিস্ট, লামাসহ বিভিন্ন প্রজাতির আরও পশু-পাখি সংগ্ৰহ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।  

সোমবার (১ আগস্ট) চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় চারটি বিরল প্রজাতির সাদা বাঘের জন্ম এবং চিড়িয়াখানার বর্তমান ব্যবস্থাপনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

জেলা প্রশাসক বলেন, বাঘের খাঁচা সম্প্রসারণ, চিত্রা হরিণের খাঁচা বৃহৎভাবে তৈরি, ভাল্লুকের খাঁচা সম্প্রসারণ, কুমিরের খাঁচা আধুনিকীকরণ, বিভিন্ন প্রজাতির সাপের জন্য আলাদা স্নেক সেকশন তৈরি, ময়ূরের জন্য চিড়িয়াখানার নতুন অংশে এভিয়ারি তৈরি, শকুন সংরক্ষণে নতুনভাবে অনুকূল খাঁচা তৈরি করা হবে।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে চিড়িয়াখানার বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি করে তা সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অবমুক্ত করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে প্রকল্প নেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছি। জঙ্গল সলিমপুরে সরকারি ৪০ একর জায়গায়  চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার এক্সটেনশন হিসেবে সাফারি পার্ক চালু করা হবে।

জেলা প্রশাসক বলেন, জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের ব্যবস্থাপনায় ও নিবিড় তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম জেলার একমাত্র বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, গবেষণা, শিক্ষা ও বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচালিত হচ্ছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। কোনো ধরনের সরকারি অনুদান ছাড়াই জেলা প্রশাসক চট্টগ্রামের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের কর্মকর্তাদের সুদক্ষ ব্যবস্থাপনায় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা একটি স্বাবলম্বী এবং লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। 

আরও পড়ুন : ‘রাজ-পরীর’ ঘরে নতুন অতিথি

তিনি বলেন, চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রকার অবকাঠামোগত সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং নতুন নতুন প্রাণী ক্রয় ও সংগ্রহের মাধ্যমে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার পর্যটন সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে ব্যাপক হারে চিড়িয়াখানায় দর্শক সমাগম হচ্ছে ও প্রতিষ্ঠানটির আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারি অনুদান কিংবা স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অনুদান ছাড়া শুধুমাত্র টিকিট বিক্রির টাকা দিয়ে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সব অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ, পশু-পাখির খাদ্য ব্যয়, ওষুধ ও পরিচর্যা ব্যয়, প্রাণী ক্রয় ও সংগ্রহ বাবদ ব্যয় এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন নির্বাহ করা হচ্ছে।

মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, চিড়িয়াখানার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাঘ ও জেব্রা সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া ভাল্লুক, সিংহ, হরিণ (চিত্রা, সাম্বার, মায়া), উল্লুক, বানর, মেছোবিড়াল, চিতাবিড়াল, অজগর, বাঘদাশ, উঠপাখি, ইমু পাখি, গয়াল, কুমির, ময়ূর, ঘোড়া ,বক, টিয়াসহ ৬৬ প্রজাতির ৬২০টি পশুপাখি আছে। 

জেলা প্রশাসক বলেন, চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ২০১৮ সালে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া প্রথম সাদা বাঘটি পর্যটকদের জন্য বিশেষ একটি আকর্ষণ। হাজার হাজার মানুষ এটি দেখতে ভিড় করেন। এ চিড়িয়াখানায় গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম প্রাকৃতিক এভিয়ারি (পক্ষীশালা)। যেখানে তিন শতাধিক পাখি রয়েছে। এছাড়া গত ৩০ জুন  দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা রাজ ও পরি নামক বাঘ দম্পতি থেকে ৪টি বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ জন্মায়। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ১৬টি বাঘ রয়েছে। যার মধ্যে ৫টি বিরল প্রজাতির সাদা বাঘ। বাংলাদেশের চিড়িয়াখানা ও  সাফারির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাঘ এখন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায়। 

তিনি বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা সার্বক্ষণিক সিসি টিভি ক্যামেরা দ্বারা পর্যবেক্ষণ করা হয়। দর্শনার্থীর নিরাপত্তায় অভ্যন্তরে সার্বক্ষণিক আনসার সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে। শীঘ্রই চালু হতে যাচ্ছে অনলাইন টিকিটিং সিস্টেম। যার মাধ্যমে দর্শনার্থীরা ঘরে বসেই টিকিট সংগ্রহ করতে পারবেন।

করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকার পরেও বর্তমানে চিড়িয়াখানার চলতি তহবিলে তিন কোটি ত্রিশ লক্ষ টাকা রয়েছে। এছাড়া এফডিআর হিসাবে আরও দুই কোটি টাকা রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড এই মাসেই চালু হতে চলছে। 

জেলা প্রশাসক বলেন, চিড়িয়াখানা প্রাঙ্গণে ও পাহাড়ি জায়গায় বৃক্ষরোপণ (ফলজ, ফুলজ ও উদ্ভিজ) করে চিড়িয়াখানার পরিবেশগত সৌন্দর্য ও সুরক্ষা বৃদ্ধি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় কৃত্রিম পরিবেশে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ইনকিউবেটরে ডিম থেকে অজগরের বাচ্চা ফুটানো হয়। গত ২২ জুন র্সবশেষ ১১টি বাচ্চা কৃত্রিমভাবে ফুঁটে। যা অতি শীঘ্রই বন্য পরিবেশে অবমুক্ত করা হবে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মত আবদ্ধ পরিবেশে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় চিতা বিড়ালের বাচ্চা প্রজনন করানো সম্ভব হয় । 

সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন জেলা ও বাংলাদেশের অন্যান্য জেলা থেকে আগত শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মিতভাবে বিনামূল্যে চিড়িয়াখানায় পরিদর্শনের সুব্যবস্থা করছে। 

কেএম/আইএসএইচ