জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন সংগ্রাম, স্বাধীনতা যুদ্ধ আর ইতিহাসের সমন্বয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ একটি মিটারগেজ ও একটি ব্রডগেজ কোচ নিয়ে তৈরি করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর। দুটি কোচের একটি থাকবে দেশের পূর্বাঞ্চলে অন্যটি থাকবে পশ্চিমাঞ্চলের রেল স্টেশনে।

সোমবার (১ আগস্ট) আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে ভ্রাম্যমাণ বঙ্গবন্ধু জাদুঘরটি উদ্বোধন করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা স্টেশনগুলোতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত থাকবে এবং ওই অঞ্চলের মানুষের কাছে প্রদর্শন করা হবে। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে এই জাদুঘরটি পাঁচদিন থাকবে। এরপর ভাটিয়ারী স্টেশনে থাকবে ৫ থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন স্টেশনে থাকবে।

সোমবার বিকেলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায় স্টেশনের ৯ নম্বর প্লাটফর্মে জাদুঘরের বগিটি রাখা হয়েছে। জাদুঘরটিতে জাতির জনকের বেড়ে ওঠা ও কর্মময় জীবনের ঘটনাগুলো নিয়ে ধারাবাহিক ১২টি পর্বে নির্মাণ করা হয়েছে ভ্রমমাণ জাদুঘরটি। 

জাদুঘরটি ঘুরে দেখা যায়, জাদুঘরটিতে প্রবেশ করেই দর্শনার্থীরা পরিচিত হবেন জাতির পিতার শৈশবের দিনগুলোর সঙ্গে। পর্যায়ক্রমে তার ছাত্রজীবন, বেড়ে ওঠা, মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের মাধ্যমে গণমানুষের প্রাণের নেতা হয়ে ওঠা, ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক হিসেবে তার অবদান, অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবর্ণনীয় নির্যাতন ভোগ, মিথ্যা মামলা ও কারাভোগের করুন চিত্র, তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম, বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ, ৬৬ এর ঐতিহাসিক ছয় দফা, ৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থান, জাতির গৌরবোজ্জ্বল ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, যুদ্ধ বিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত হবেন।

প্রতিটি ভিডিও নির্মাণ করা হয়েছে স্থিরচিত্রের সমন্বয়ে। কোচের এক প্রান্তে একটি বড় এলইডিতে জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণ ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ভাষণসমূহ এবং থিম সংসহ বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত অন্যান্য গান প্রচার করা হচ্ছে।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরটিতে রয়েছে ‘জয় বাংলা’ লেখার আদলে তৈরি করা একটি বুক সেলফ। যেখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত ও তার কর্মজীবনের উপর লেখা গুরুত্বপূর্ণ বইসমূহ। এছাড়া শিশুদের জন্য রয়েছে বঙ্গবন্ধুর উপর রচিত বিভিন্ন শিশুতোষ সাহিত্য কর্ম। 

জাদুঘরটিতে ১২টি টেবিলে স্থাপন করা হয়েছে জাতির পিতার পৈতৃক নিবাসের প্রতিরূপ, তার ব্যবহৃত চশমা, পাইপ, মুজিব কোট, টুঙ্গিপাড়ার সমাধিস্থলসহ ১৩টি ঐতিহাসিক অনুকৃতি।

এছাড়া ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরে রয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গৌরবের প্রতীক জাতীয় স্মৃতিসৌধসহ মুক্তি সংগ্রামের দুর্লভ চিত্রসমূহ। জাদুঘরে আছে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লেখা পত্র। যা জাতির পিতাকে আরও গভীরভাবে অনুধাবনে সহায়ক হবে।

কোচটির  উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জিএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর রেলের ইতিহাসে প্রথম ভ্রাম্যমাণ রেল জাদুঘর। চট্টগ্রামে উদ্বোধন হওয়া একটি মিটারগেজ কোচকে সর্বোচ্চ প্রযুক্তিতে সাজানো হয়েছে। জাদুঘরটিতে ১৯২০ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার ঐতিহাসিক জীবন, মুক্তিযুদ্ধ, সংগ্রামী ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরা হয়েছে।

জাদুঘরটি দেখতে আসা কলেজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র সাঈদ মো. সামিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভ্রাম্যমাণ  জাদুঘরটি দেখে ভালো লেগেছে। এখানে এসে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছি। 

সমেরুন্দ দত্ত নামের একজন বলেন, আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এখানে এসে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে নতুন করে জানতে পেরেছি। সবারই এটা দেখা উচিত। 

শিডিউল অনুযায়ী দেখা যায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে একটি জাদুঘর থাকবে ১ থেকে ৫ আগস্ট, ভাটিয়ারী স্টেশনে থাকবে ৫ থেকে ৭ আগস্ট, সীতাকুণ্ড স্টেশনে থাকবে ৭ থেকে ৯ আগস্ট, চিনকিআস্তানা স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১১ আগস্ট, ফেনী জংশনে থাকবে ১১ থেকে ১৫ আগস্ট, গুনবতী স্টেশনে থাকবে ১৪ থেকে ১৭ আগস্ট, নাঙ্গলকোর্ট স্টেশনে থাকবে ১৬ থেকে ১৯ আগস্ট, লাকসাম জংশনে থাকবে ১৮ থেকে ২৩ আগস্ট, চৌমুহনী স্টেশনে থাকবে ২৪ থেকে ২৫ আগস্ট, মাইজদীকোর্ট স্টেশনে থাকবে ২৬ থেকে ২৭ আগস্ট, নোয়াখালী স্টেশনে থাকবে ২৮ থেকে ২৯ আগস্ট, চাঁদপুর স্টেশনে থাকবে ৩০ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর, কুমিল্লা স্টেশনে থাকবে ২ থেকে ৪ নভেম্বর, আখাউড়া স্টেশনে থাকবে ৫ থেকে ৮ নভেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে থাকবে ৯ থেকে ১০ নভেম্বর, ভৈরব স্টেশনে থাকবে ১১ থেকে ১২ নভেম্বর, নরসিংদী স্টেশনে থাকবে ১৩ থেকে ১৪ নভেম্বর, টঙ্গী জংশনে থাকবে ১৫ থেকে ১৬ নভেম্বর এবং ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে থাকবে ১৭ থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত।

 কেএম/আইএসএইচ