১৯৮০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিংয়ে অধিগ্রহণের ফলে ৩৬ শতক জমি হারান তক্তারপুল এলাকার বাসিন্দা নুর চেহের বেগম। কিন্তু আজও ভূমির ক্ষতিপূরণ পাননি তিনি। এখন তার বয়স ৮৭ বছর। 

বুধবার (৩ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শাহ আলম বীর উত্তম অডিটোরিয়ামে দুদকের  শুনানিতে চেহের বেগমকে নিয়ে হাজির হয়ে অভিযোগ তুলে ধরেন তার ছেলে মিজানুর রহমান।

দুদকের কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান গণশুনানিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি এ সময় বিভিন্ন সমস্যার শুনানি করেন।

শুনানিতে মিজানুর রহমান বলেন, আমার আম্মার বয়স হয়ে গেছে, তিনি অসুস্থ। ১৯৮০ সালে নিউমুরিংয়ে ৩৬ শতক জমি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণ করে। কিন্তু অধিগ্রহণের একটি টাকাও আমরা পাইনি। আমরা এর সুরাহা করতে বহুবার বন্দর, জেলা প্রশাসন ও দুদকের অফিসে গিয়েছি। কিন্তু কোনো সমাধান পাচ্ছি না। 

তার অভিযোগের ভিত্তিতে গণশুনানিতে অংশ নেওয়া চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি বন্দরের ডেপুটি ম্যানেজার (ভূমি) জিল্লুর রহমান জানান, আমরা বিষয়টি শুনেছি। খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। আমরা জমি পছন্দ করার পর অধিগ্রহণের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করে জেলা প্রশাসন। আমরা ক্ষতিপূরণের টাকা জেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দিয়েছি। তাদের ক্ষতিপূরণের টাকা ভুয়া কাগজ দেখিয়ে অন্যরা আত্মসাৎ করেছে। এ নিয়ে ছয়জনের বিরুদ্ধে একটি মামলাও রয়েছে, যা আদালতে বিচারাধীন।  

তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর কিছুই করার ছিল না। আইনিভাবেও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও মানবিক দিক বিবেচনা করে নূর চেহের বেগমের এক সন্তানকে বন্দরে চাকরির ব্যবস্থা করেছি।

এ সময় ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান বলেন, জমি অধিগ্রহণের পরেও কোন ক্ষতিপূরণ না পেয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেন তার পরিবার। ১৯৯০ সালে ওই মামলায় তার মায়ের পক্ষে রায় আসে। এরপর অন্য একটি জায়গায় তাদের পুনর্বাসন করা হয়। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের পুনর্বাসনের জায়গা থেকেও বিতাড়িত করে। 

শুনানি চলাকালে মিজান ও তার মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। নুর চেহের বেগমের সন্তান মিজান বলেন, মিথ্যা তথ্য দিয়ে অনেকে জেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ তুলে নিয়েছে। কিন্তু আমরা জমির প্রকৃত মালিক ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও ক্ষতিপূরণ পাইনি। আমাদের পুনর্বাসনও করা হয়নি।

শুনানিতে দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের সিএসআর (সোশ্যাল করপোরেট রেসপনসিবিলিটি) ফান্ড থেকে নুর চেহের বেগমের পরিবারকে পুনর্বাসন করতে পারে।

এ ছাড়া তৎকালীন সময়ে জমি অধিগ্রহণের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অভিযোগের বিষয়ে একটি অনুসন্ধান পরিচালনা হতে পারে। সে ধরনের ব্যবস্থা নিতে দুদক কমিশনারকে অনুরোধ জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান শুনানিতে আরও বলেন, আমি বিষয়টি পর্যালোচনা করেছি। সার্টিফিকেট মামলা করে তাদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করলে তারা এভাবে আরও ৫, ১০, ২০ বছর ঘুরবেন। ক্ষতিপূরণ আদায় করতে কষ্ট হবে। তাই মামলা নিষ্পত্তি করার পাশাপাশি বিষয়টি আন্তরিকভাবে দেখলে ভালো হয়। এক্ষেত্রে বন্দর যদি মামলার বাদীকে সিএসআর ফান্ড থেকে পুনর্বাসন করে, তাহলে ভালো হয়। আর জেলা প্রশাসন থেকে আমরা তাদের পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেব। 

তিন বছর ধরে পাসপোর্টের জন্য অপেক্ষা 

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা রিপন বড়ুয়া দুদকের শুনানিতে অভিযোগ করেন, তার মা অসুস্থ ডলি বড়ুয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন হওয়ায় ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি নির্ধারিত তিন হাজার ৪৫০ টাকা ফি জমা দিয়ে পাসপোর্টের আবেদন করেন। কিন্তু এখনও পাসপোর্ট পাননি। 

পরে দুদকের গণশুনানিতে আগামী তিনদিনের মধ্যে ডলিকে পাসপোর্ট সরবরাহের কথা জানান মনসুরাবাদ বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. এনায়েত উল্লাহ।

এ ছাড়া দুদকের শুনানিতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্স, আয়াদের খারাপ ব্যবহার, মেডিক্যালের যন্ত্রপাতির অকেজো থাকার বিষয়টি উঠে আসে। এ ছাড়া গণশুনানিতে ভূমি, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের বিষয়ে ৪৭টি অভিযোগ উত্থাপিত হয়।

উত্থাপিত ৪৭টি অভিযোগের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হলেও অন্যান্য অভিযোগের ক্ষেত্রে  ৭ থেকে ১০ দিন এবং কিছু ক্ষেত্রে ২৮ দিন পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এ ছাড়া কিছু অভিযোগ দুদকের পক্ষ থেকে তদন্তের কথা বলা হয়েছে। 

কেএম/আরএইচ