রাতারাতি প্রায় ৫০ শতাংশ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে সরকার। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে আসবে। পরিবহন খাতে সংকট দেখা দেবে, বাড়বে পরিবহন খরচও।

এরমধ্যেই বাসের ভাড়া বৃদ্ধির তোড়জোড় শুরু হয়েছে। আজ বিকেল ৫টায় পরিবহন মালিকরা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে সমন্বয় করে ভাড়া বাড়ানো হতে পারে।

পরিবহন মালিক শ্রমিক ও তাদের সংগঠনের একধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে বাস ভাড়া বৃদ্ধির এমন তোড়জোড়ের খবর জানা গেছে।

আরও পড়ুন : ভাড়ায় বাড়বে জনদুর্ভোগ, সংকটে পড়বে পরিবহন খাত

যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতুল্লাহ বলেছেন, সরকার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। যা বাড়িয়েছে তাতে পরিবহন খাতে অস্থিরতা দেখা দেওয়া খুবই স্বাভাবিক। কেন, কী কারণে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে সেটার ব্যাখ্যা সরকারই দেবে। তবে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে ভাড়ার সমন্বয় না হলে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

তিনি বলেন, আমরা পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের নেতা ও মালিকপক্ষ বৈঠকে বসবো। ভাড়া সমন্বয়ের বিষয়ে।

বাস ভাড়া বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে ভাড়ার সমন্বয় করার কমিটি রয়েছে। আমরা সেখানে আগামীকালই বাস ভাড়া সমন্বয়ের জন্য আবেদন করবো।

বাস-ট্রাক ওনার্স গ্রুপের ঢাকার সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্বাধীনতার পর এভাবে কখনো জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি হয়নি। এতে করে যদি পরিবহন খাতে ভাড়া বৃদ্ধি করা না হয় তাহলে মালিক-শ্রমিকপক্ষ ফকির হবে। ভাড়া বৃদ্ধির কোনো বিকল্প দেখছি না।

উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, গাবতলী থেকে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত আমার এরিয়ায় যাতায়াতে ২৭ লিটার তেল লাগে। এখন জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে যাওয়া আসায় খরচ বাড়বে ২৭০০ টাকা! আপনি বলেন, এই খরচা আমি কি করে সমন্বয় করবো! হয় আমাকে ভাড়া বৃদ্ধি করতেই হবে, নয়তো পরিবহন ব্যবসা আমাকে ছেড়ে দিতে হবে। আর ভাড়া বৃদ্ধি ছাড়াই যদি আমাকে ব্যবসা করতে হয় তাহলে লুজার হবো, ফকির হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই।

এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে (ইআরএল) পরিশোধিত এবং আমদানি/ক্রয় করা ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের মূল্য সমন্বয় করে ভোক্তা পর্যায়ে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন : রাজধানীতে গণপরিবহন সংকট, পথে পথে ভোগান্তি

শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত ১২টার পর থেকে ডিপোর ৪০ কিলোমিটারের ভেতর ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য ডিজেল ১১৪ টাকা প্রতি লিটার, কেরোসিন ১১৪ টাকা প্রতি লিটার, অকটেন ১৩৫ টাকা প্রতি লিটার ও পেট্রোল ১৩০ টাকা প্রতি লিটার হবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিনের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আগে ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য ছিল প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা ও পেট্রল ৮৬ টাকা।

গত বছরের ৩ নভেম্বর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। সেসময় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটারে ভোক্তা পর্যায়ে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ কেরোসিন ও ডিজেল ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে ৮০ টাকা করা হয়েছিল। তবে সেসময় অকটেন ও পেট্রোলের দাম বাড়ানো হয়নি।

এ বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জনবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার সবসময় আমজনতার স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। যতদিন সম্ভব ছিল ততদিন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ানোর চিন্তা করেনি। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়েই কিছুটা অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতে হচ্ছে। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য কমিয়ে দিয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের মূল্য পুনঃবিবেচনা করা হবে।

জেইউ/এসএম