যাদের চার আঙুলের ছাপ গ্রহণ করা হয়েছে, তাদের আঙুলের ছাপ নতুন করে নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে ইসি / প্রতীকী

বিদ্যুতের সাশ্রয়ে দেশব্যাপী সরকারঘোষিত লোডশেডিং চলছে। প্রতিদিনই নিয়ম করে এলাকাভেদে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। এ অবস্থায় চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নির্বিঘ্নে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে জেনারেটর ক্রয় করা প্রয়োজন বলে মনে করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসি জানায়, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোট দিতে আঙুলের ছাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য যেসব ভোটারের আঙুলের ছাপ অসম্পূর্ণ অর্থাৎ চার আঙুলের ছাপ গ্রহণ করা হয়েছে, তাদের আঙুলের ছাপ নতুন করে নেওয়ার উদ্যোগ নিচ্ছে ইসি।

গত ১ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের মাসিক সমন্বয় সভায় এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত এ সমন্বয় সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার।

মাসিক সমন্বয় সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ইসির প্রশাসন ও অর্থ শাখার যুগ্ম সচিব মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস সভার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন। সভায় বিভিন্ন শাখা ও দপ্তরের নিষ্পন্ন ও অনিষ্পন্ন কাজের বিবরণীসহ গত সমন্বয় সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয় সভায়।

আরও পড়ুন >> জন্মসনদ দিতে গড়িমসি করলে জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

যুগ্ম সচিব কামাল উদ্দিন বিশ্বাস জানান, বরিশালে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কোন কোন অঞ্চলে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে সমস্যা হচ্ছে— জানতে চান ইসি সচিব। এর পরিপ্রেক্ষিতে রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জি এম সাহাতাব উদ্দিন বলেন, প্রথম পর্যায়ে ভোটার তালিকার হালনাগাদ কার্যক্রমে অনলাইন জন্মসনদ পেতে সমস্যা হলেও স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির সঙ্গে সভার মাধ্যমে বর্তমানে তা সমাধান করা হয়েছে।

ঢাকা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সাভার ও গাজীপুর এলাকার জনপ্রতিনিধিরা অনলাইন জন্মনিবন্ধন দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে কোনো কোনো উপজেলায় প্রাক্কলিত ভোটারের তুলনায় ভোটার হওয়ার হার অনেক কম হচ্ছে।

অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, বলছেন সংশ্লিষ্টরা / ফাইল ছবি

ফরিদপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, ফরিদপুর অঞ্চলে অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদপ্রাপ্যতায় সমস্যা নেই। তবে প্রুফ রিডিং-এর ক্ষেত্রে আট হতে দশটি পাতা স্ক্যান করার পরই বিভিআরএস সফটওয়্যার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে। রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জন্মনিবন্ধন সনদপ্রাপ্যতার সমস্যা সমাধানে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের সিডিউল আগাম প্রচার করা যেতে পারে। ময়মনসিংহ আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, ময়মনসিংহ অঞ্চলে অনলাইন জন্মনিবন্ধন পেতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে, উপজেলার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ভোটারদের তথ্যাদি সার্ভারে আপলোড করা হলে তাদের বায়োমেট্রিক তথ্যাদি পাওয়া যাচ্ছে না।

বরিশাল, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, তাদের অঞ্চলে বিটিসিএল ক্যাবল সংযোগ বা রাউটার কনফিগারেশনের কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এ কার্যক্রমের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেননি।

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, উপজেলা, জেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস একই ভবনে অবস্থিত হওয়ায় প্রতিদিন অনেক সেবাগ্রহীতা সেবা গ্রহণের লক্ষ্যে আসেন। তাই ভবনের নিরাপত্তার লক্ষ্যে সার্বক্ষণিক পুলিশ/আনসার মোতায়েন করা প্রয়োজন। কুমিল্লা ও ময়মনসিংহের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জানান, জনবল সংকটের কারণে স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই জরুরিভিত্তিতে শূন্য পদে জনবল পদায়ন করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন >> ১২০ ইভিএম হারিয়েছে ইসি : কিছু আগুনে পুড়েছে, কিছু চুরি হয়েছে

সভায় বাজেট শাখার উপ-সচিব জানান, উপজেলা নির্বাচন অফিসার কার্যালয়ের ওয়াশরুম নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে তথ্য/প্রাক্কলন প্রদানের জন্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০টি আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের মধ্যে রাজশাহী, সিলেট, কুমিল্লা ও রংপুর অঞ্চল ব্যতীত অন্যান্য আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় হতে জেলা সদরে অবস্থিত সদর উপজেলা নির্বাচন অফিস/উপজেলা নির্বাচন অফিসের ওয়াশরুম নির্মাণের জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওয়াশরুম নির্মাণের লক্ষ্যে বরাদ্দ প্রদানের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানান তিনি।

নির্বাচন কমিশনের সিস্টেম ম্যানেজার (আইসিটি) মো. রফিকুল হক বলেন, বিটিসিএল-এর মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে ৪৩৮টি কার্যালয়ের মধ্যে ৯৮টির সংযোগ কার্যকরভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবশিষ্ট কার্যালয়ের সংযোগসমূহ স্থাপন সম্পন্ন হবে। রবি মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে ব্যবহৃত ভিপিএন সংযোগ ব্যবহারে যেসব কার্যালয়ে সমস্যা হচ্ছে তা দ্রুত সমাধানে ‘রবি আজিয়াটা লিমিটেড’-কে জানানো হয়েছে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানান তিনি।

চলমান হালনাগাদ কার্যক্রমে বায়োমেট্রিক গ্রহণ ও সংরক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন, ইসির সমন্বয় সভায় বক্তারা / ফাইল ছবি 

এনআইডি মহাপরিচালক (ডিজি) এ কে এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ফরম-২ এ জন্মনিবন্ধন নম্বর উল্লেখ করার বিধান রয়েছে। তাই এসএসসি’র সনদ থাকলেও ভোটারদের অবশ্যই অনলাইন জন্মসনদ দাখিল করতে হবে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রচারণার পাশাপাশি বিভাগ, জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে অনুষ্ঠিত সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।

ডিজি বলেন, ইতোমধ্যে প্রতিটি উপজেলা/থানা নির্বাচন অফিসে দুটি করে ল্যাপটপ ও একটি সার্ভার বিতরণ করা হয়েছে। ফিঙার প্রিন্ট স্ক্যানার ক্রয়ের লক্ষ্যে দরদাতাকে এনওএ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ সমস্যা থাকায় নির্বিঘ্নে ভোটার তালিকা কার্যক্রম সম্পাদনের লক্ষ্যে জরুরিভিত্তিতে জেনারেটর ক্রয় করা প্রয়োজন বলে জানান মহাপরিচালক।

আরও পড়ুন >> ‘আমরা সামান্য নির্বাচন কমিশনার’

ভোটারদের আঙুলের ছাপের বিষয়ে মহাপরিচালক বলেন, ২০০৭ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নাগরিকদের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানকালীন দশ আঙুলের ছাপ ও আইরিশের ছবি মেইন সার্ভারে আপলোডের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তিনি আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের উক্ত সময়ের তথ্যাদি দ্রুত মেইন সার্ভারে প্রেরণের আহ্বান জানান।

ডিজি হুমায়ুন কবীর আরও বলেন, বিধি মোতাবেক ১৫ বছর পর ভোটারদের বায়োমেট্রিক আপডেট করতে হবে। তাই আগামী বছরে আমাদের এ কর্মসূচি হাতে নেওয়া প্রয়োজন। ইভিএমে ভোটদানের ক্ষেত্রে আঙুলের ছাপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চলমান হালনাগাদ কার্যক্রমে বায়োমেট্রিক গ্রহণ ও সংরক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে যেসব ভোটারের আঙুলের ছাপ অসম্পূর্ণ বা চার আঙুলের ছাপ গ্রহণ করা হয়েছে, তাদের পুনরায় আঙুলের ছাপ গ্রহণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

এসআর/এমএআর/