পাহাড় কাটার দায়ে কলেজ অধ্যাপকসহ ২ জনের বিরুদ্ধে মামলা
চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামীর মাঝেরঘোনা এলাকায় পাহাড় কাটার পৃথক দুইটি ঘটনায় দুই জনের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রোববার (৭ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ থানায় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মতিন বাদী হয়ে মামলা দুইটি দায়ের করেন।
বিজ্ঞাপন
মামলা দায়েরের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ থানার মাঝেরঘোনা এলাকায় অনুনোমোদিতভাবে পাহাড় কেটে ‘বুদ্ধাংকুর বিহার ও বিদর্শন কেন্দ্র’ নামক বৌদ্ধ বিহারের স্থাপনা নির্মাণের দায়ে চট্টগ্রামের পটিয়ার খলিল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক উপানন্দ মহাথেরোর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
বিজ্ঞাপন
হিল্লোল বিশ্বাস বলেন, গত ৩১ জুলাই পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে দেখতে পান যে পাহাড় কেটে ‘বুদ্ধাংকুর বিহার ও বিদর্শন কেন্দ্র’ এর দু’টি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি ভবন ৩ তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট, যার নির্মাণ কাজ চলমান। এ দু’টি ভবন ছাড়াও পাহাড়টির উপরে বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্পটে পাহাড় কাটা হয়েছে। সর্বমোট ২৪ হাজার ১২০ ঘনফুট পরিমাণ পাহাড় কাটা হয়েছে।
তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর তদন্তে জানতে পারে চট্টগ্রামের পটিয়ার খলিল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক জনাব উপানন্দ মহাথেরোর দিক নির্দেশনায় পাহাড় কাটা হয়েছে। পাহাড়টি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তি। পাহাড় কাটার জন্য কোন অনুমতিও নেওয়া হয়নি। পাহাড় কেটে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতিসাধন করায় অভিযুক্ত উপানন্দ মহাথেরোকে শুনানির নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু ৪ আগস্ট শুনানির ধার্য্যকৃত দিনে তিনি উপস্থিত হননি। সার্বিক বিবেচনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত হয়। তাই আজ তার বিরুদ্ধে কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল্লাহ আল মতিন বাদী হয়ে বায়েজিদ থানায় মামলা দায়ের করেন।
অপরদিকে নগরের বায়েজিদ থানার মাঝেরঘোনা এলাকায় অনুনোমোদিতভাবে পাহাড় কেটে ‘জুম্ম চাদিগাং সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার’ নামক বৌদ্ধ বিহারের স্থাপনা নির্মাণের দায়ে উপানন্দ মহাথেরো এবং প্রনয়ন চাকমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত ৩১ জুলাই পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন কালে দেখতে পান, পাহাড় কেটে ‘জুম্ম চাদিগাং সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার’ নামক একটি বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করা হয়েছে। ৩০০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত পাহাড়ের চূড়া কেটে বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করা হয়েছে। পরিদর্শনকালে একটি একতলা বিশিষ্ট পাকা স্থাপনা দেখা যায়। এ স্থাপনাটি ছাড়াও এর সামনে সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড় কাটা হয়েছে। সর্বমোট ৬০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কেটে পরিবেশ ও প্রতিবেশ ব্যবস্থার অপূরণীয় ক্ষতিসাধন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের তদন্তে জানা যায়, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার খলিল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক উপানন্দ মহাথেরোর দিক নির্দেশনায় প্রনয়ন চাকমা পাহাড় কাটার জন্য পার্বত্য এলাকা হতে শ্রমিক এনে পাহাড় কেটেছেন। এছাড়া পাহাড় কাটার জন্য কোনরূপ অনুমতি নেননি। এ পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকে নোটিশ দেওয়া হয়। ৪ আগস্টের শুনানিতে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর আজ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মতিন বাদী হয়ে উপানন্দ মহাথেরো এবং প্রনয়ন চাকমার বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় মামলা দায়ের করেন।
কেএম/আইএসএইচ