সাইবার অপরাধের শিকার হওয়ার পরও মাত্র ৫৩.২৭ শতাংশ ভুক্তভোগী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে আগ্রহী। বাকি ৪৫.৭৩ শতাংশ ভুক্তভোগী আইনি সহায়তায় অনীহা প্রকাশ করছেন।

অনীহার নেপথ্যে কারণ, কেউ কেউ গোপনীয়তা রক্ষা করতে চান বলে আইনি ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী নন। অনেক ভুক্তভোগী আবার সামাজিক ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য, কেউ উল্টো হয়রানির ভয়ে আইনি সহায়তায় আগ্রহ দেখান না।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিসিএ ফাউন্ডেশন) ‘বাংলাদেশ সাইবার অপরাধ প্রবণতা-২০২২’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

শনিবার (১৩ আগস্ট) বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ গবেষণা প্রতিবেদন তুলে ধরেন গবেষণা দলের প্রধান ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মনিরা নাজমী জাহান। গবেষণায় পৃষ্ঠপোষকতা করেছে প্রযুক্তি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সাইবার প্যারাডাইজ লিমিটেড।

সিসিএ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরে গবেষক দলের প্রধান ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার মনিরা নাজমী জাহান বলেন, ১৯৯ জন ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাত্র ৫৩ জন সমস্যা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে অভিযোগ করেছেন। এটা মোট ভুক্তভোগীর মাত্র ২৬.৬ শতাংশ, যা ২০২১ এর পরিসংখানের তুলনায় মাত্র ৫.১৭ শতাংশ বেশি।

আরও পড়ুন: সাইবার অপরাধ রোধে দরকার আঞ্চলিক সহযোগিতা : আইজিপি

সমস্যা নিয়ে পুরুষ অভিযোগকারীর ১৫.৫৮ শতাংশ আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারস্থ হয়েছেন এবং ২৭.৬৪ শতাংশ হননি। পুরুষ অভিযোগকারীদের তুলনায় নারী অভিযোগকারীর সংখ্যা তুলনামূলক কম। নারী ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাত্র ১১.০৬ শতাংশ সমস্যা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয়েছেন এবং ৪৫.৭৩ শতাংশ আইনের আশ্রয় নিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েও আশানুরূপ ফল পাননি ৫৫.২৭ শতাংশ ভুক্তভোগী। ৫৫.২৭ শতাংশ ভুক্তভোগী অভিযোগের পর প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল পাননি। অভিযোগকারীদের মধ্যে মাত্র ৭.০৪ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয়ে আশানুরূপ ফল পেয়েছেন।

২০২১ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, অভিযোগের পর আশানুরূপ ফল পেয়েছেন মোট ভুক্তভোগীর ২২.২২ শতাংশ, যা ২০২২ সালের পরিসংখ্যানের তুলনায় ১৫.১৮ শতাংশ বেশি। এবারের প্রতিবেদনে প্রত্যাশিত ফল পাওয়ার পরিমাণ অনেকাংশে কমেছে।

সাইবার অপরাধের শিকার হয়েও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতে কেন ভুক্তভোগীদের অনীহা?

প্রাপ্ত উপাত্ত বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের আইনি ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণের মধ্যে ভিন্নতা দেখা গেছে। বিষয়টিকে গোপন রাখতে আইনি ব্যবস্থা নেয়নি সর্বোচ্চ ২১ শতাংশ ভুক্তভোগী। এছাড়া ১৭ শতাংশ ভুক্তভোগী সামাজিক ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য, ১৭ শতাংশ আইনি ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো হয়রানি পোহাতে হবে, ১৭ শতাংশ অভিযোগ করেও কোনো লাভ হবে না ভেবে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

তবে আশঙ্কাজনক তথ্য হলো, অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো পদক্ষেপ নিতে সাহস করেননি ৭ শতাংশ ভুক্তভোগী। অন্যদিকে ২ শতাংশ ভুক্তভোগী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন আছে তা মনেই করেননি।

সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় সিসিএ ফাউন্ডেশনের আট দফা সুপারিশ

১. ব্যাপকভাবে সাইবার সচেতনতামূলক কার্যক্রম,

২. জাতীয় বাজেটে সাইবার সচেতনতায় গুরুত্ব দেওয়া,

৩. বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সিএসআরে সাইবার সচেতনতা বাধ্যতামূলক করা,

৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাইবার পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা,

৫. সাইবার স্বাক্ষরতা বৃদ্ধি,

৬. সচেতনতামূলক কাজে রাজনৈতিক জনশক্তির সঠিক ব্যবহার,

৭. গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার ও

৮. অংশীজনদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে সুস্থ সাইবার সংস্কৃতি গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে আলোচকদের মধ্যে ছিলেন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির প্রেসিডেন্ট মো. ইমদাদুল হক, প্রযুক্তিবিদদের আন্তর্জাতিক সংগঠন আইসাকা ঢাকা চ্যাপ্টারের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন ও ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সুলতানা ইশরাত জাহান।

জেইউ/এসএসএইচ