আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর ঘরের পাহারায় ছিল তারাই বেইমানি করেছে। সে কারণেই তারা ঘরে ঢুকতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে যদি কোনো আন্দোলন হতো অপজিশন পার্টি থেকে, তাহলেও মানা যেত। ফলে এটাকে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড বলা যাবে না। এটা ষড়যন্ত্রমূলক হত্যাকাণ্ড।’

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুর ১২টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে সম্প্রীতি বাংলাদেশ আয়োজিত ‘বাঙালির শোকের শ্রাবণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আনিসুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একটা অবিচ্ছেদ্য এবং যারা তাকে হত্যা করেছে, তারা বুঝতে পেরেছিল যে ব্যর্থ রাষ্ট্র তারা করতে চেয়েছে। যদি তার পরিবারের এক ফোটা রক্ত থাকে তাহলে সেটা তারা করতে পারবে না। এ থেকেই বোঝা যায় এটি পূর্বপরিকল্পিত, ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা। বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবে— এটা কেউ ভাবতেও পারেনি। বঙ্গবন্ধু নিজেকে সাধারণ মানুষ ভাবতেন। কিন্তু তিনি মোটেও সাধারণ মানুষ ছিলেন না। তিনি বিশ্ব নেতৃত্বে স্থান করে নিয়েছিলেন, সাধারণ মানুষের নেতৃত্ব দিয়ে।’

জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেন, ‘জিয়াউর রহমান তো শুরুই করেছিল শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে। তিনি ছিলেন রাজাকার নম্বর ওয়ান। এছাড়াও তার মন্ত্রিসভার অনেকেই আইয়ুব খানের মন্ত্রী ছিলেন। এই গোষ্ঠীর ধারাটা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যেই জিয়াউর রহমান দেশ শাসন শুরু করেছিলেন।’

আরও পড়ুন: ‘১৫ আগস্ট গণমানুষের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করেছিল ঘাতকরা’

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত কমিশন অচিরেই হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা কমিশনের রূপরেখা তৈরি করেছি। ২০১৯ সালে যখন প্ল্যান করলাম, তখন করোনার আক্রমণ শুরু হলো। এটার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু কন্যা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এক্ষেত্রে তার আদেশ শিরোধার্য। তিনি হয়ত পরিমার্জন করবেন, সেজন্য এর আগে আমি এটি জনসম্মুখে আনতে চাই না।’

আনিসুল হক বলেন, ‘জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক চেয়ারম্যানের কাছে কিছু মানবাধিকার কর্মী বলেছে, বাংলাদেশ নাকি পুলিশ স্টেট। অথচ এরা টকশোতে যায়, তারা অসভ্য ল্যাংগুয়েজ পর্যন্ত ব্যবহার করে। আমরা বাধা দেই না। এটাই বাকস্বাধীনতা। এটাই গণমাধ্যমের স্বাধীনতা।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘আমরা আত্মতৃপ্তির জন্য বলে থাকি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা কি তাই? বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের ঘটনায় অত্যন্ত শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। অনেক শক্তিশালী লোকের নাম চলে আসবে তদন্তে। খেয়াল রাখতে হবে এমন কমিটি গঠন করতে হবে, যারা চোখ রাঙানোকে উপেক্ষা করতে পারবে।’

বিএনপি সরকার ক্ষমতায় এসে এই হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত সব তথ্য গায়েব করে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এগুলো তো খুঁজে বের করা চাট্টিখানি কথা নয়। সেদিন শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল তা নয়, তার আদর্শকেও হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা একটি গণহত্যার শামিল। এই হত্যাকাণ্ড তো হঠাৎ করে ঘটেনি। এর একটি বিশাল প্রেক্ষাপট ছিল। সেই গোষ্ঠী এখনও এ দেশে রাজনীতি করছে। সেই গোষ্ঠী এখনও সজাগ রয়েছে। পাকিস্তানিরা বলেছিল, ৭১’ এর পরাজয়ের প্রতিশোধ তারা নেবে। সে রূপরেখা ধরেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে।’

বিশেষ অতিথি সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু যখন ছাড়া পেলেন কারাগার থেকে, তিনি লন্ডন পৌঁছালেন, সেখানে তিনি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তিনি এ দেশের মানুষকে ভালোবাসতেন, আর ভালোবেসেই তাকে জীবন দিতে হয়েছিল।’

সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার, সাবেক রাষ্ট্রদূত এ কে এম আতিকুর রহমান প্রমুখ।

আইবি/এসএসএইচ