যুবলীগ দক্ষিণের সাবেক সভাপতি সম্রাটের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সহসভাপতি এনামুল হক আরমান সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে স্যান্ডস ও রিসোর্টস ওয়ার্ল্ড সেন্টোসা নামে ২টি ক্যাসিনোতে জুয়া খেলে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয় করেন।

২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় সিঙ্গাপুরে গিয়ে ওই টাকাসহ মোট সাড়ে ৬ কোটি টাকা খরচ করার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। যদিও সিঙ্গাপুরে এ বিষয়ে একাধিক মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসটেন্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠালে এর জবাব পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে। সম্প্রতি আদালতে দাখিল করা চার্জশিট (অভিযোগপত্র) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন : ঝিমিয়ে পড়েছে ২২ এমপির দুর্নীতির অনুসন্ধান

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর আরমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল দুদক। ওই মামলায় তার বিরুদ্ধে ২ কোটি ৫ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। যদিও চার্জশিট অবৈধ সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৬ গুণের বেশি।

চার্জশিটে সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের মেরিনা বে স্যান্ডস ও রিসোর্টস ওয়ার্ল্ড সেন্টোসা নামের ২টি ক্যাসিনোতে ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩০০ ও ২ লাখ ৯৫ হাজার ৩০ সিঙ্গাপুরী ডলার খরচ করেন। এছাড়া সিঙ্গাপুরে গিয়ে ১ লাখ ২১ হাজার ১৮৪ সিঙ্গাপুরী ডলারে একটি রোলেক্স ঘড়ি ক্রয় করেন। সব মিলিয়ে মোট ১০ লাখ ৬৯ হাজার ৫১৪ সিঙ্গাপুর ডলার বা ৬ কোটি ৫৬ লাখ ২৫ হাজার ৩৭৯ টাকা (প্রতি ডলার ৬১.৩৬টাকা ধরে) বিদেশে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। যদিও ওই অর্থের বিষয় সুনির্দিষ্ট তথ্য জানতে ও পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে এমএলআর পাঠালেও কোনো জবাব পায়নি দুদক।

আরও পড়ুন : পরীক্ষায় ফেল, তারপরও বৈজ্ঞানিক সহকারী তারা

অন্যদিকে তদন্তে আরমানের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়,  ক্যাসিনো সংক্রান্ত মামলায় আসামি মাে. এনামুল হক (আরমান) কর্তৃক বিভিন্ন অবৈধ পন্থায় জ্ঞাত আয়ের সহিত অসঙ্গতিপূর্ণ ১২ কোটি ৪২ লাখ ৫৪ হাজার ৪২৮ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরােধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), ৪(৩) ধারায়  অভিযোগপত্র (চার্জশীট) দাখিল করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণে যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের সহযোগী আরমান। ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির টাকার বড় অংশ আরমানের কাছে রাখতেন সম্রাট। ‘লাগেজ পার্টি’ থেকে যুবলীগ, ক্যাসিনো ও সিনেমা প্রযোজক হয়ে আরমান দাপিয়ে বেড়িয়েছেন সব জায়গা।

আরও পড়ুন : তিন দেশে ৭৮ লাখ টাকা পাচার করেছেন ক্যাসিনো সাঈদ

নব্বইয়ের দশকে বিদেশ থেকে ‘লাগেজ পার্টির’ আনা ইলেকট্রনিক পণ্য বায়তুল মোকাররম এলাকার দোকানে দোকানে বিক্রি করতেন। পরে নিজেই লাগেজ পার্টির ব্যবসায় যুক্ত হন। ২০১৩ সালে যুবলীগের পদ পেয়ে অল্প সময়ে গড়ে তোলেন বিত্তবৈভব। জুয়া-ক্যাসিনোর টাকায় নামেন সিনেমা প্রযোজনায়ও।

সম্রাটের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগের সুবাদেই ২০১৩ সালে যুবলীগের মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতির পদ পান আরমান। সম্রাটের ছত্রছায়ায় ক্লাব পাড়ার ক্যাসিনো ও জুয়া-বাণিজ্যের অন্যতম নিয়ন্ত্রকে পরিণত হন আরমান। তিনিই সম্রাটকে ক্যাসিনো ব্যবসায় আগ্রহী করেন বলে প্রচার আছে। সম্রাটের হয়ে পুরো ক্যাসিনো ব্যবসা দেখভালের দায়িত্ব পালন করতেন আরমান। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে সম্রাটের সঙ্গে গ্রেপ্তার হন আরমান।

আরএম/এসকেডি