খাদ্য খাতে ১৫৩টি দেশের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮১ শতাংশ। যার ফলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য ঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মুদ্রাস্ফীতি অব্যাহত রয়েছে। মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতির ফলে ধনী দেশগুলোতেও খাদ্যের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। 

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় ওয়াশিংটন থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

সংস্থাটির দাবি, গত দুই সপ্তাহে কৃষি, খাদ্যশস্য ও রপ্তানি মূল্য সূচকগুলো স্থিতিশীল ছিল। তবে কৃষি ও খাদ্যশস্যের মূল্য সূচক গত দুই সপ্তাহের তুলনায় এক শতাংশ বেশি। সারাবিশ্বে দেশীয় খাদ্য মূল্যের মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। প্রায় সব নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাবে ধনী দেশগুলোতেও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে।

>> বাড়ছে রেমিট্যান্স, কমছে আমদানি; স্বস্তিতে ডলার

বিশ্বব্যাংক জানায়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ চললেও বর্তমানে ইউক্রেন থেকে সারাবিশ্বে খাদ্য রপ্তানি শুরু হয়েছে। তবে এতে করেও খাদ্য সংকট কাটছে না। বিশ্বে খাদ্য ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে মুদ্রাস্ফীতি অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাব ধনী দেশগুলোতেও খাদ্যের দাম বাড়ছে। খাদ্যের অধিক দামের কারণে বিশ্বের কয়েকটি দেশ বিপাকে পড়েছে। ফলে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সারের মূল্য কমানোসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রকৃত অর্থে বিশ্বে ১৫৩টি দেশে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮১ শতাংশ। খাদ্য খাতের মূল্যস্ফীতির কারণে সামগ্রিকভাবে অন্যান্য চাহিদা পূরণে হিমশিম খাচ্ছে এসব দেশে জনগোষ্ঠীরা।

বিশ্বব্যাংক জানায়, বিশ্বে খাদ্য সংকট মোকাবিলায় বিপাকে পড়া দেশগুলোর উচিত বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা বা সারের ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা। সার ব্যবহার করতে হবে আরও দক্ষভাবে। কৃষকদের উপযুক্ত প্রণোদনা দিতে হবে ফলে অতিরিক্ত শস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। কৃষিতে সর্বোত্তম ও নতুন প্রযুক্তির সংযোজন করতে হবে। এর ফলে উৎপাদন বাড়বে। প্রথম ইউক্রেনীয় শস্যের চালান চলছে কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তার জন্য চ্যালেঞ্জগুলো রয়ে গেছে। হঠাৎ করেই ভুট্টা ও গমের দাম ২ শতাংশ বেশি হওয়ার পাশাপাশি চালের দাম বেশি হয়েছে ৬ শতাংশ। বিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমলেও খাদ্য খাতে এখনো প্রভাব পড়েনি বলে জানায় বিশ্বব্যাংক।

>> যুক্তরাজ্যে ক্রেডিট কার্ডের ঋণ ১৭ বছরের সর্বোচ্চ 

সংস্থাটি আরও জানায়, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুলাই মাস সময়ে প্রায় সমস্ত নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশ উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কবলে পড়েছে। খাদ্য খাতে নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে ৯২ দশমিক ৯, নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে ৯২ দশমিক ৭ এবং উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ৮৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। পৃথিবীর সব দেশেই এই সময়ে গড় জাতীয় মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের ওপরে দেখা গেছে। অনেক দেশ দ্বিগুণ মুদ্রাস্ফীতির সম্মুখীন হয়েছে। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতিসহ উচ্চ আয়ের দেশগুলোর শেয়ারও বেড়েছে তীব্রভাবে। প্রায় ৮৩ শতাংশ উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতির সম্মুখীন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ আফ্রিকায়, উত্তর আমেরিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া।

বিশ্বব্যাংক আরও জানায়, আন্তর্জাতিকভাবে বাজারে গম, ভুট্টা, চাল ও সয়াবিন তেল প্রভাব ফেলেছে। উত্তর গোলার্ধে, শীতকালীন ফসল গমের চাষ শুরু হয়েছে কিন্তু গরম, শুষ্ক আবহাওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন সীমিত হয়েছে। শুষ্ক অবস্থায় আর্জেন্টিনায় বপন বাধাগ্রস্ত করেছে। ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক বাজারের ভয় কাজ করছে। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলে ফসল কাটা অব্যাহত আছে, কিন্তু খরার কারণে ফলন কমে গেছে বলে জানায় বিশ্বব্যাংক।

এসআর/ওএফ