কয়েকদিন আগের ঘটনা, রাজধানীর গুলশান এলাকার ১০৩ নম্বর রোড দিয়ে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিলেন একজন রিকশাচালক। চলতি পথে রাস্তার পাশে দেখতে পেলেন একটি মোবাইল ফোন পড়ে আছে। প্রযুক্তির ‘বিস্ময়’ আইফোনোর সর্বাধুনিক ম্যাক্সপ্রো মডেলের ফোনটিতে খুব বেশি চার্জ ছিল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফোনটি বন্ধ হয়ে যাবে বুঝতে পারছিলেন রিকশাচালক আমিনুল ইসলাম। এই অবস্থায় ফোনটি নিয়ে কি করবেন চিন্তায় পড়ে গেলেন তিনি।

অপেক্ষা শুরু করলেন কেউ এই ফোনে কল দেয় কি না। এমন অপেক্ষার মধ্যেই চার্জ শেষ হয়ে ফোনটি বন্ধ হয়ে গেল। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, এই ফোনের মালিককে যেভাবেই হোক খুঁজে বের করবেন এবং ফোনটি ফেরত দিয়ে দেবেন। কিন্তু চার্জ ফুরিয়ে ফোনটি তো বন্ধ। তাই আমিনুল ইসলাম গেলেন একটি মোবাইল সরঞ্জামের দোকানে, চাইলেন কুড়িয়ে পাওয়া মোবাইলের চার্জার। কিন্তু ফোনটির চার্জার পেলেন না। উপায় না পেয়ে আইফোনের মধ্যে থাকা সিম কার্ডটি খুলে নিজের ফোনে নিলেন।

এরপর অপেক্ষা করতে থাকলেন কখন এই নম্বরে ফোন আসে। হঠাৎ একটি কল পেলেন তিনি। যিনি কল করেছেন তিনি ওই ফোনের মূল মালিককে চাইছিলেন। রিকশাচালক তখন অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে জানালেন তিনি এই ফোনটি রাস্তায় পেয়েছেন। মূল মালিককে এই নম্বরে ফোন করতে বললেন।

আরও পড়ুন>> রাস্তায় পাওয়া ৫ লাখ টাকা ফিরিয়ে দিতে মাইকিং করছেন যুবক

পরে মূল মালিকের পক্ষ থেকে ফোন করে রিকশাচালক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলা হলো এবং একটি ঠিকানা দিয়ে ফোনটি নিয়ে সেখানে যেতে বলা হলো। ঠিকানা অনুযায়ী রিকশাচালক আইফোনের মূল মালিকের বাসায় গিয়ে ফোনটি পৌঁছে দেন।

এতো দামি ফোন হাতে পেয়েও লোভ না করে রিকশাচালক সেটি ফেরত দেওয়ার এমন বিরল ঘটনা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম কানে আসে। যে কারণে রিকশাচালকের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি গুলশান ডিএনসিসি নগরভবনে ডেকে পাঠান।

রোববার (২১ আগস্ট) দুপুরে নগর ভবনের সেমিনার রুমে একটি বৈঠক শেষে সেই রিকশাচালক আমিনুল ইসলামের হাতে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার হিসেবে তুলে দেন। এসময় উপস্থিত সবাই কড়তালির মাধ্যমে দাঁড়িয়ে ওই রিকশাচালকের সততার প্রতি সম্মান জানান।

ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, একটা মানুষের মধ্যে কতটা সততা থাকলে দামি ফোনের প্রতি লোভ না করে এভাবে ফেরত দিতে পারেন। আমাদের সমাজের এমন সৎ নির্লোভ মানুষের খুব প্রয়োজন। তাই আমরা তাকে সম্মান দেখিয়ে পুরস্কৃত করছি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানান, রিকশাচালকের এমন কাজে ডিএনসিসির মেয়র খুব খুশি হয়েছেন। আসলেই এই সময়ে এমন লোভহীন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাই মেয়র নিজের ফান্ড থেকে রিকশাচালক আমিনুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার হিসেবে তুলে দিয়েছেন।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রিকশাচালক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার বাসা বাড্ডা এলাকায় হলেও আমি গুলশানের ভেতরে রিকশা চালাই। কিছুদিন আগে ১০৩ নম্বর রোডে আমি এই ফোনটি কুড়িয়ে পাওয়ার পর মূল মালিককে ফেরত দেওয়াই ছিল আমার লক্ষ্য। ফোন পাওয়ার পর আমার মধ্যে কোনো লোভ কাজ করেনি, যে কারণে আমি নিজে গিয়ে ফেরত দিয়ে আসি। সেই পুরস্কার আর সম্মান আমি আজ পেয়ে গেলাম। মেয়র নিজে হাতে আমাকে পুরস্কার হিসেবে ৫০ হাজার টাকা তুলে দিলেন। সম্মান নিতে এখানে আমি আমন্ত্রিত হবো তা কখনই ভাবতে পারিনি।

এএসএস/জেডএস