আদিবাসী নারীদের অধিকার আদায়ে তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে বন্ধ করতে হবে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়। এগুলো করা গেলে নারীরা আরও বেশি সচেতন হবে বলে মত দিয়েছেন বক্তারা।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে আদিবাসী নারীদের মানবাধিকার সুরক্ষা : সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে মোহাম্মদপুরের সিবিসিবি সেন্টারে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি  ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, আদিবাসীদের ভাষা, সংস্কৃতি, বৈচিত্র্যতা এ সবকিছুই আমাদের সম্পদ। তবে নানা কারণে এই সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সহিংসতা পাহাড় সমতল সব জায়গায় সমান তালে চলছে।

তিনি বলেন, আদিবাসী গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতির মতো নিজস্ব কিছু আইন প্রচলিত রয়েছে। তাই আদিবাসীদের যথাযথ অধিকার রক্ষায় তাদের আইনের সাথে প্রচলিত আইনের সামঞ্জস্যতা করতে হবে। পাহাড়ি নারীদের সংকট নিরসনে তাদের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে, তারা যদি নিজেদের শক্তিকে সংগঠিত করে মূল ধারার আন্দোলনের সাথে যুক্ত করে তাহলে তাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন আরও সহজ হবে।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আদিবাসী নারীদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। তারা এ মাটিরই একটি অংশ। সংবিধানে সকল নারী-পুরুষের সমঅধিকারের কথা উল্লেখ থাকলেও স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও সেই সমতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন কারণে আদিবাসীদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে যার ফলে আদিবাসী নারীরা আরও প্রতিবন্ধকতা, বৈষম্য ও সহিংসতার শিকার।

আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া খাতুন শান্তি বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জন্মলগ্ন থেকে বিশ্বাস করে নারীদের কোন জাতিবেদ নেই, সকল নারীই সমান এবং সবাই মানুষ। আদিবাসী নারীরা যুগের পর যুগ ধরে প্রতিনিয়তই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় সংগ্রাম করে আসছে। তাদের এই সংগ্রামকে নারী আন্দোলনের মূল ধারায়, মূল স্রোতে যুক্ত করে নারী আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী ও বেগবান করতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে কেবল অদিবাসী নারী নয় সকল নারীই নির্যাতন নিপীড়নের শিকার। আদিবাসীদের নিজস্ব ভাষায় শোষণ, ধর্ষণ এ ধরনের কোন শব্দ বা প্রতিশব্দ নেই কিন্তু তবুও বর্তমানে তারা প্রতিনিয়ত এসবের শিকার। বেশিরভাগ আদিবাসী সমাজ মূলত মাতৃপ্রধান এবং তাদের সমাজে মেয়েরা সামাজিক ও সংস্কৃতির কারণে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারে, তাদের সমাজে নারীরা নির্যাতনের নিপীড়নের শিকার হয় না। তাদের নিজস্ব সমাজ সংস্কৃতিতে তারা শোষিত নির্যাতিত না হলেও সমতলের ক্ষমতাশীল মানুষ, দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্রের দ্বারা নির্যাতন নিপীড়নের শিকার।

এএজে/এসকেডি