মজুরি বোর্ড গঠন করে প্রাইভেটকার-মাইক্রোসহ সব হালকা যানবাহন চালকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করার দাবি জানিয়েছে ঢাকা জেলা ট্যাক্সি, ট্যাক্সি কার, অটোটেম্পু, অটোরিকশা চালক শ্রমিক ইউনিয়ন। শুক্রবার (২৬ আগস্ট) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

তাদের অন্য দাবিগুলো হলো— নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্রসহ শ্রম আইন স্বীকৃত অধিকারগুলো প্রাইভেটকার চালকদের জন্য নিশ্চিত করা, ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভিত্তিতে হালকা যানবাহন চালকদের রেশনসহ কল্যাণ সুবিধা নিশ্চিত করা এবং প্রাইভেটকার-হালকা যানবাহন চালকদের আইনানুগ পাওনা আদায়সহ পরিবহন শ্রমিকদের জন্য শ্রম আইন বাস্তবায়নে শ্রম দপ্তরের কার্যকর ভূমিকা পালন।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল বলেন, ঢাকা শহরে পাঁচ লক্ষাধিক হালকা যানবাহন চালক তাদের রক্ত পানি করে, ঘাম ঝরিয়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রাজধানীতে অবস্থান করেও এই শ্রমজীবী মানুষরা দৈনিক নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা, সাপ্তাহিক-বাৎসরিক-অর্জিত ছুটি, চাকরির নিরাপত্তা কিংবা ক্ষতিপূরণসহ শ্রম আইন স্বীকৃত সব শ্রম অধিকার থেকে বঞ্চিত। ধনাঢ্য মালিকের অন্যায় থেকে দরিদ্র প্রাইভেটকার চালককে রক্ষার জন্য রাষ্ট্র দায়িত্ব নেয় না।

আরও পড়ুন: কারিগরি শিক্ষকদের পদোন্নতির আগে বিসিএস থেকে নিয়োগ বন্ধ রাখতে হবে

তিনি বলেন, অভাবের সুযোগ নিয়ে একজন প্রাইভেটকার চালককে নামমাত্র বেতনের বিনিময়ে কোনো রকম ছুটি ছাড়া দৈনিক ১৪/১৬ ঘণ্টা কাজ করার অমানবিক শর্তে চাকরিতে নেয় মালিকরা। আর দিনের কাজ শেষে পরের দিন কাজে যোগ দেওয়ার নিশ্চয়তা থাকে না, কৃতকাজের মজুরি পাবে কি না তার নিশ্চয়তা থাকে না, চাকরি অবসানে প্রাপ্য সুবিধা আদায় করার জন্য রাষ্ট্র কোনো দায়িত্ব নেয় না। অর্থাৎ রাষ্ট্র অলিখিতভাবে প্রাইভেটকার চালকদের আধুনিক দাস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে মনে হয়।

বক্তারা বলেন, ভদ্রলোকের মুখোশধারী প্রতারক মালিকরা যখন শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা আত্মসাৎ করার চেষ্টা করে, পুলিশের তত্বাবধানে সালিশের সিদ্ধান্তও অমান্য করে এবং তারপরও শাস্তি পায় না। চালকের পাওনা আদায় করে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রের কোনো সংস্থা দায়িত্ব নেয় না তখন গাড়িচালকরা রাষ্ট্রের আইন মানবে কেন? তারা অবিলম্বে প্রাইভেটকার চালকসহ যেসব শ্রমজীবীকে নিয়োগপত্র প্রদান করা হয় না তাদের আইনানুগ পাওনা আদায়সহ শ্রম অধিকার বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা নির্দিষ্ট করার দাবি জানান।

তারা বলেন, বাবার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় এবং প্রশাসনিক ক্ষমতাবান আত্মীয়দের নাম ব্যবহার করে পাইওনিয়ার ডেনিমের উপ মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেনের মতো যারা শ্রমিকের মজুরি আত্মসাতের প্রচেষ্টা করছে, আইন অমান্য করছে, প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছে সেই মালিকরূপী প্রতারকদের গ্রেপ্তার করে শ্রমিকের পাওনা আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অগ্নিমূল্যেও বাজারে দরকষাকষিতে দুর্বলপক্ষ হালকাযান চালকরা নামমাত্র মজুরিতে চাকরি করে মানবেতর জীবনযাপন করছে। চালকের মানসিক চাপমুক্ত জীবন সড়কে শৃঙ্খলার অন্যতম প্রধান শর্ত। তাই অবিলম্বে মজুরি বোর্ড গঠন করে প্রাইভেটকার চালকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ এবং শ্রম আইন স্বীকৃত সকল শ্রম অধিকার বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, দীর্ঘদিনের বঞ্চনায় সঞ্চিত ক্ষোভ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উৎসাহিত করে। সেই পরিস্থিতি নিশ্চয় কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়।

নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শ্রম আইন বা সড়ক পরিবহন আইন থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্র গাড়িচালকদের নিয়োগপত্র আদায় করে দিতে পারে না আবার নিয়োগপত্র-পরিচয়পত্র না থাকার অজুহাতে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করে। এই দ্বিচারিতা বন্ধ করে রাষ্ট্রীয় যেকোনো ব্যবস্থাপনায় ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভিত্তিতে সুরক্ষা দেওয়া এবং পেশাদার লাইসেন্সের সঙ্গে ডোপ টেস্টের মতো হয়রানিমূলক সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান তারা।

ইউনিয়নের সহ সভাপতি বিরেশ চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সহ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক, দপ্তর সম্পাদক রুবেল মিয়া, অর্থ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবলু, আজিজুর রহমান প্রমুখ।

আইবি/এসএসএইচ