স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশে নারী উন্নয়ন ও অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। নারীরা আজ শুধু রান্নাঘরে সীমাবদ্ধ নেই, তারা পৌঁছে গেছেন বিমানের ককপিট থেকে পর্বতশৃঙ্গে। রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ প্রায় সব ক্ষেত্রেই নারীদের অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে দেশে নারী শিক্ষায় সফলতা এখন ঈর্ষণীয়। কিন্তু লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে তারা এখনও অনেক পিছিয়ে।

অধিকার আর অংশগ্রহণের প্রশ্নে নারী পুরুষের ব্যবধান ঘোচানোর ক্ষেত্রে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সূচকে এক বছরে বাংলাদেশের অবস্থানের অবনতি হয়েছে। তবে এই অবস্থান আবার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে ভালো।

লিঙ্গ সমতা নিয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সবশেষ ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ’ রিপোর্ট বলছে, বর্তমানে ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭১তম। এর বাইরে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নবম, অর্থনৈতিক অংশগ্রহণের দিক দিয়ে ১৪১তম, শিক্ষায় ১২৩তম, স্বাস্থ্য সেবাপ্রাপ্তির দিক দিয়ে ১২৯তম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। এসবের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশগ্রহণ ও স্বাস্থ্য সেবাপ্রাপ্তির দিক দিয়ে এগোলেও পিছিয়েছে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, শিক্ষাসহ সামগ্রিক লিঙ্গ সমতায়।

দেশে জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন এবং নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ সালের প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন এবং নারীর সংখ্যা ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। সে হিসাবে পুরুষের চেয়ে নারী বেশি ১৬ লাখ ৩৪ হাজার ৩৮২ জন। গত দশ বছরে দেশে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

বিবিএসের পরিসংখ্যান বলছে, নারী-পুরুষ লিঙ্গভিত্তিক বিবেচনায় পুরুষের সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, নারী শিক্ষার হার ৭২ দশমিক ৮২ শতাংশ।

আরও পড়ুন : বাল্যবিবাহ উপসর্গ মাত্র, মূল ব্যাধি পিতৃতন্ত্র

গত পাঁচ বছরে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে এগিয়ে মেয়েরা। পাসের হার, জিপিএ-৫ সবকিছুতেই মেয়েদের আধিপত্য। সংখ্যাগতভাবেও ছাত্রীর সংখ্যা ছাত্রদের চেয়ে বেশি।

গত কয়েক বছরের হিসাবে দেখা গেছে, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী, জেএসসি-জেডিসি ও এসএসসি পরীক্ষায় কেবল অংশগ্রহণেই নয়, সফলতায়ও ছাত্রীদের হার বেশি। বিভিন্ন ধারার আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রফেশনাল, কারিগরিতে নারীর অংশগ্রহণ, টিকে থাকা এবং সফলতার হার বাড়ছে।

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) সবশেষ প্রকাশিত এক সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত দেশে মোট শিক্ষার্থী ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৭ হাজার ৬৩৫ জন। এর মধ্যে ছাত্রী প্রায় ২ কোটির মতো। এটা শতাংশের হিসাবে ৫৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। বর্তমানে প্রাথমিকে মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫১ শতাংশ ছাত্রী। মাধ্যমিক শিক্ষায় আরও এগিয়ে মেয়েরা। এ স্তরে মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ ছাত্রী। এইচএসসি পর্যায়ে ছাত্রী ৫৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। মাদরাসার মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৫ দশমিক ২৬ শতাংশই ছাত্রী। তবে উচ্চশিক্ষা স্তরে কিছুটা পিছিয়ে মেয়েরা। এ স্তরে বর্তমানে ৩৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ ছাত্রী।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক এক জরিপের ফল অনুযায়ী, ৮১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী গণপরিসরে বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হন। ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ কিশোরী ও নারী নিজ পরিবারেই বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষক, সিনিয়র স্টুডেন্ট দ্বারা বিভিন্ন বিরূপ ও অশালীন মন্তব্যের শিকার হয়েছেন। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিরূপ মন্তব্যের শিকার হওয়ার কথা জানান অংশগ্রহণকারীদের ৫৭ শতাংশ। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন ৫৬ শতাংশ, যা তাদের মনে দীর্ঘমেয়াদি ভয়ের সঞ্চার তৈরি করেছে। জরিপে ৩৫ শতাংশ মা–বাবা জানান যৌন হয়রানির ভয় বাল্যবিয়ের অন্যতম কারণ।

৮১ দশমিক ৬ শতাংশ নারী গণপরিসরে বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হন। ৮৬ দশমিক ৮ শতাংশ কিশোরী ও নারী নিজ পরিবারেই বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়েছেন

জরিপে দেখা গেছে, বাবা-মায়েরা তাদের কন্যাসন্তানকে সহিংসতার ভয়ে কোচিংয়ে, স্কুলের পিকনিকে, এমনকি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নিরুৎসাহিত করেন। জরিপ বলছে, মেয়ে ও যুব নারীদের এই ভয় পারিবারিক পরিমণ্ডলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, গণপরিসরে এবং অনলাইনে বিদ্যমান। এসবই সমতা নিশ্চিতের পথে অন্তরায় হিসেবে কাজ করে।

আরও পড়ুন : মুক্তনীলের মুক্ত বিহঙ্গ 

বিবিএস, ব্যানবেইস ও প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের জরিপ বা সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, বর্তমানে ১০০ জন নারীর বিপরীতে পুরুষ ৯৮ জন। আবার প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত অংশগ্রহণ ও ফলাফলে মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু উচ্চ শিক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মেয়েদের অংশগ্রহণ এখনও কম। এর ফলে চাকরির বাজারে পিছিয়ে আছে মেয়েরা। এটি প্রভাব ফেলেছে নারীদের স্বাক্ষরতার হার ও সামগ্রিক লিঙ্গ সমতায়। এছাড়া, অনলাইন-অফলাইনে যৌন হয়রানির ভয়ে শিক্ষাগ্রহণ, চাকরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে সরে আসছে নারীরা। ফলে লিঙ্গ অসমতা বাড়ছে।

নারী-পুরুষ ব্যবধান : বৈশ্বিক সূচকে পিছিয়েছে বাংলাদেশ
২০০৬ সালে প্রথম লিঙ্গ–অসমতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ডব্লিউইএফ। ৬২.৬ শতাংশ স্কোর নিয়ে ওই বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯১তম। ধাপে ধাপে বাংলাদেশ এগোলেও সেই ধারাবাহিকতা রাখতে পারেনি। ২০১৮ সালে ৪৮তম, ২০১৯ সালের প্রতিবেদনটি ডব্লিউইএফ-এর ওয়েবসাইটে নেই, করোনাকালে ২০২০ সালে ৫০তম এবং ২০২১ সালে ১৫ ধাপ নেমে ১৫৬টি দেশের মধ্যে ৬৫তম হয় বাংলাদেশ। এ বছর আরও ছয় ধাপ নেমে হয়েছে ৭১তম।

রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন
রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ ভালো। বৈশ্বিকভাবে নবম স্থানে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অবস্থান বাংলাদেশের পরে—৪৮তম। তবে এ বছর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দুই ধাপ নিচে নেমে গেছে।

১৮ বছর ও তার বেশি বয়সী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ পুরুষ এবং ২৮ দশমিক ০৯ শতাংশ নারী। আর পাঁচ বছরের বেশি বয়সী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে পুরুষ ৩৮ দশমিক ০২ শতাংশ এবং নারী ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।
কোটেশন

অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ
অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততায় নারী ও পুরুষের সংখ্যা কমেছে এ বছর। নারীর সংখ্যা বেশি কমেছে। তবে পুরুষের চেয়ে নারীর উপার্জন বেড়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে সমতা বেড়েছে। গত বছর অবস্থান ছিল ১৪৭তম। এবার ছয় ধাপ এগিয়ে ১৪১তম অবস্থানে উঠে এসেছে। তবে, ২০২০ সালে ১৪১ তম থেকে ৬ ধাপ পিছিয়েই ১৪৭ তম হয়েছিল বাংলাদেশ।

শিক্ষাক্ষেত্রে নারীর অর্জন
ডব্লিউইএফ-এর এবারের প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে শিক্ষায় সমতার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে কিছুটা অবনতি হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সমতা আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। সব মিলিয়ে শিক্ষায় আগের বছরের তুলনায় দুই ধাপ নেমে অবস্থান হয়েছে ১২৩তম। ২০২০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২০তম।

স্বাস্থ্য সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে নারী
স্বাস্থ্য সেবাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে, এ দিক দিয়ে বাংলাদেশ ১৩৪ থেকে উঠে এসেছে ১২৯তম স্থানে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১৯তম।
 
মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারে নারী
বিবিএসের এবারের জনশুমারি ও গৃহগণনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পাঁচ বছর ও তার বেশি বয়সীদের মধ্যে ৬৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ পুরুষের ও ৪৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ নারীর নিজ ব্যবহারের মোবাইল ফোন রয়েছে। এছাড়া ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সীদের মধ্যে নিজ ব্যবহারের মোবাইল রয়েছে ৮৬ দশমিক ৭২ শতাংশ পুরুষের ও ৫৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ নারীর।

আরও পড়ুন : মেয়েতো কালো

অন্যদিকে দেশের জনগোষ্ঠীর ১৮ বছর ও তার বেশি বয়সী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৪৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ পুরুষ এবং ২৮ দশমিক ০৯ শতাংশ নারী। আর পাঁচ বছরের বেশি বয়সী ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে পুরুষ ৩৮ দশমিক ০২ শতাংশ এবং নারী ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।

জিএসএমএ মোবাইল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২২ থেকে জানা গেছে, দশটি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ লিঙ্গ ব্যবধান রয়েছে।

জিএসএমএ কনজ্যুমার সার্ভে ২০২১ এর ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় ৩৬ শতাংশ পুরুষ ১৯ শতাংশ নারীর বিপরীতে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। বাংলাদেশের প্রায় ৮৪ শতাংশ পুরুষের কাছে একটি মোবাইল ফোন রয়েছে, যেখানে মহিলার সংখ্যা ৬৫ শতাংশ।

জিএসএমএ বাংলাদেশি মহিলা ব্যবহারকারীদের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিনটি শীর্ষ বাধা চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো- স্বাক্ষরতা এবং ডিজিটাল দক্ষতা, সামর্থ্য বা ক্রয়ক্ষমতা এবং নিরাপত্তা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মেয়েদের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ। লিঙ্গ সমতায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় সবার ওপরে থাকলেও এই পরিসংখ্যানে স্বস্তির ঢেকুর তোলার সুযোগ নেই। কারণ গত দুই বছর বাংলাদেশের অবস্থান নিচের দিকে নামছে। এক্ষেত্রে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার যদি এখনই উদ্যোগী হয়, তাহলে খুব দ্রুত লিঙ্গ সমতায় কাক্ষিত পৌঁছানো যাবে।

লিঙ্গ সমতায় বাধা কী?
নারীদের দুর্বল ভাবা, আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি, রাজনৈতিক দলে প্রতিনিধিত্ব কম থাকা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ কম থাকা, সম্পত্তির ভাগের ক্ষেত্রে মেয়েদের বঞ্চিত করা, করোনার কারণে বাল্যবিয়ে ও চাকরি হারানো, শিক্ষাক্ষেত্রে ড্রপ আউট সহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ এখনও লিঙ্গ সমতায় অনেক পেছনে। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের ধাক্কায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারীরা। সরকার ও বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতে যে কঠোর পরিশ্রম করে আসছে তা অনেকটাই পিছিয়ে গেছে করোনার আঘাতে। সহিংসতার পাশাপাশি এর ভয় নষ্ট করছে বহু মেয়ের সম্ভাবনাকে। যা লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতে অন্যতম প্রধান বাধা।

নারীদের প্রতি আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিনা আক্তার বলেন, নারী-পুরুষ একই অফিসে কাজ করলেও মেয়েদের কাজের মূল্যায়ন কম হয়। পদোন্নতির ক্ষেত্রে ছেলে হলে কথা ওঠে না, মেয়ে হলে সবাই বলে— ‘সুন্দরী বলে বসের মন জয় করেছে’। নারী বস হলে অনেক ক্ষেত্রে তাকে না মানার প্রবণতা দেখা দেয়।

তিনি বলেন, করোনায় চাকরি হারানোর ক্ষেত্রে মেয়েদের হার বেশি। তাদের দুর্বল ধরে নেওয়া হয়। সরকারিভাবে লিঙ্গ সমতার জন্য অনেক প্রকল্প হাতে নিলেও বাস্তবায়ন হয় খুব কম। এই অবস্থার পরিবর্তন করতে সচেতনতার দৃষ্টিভঙ্গি লাগবে।

আরও পড়ুন : উচ্চশিক্ষায় বাংলাদেশের মেয়েরা পিছিয়ে কেন? 

ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার (জেন্ডার) তাহমিনা হক বলেন, কন্যাশিশুদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তাদের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে ও সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রাখে। এর ফলে কন্যা শিশুরা যখন পূর্ণবয়স্ক নারী হন তখন পুরুষের তুলনায় সুচকের অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়েন, যার প্রভাব লিঙ্গ সমতা সুচকে প্রতিফলিত হয়।

প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক (গার্লস রাইটস) কাশফিয়া ফিরোজ বলেন, নারী ও পুরুষের সমতায় অবশ্যই দৃষ্টিভঙ্গি একটি বড় বাধা। আর এই বাধা শুরু হয় একেবারে পরিবার থেকে। যে পরিবেশে একটি শিশু বেড়ে ওঠে সেই পরিবেশেই অনেক সময় দেখা দেয় বৈষম্যমূলক আচরণ। অনেক সময় দেখা যায় ছেলে সন্তানকে যতটা পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হচ্ছে তা মেয়ে সন্তানের ক্ষেত্রে নিশ্চিত করা হয় না।

তিনি বলেন, বাসা থেকে বাইরে পা রাখা মাত্র একজন নারীকে যেই চিন্তা বা ভয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, তা হয়তো একজন পুরুষকে যেতে হয় না। এখনও নাটকে-সিনেমায়-বিজ্ঞাপনে নারীকে উপস্থাপন করা হয় কেয়ারিং কিংবা অসহায় ভূমিকায়। যা প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গিকে আরও পাকাপোক্ত করতে ভূমিকা রাখে।

রাজনৈতিক দলে প্রতিনিধিত্ব কম
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার, শিক্ষামন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক পদে নারী রয়েছেন। কিন্তু সেই সংখ্যা আশানুরূপ নয়। সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে আমরা বিশ্বে ৯২তম অবস্থানে রয়েছি। আর মন্ত্রিসভায় নারীর সংখ্যার দিক থেকে আমাদের অবস্থান ১২৭তম।

২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন (ইসি) রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করে বিধিমালা প্রণয়নের সময় দলগুলোর সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের শর্ত দিয়েছিল। এরপর এক যুগ পার হয়ে গেলেও কোনো দলই সেই শর্ত পূরণের ধারে-কাছে যেতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনকেও এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে দেখা যায়নি।

সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ২৩টি আসনে নারী সংসদ সদস্যরা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ হাজার ৮৪৮ প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৬৯ আসনে স্বতন্ত্রসহ ৬৮ নারী প্রার্থী ছিলেন। আনুপাতিক হারে এই সংখ্যা অনেক কম, তবে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

মূলধারার রাজনীতিতে আসার প্রথম পদক্ষেপ ছাত্র রাজনীতি। সেখানে নারীদের প্রাধান্য নেই বললেই চলে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারীদের অংশগ্রহণ থাকলেও শীর্ষ নেতৃত্বে কাউকে দেখা যায় না। একই অবস্থা বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলেও।

আরও পড়ুন : তুমি অকুণ্ঠিতা

বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) মহাসচিব নূর খান লিটন বলেন, নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ সংকুচিত হয়ে গেছে। অংশগ্রহণের সুযোগ সীমিত হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে যেহেতু নারীদের অবস্থান সংহত হয়েছে, ফলে নারীদের ওপর যদি রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা থাকে এবং রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের মাত্রা যদি বাড়ে, তাহলে একইসঙ্গে নারীদের সব অবস্থার পরিবর্তন আমরা দেখতে পাব।

জাতীয় সংসদের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ বলেন, ছাত্র রাজনীতির শীর্ষ পদে নারীদের নিয়ে যেতে সময় লাগবে। দীর্ঘদিন পুরুষ শাসনের কারণে তারা একটা পর্যায়ে চলে এসেছে। হঠাৎ করে তাদের সরিয়ে দিয়ে নারীদের নেতৃত্বে আনতে কিছুটা সময় লাগছে। নারীদের যখন আমরা সমানে সমান রাজনৈতিক জায়গায় নেব, তখন এটা সম্ভব হবে।

সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ কম
এদেশে সংখ্যার বিচারে এগিয়ে নারীরা। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের বেলায় তারা পিছিয়ে। এটাকে লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাদেকা হালিম।

তিনি বলেন, পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার কারণে আমরা এখনও নারীদের রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন করতে পারছি না। ধর্মভিত্তিক দল ছাড়া আওয়ামী লীগ, বিএনপি সব দলেই মেয়েদের অংশগ্রহণ আছে। কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত নেওয়ার জায়গায় নেই। রাজনৈতিক দলের ২০ শতাংশ নারী। কিন্তু প্রতিটি রাজনৈতিক দলে ৩৩ শতাংশ নারী রাখার বাধ্যবাধকতা আছে। যতক্ষণ পর্যন্ত পিতৃতান্ত্রিকতাকে চ্যালেঞ্জ করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নারীরা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।

আসক মহাসচিব নূর খান লিটন বলেন, আমাদের সামাজিক অবস্থায় নারীরা এখনও অবদমিত। পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ, কোনো ব্যবস্থাতেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নারীদের অবস্থান নেই। ফলে এই জায়গায় যতক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন আনা যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নারীরা প্রকৃতপক্ষে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে না। অর্থাৎ, তাদের অবস্থান সবদিক দিয়ে অগ্রগামী হবে, সেই সুযোগ আর থাকবে না।
 
করোনায় বাল্যবিবাহ, শিক্ষাক্ষেত্রে ড্রপ আউট
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলেই মেয়েদের বাল্য বিবাহ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যৌন হয়রানির ভয়, আর্থিক দূরবস্থাসহ বিভিন্ন কারণে মেয়েরা শিক্ষাগ্রহণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এসব কারণে লিঙ্গ সমতার এমন বেহাল দশা।

আরও পড়ুন : নারী উদ্যোক্তা : বাজেট কেমন হওয়া উচিত?

আসক মহাসচিব নূর খান লিটন বলেন, করোনার কারণে বাল্যবিয়ে, শিক্ষাক্ষেত্রে ড্রপ আউটের সংখ্যা বেশি হচ্ছে। রাষ্ট্রে যখন অর্থনৈতিক দূরবস্থা আসে, তখন প্রধানতম শিকার হয় নারীরা। কোভিড-১৯ নারীদের পিছিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে একটা সূত্র হিসেবে কাজ করেছে। মূলত এসব ক্ষেত্রে সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই জায়গায় জট খুলবে না।

লিঙ্গ সমতার জন্য পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করতে হবে
মালালা ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশি প্রতিনিধি মোশাররফ হোসেন তানসেন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থা কী, সেটা সরকারকে চিহ্নিত করতে হবে। যেটা সরকারি পর্যায়ে এখনও চিহ্নিত হয়নি। আবার শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েদের ড্রপ আউট হচ্ছে, তাদের বাল্যবিয়ে হচ্ছে, এটা স্বীকার করা হচ্ছে না। লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে নারীরা যে পিছিয়ে আছে, সরকার অনেক সময়ই সেটা স্বীকার করতে চায় না। সেজন্য সবার আগে পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি স্বীকার করে নিতে হবে।

তিনি বলেন, গত দুই বছরে বাল্যবিয়ে হয়েছে এবং এর মাত্রা বেশি সেটা চিহ্নিত করতে হলে পরিবার জরিপ করতে হবে। ঘাটতি চিহ্নিত করে সরকারকে মহাপরিকল্পনা করতে হবে। এটি বাস্তবায়নে বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে। সবার অংশগ্রহণও নিশ্চিত করতে হবে। এরপর উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির আওতায় জনসাধারণকে কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করাতে হবে।

সক্রিয় পরিকল্পনা এবং সেগুলোর বাস্তবায়ন করতে হবে
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে সংসদে যে রিজার্ভ সিট আছে, সেখানে আমরা সরাসরি নির্বাচন চাইলাম। সেখানে সরাসরি নির্বাচন না দেওয়া, সবকিছু মিলিয়ে এগুলো নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে। নারীর ক্ষেত্রে আমাদের যে অর্জন, সেগুলো সংরক্ষণ করার একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি তৈরি করতে না পারলে এটা সংরক্ষিত হবে না।

তিনি বলেন, নারীকে সমতায় আনতে হলে কিছু সক্রিয় পরিকল্পনা নিয়ে সেগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা আছে। বাস্তবায়নের ক্ষেত্র সক্রিয় হচ্ছে বলে মনে হয় না। প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে নারী তার যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে যতটুকু পারছে এগোচ্ছে। রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতা আরও বাড়ানো উচিত। তাহলে লিঙ্গ অসমতা দূর হবে। নাহলে আজকে আমরা দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে আছি, আগামীতে হয়তো এই স্থানও হারাবো।

মহিলা পরিষদ সভাপতি বলেন, লিঙ্গ সমতা তৈরি করতে সরকার কতটুকু দায়বদ্ধ? এটাই মূল জায়গা। সরকার পদক্ষেপ না নিলে লিঙ্গ সমতায় পৌঁছাতে পারবে না নারীরা। সেই সঙ্গে নারী আন্দোলন যে সমস্যাগুলো তুলে ধরছে সেগুলোতে দৃষ্টি দিতে হবে। আর নারীকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় আনতে হবে। এগুলো করলে অসমতা আস্তে আস্তে কমানো সম্ভব।

কন্যাশিশুদের প্রতি থাকতে হবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
ইউনিসেফ বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম অফিসার (জেন্ডার) তাহমিনা হক বলেন, কন্যাশিশুদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তাদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়তে ও সুনাগরিক হতে সহায়ক। যখন কন্যা শিশুদের মূল্যায়ন করা হয় তখন তাদের প্রতি পিতামাতা এবং পরিবার বিনিয়োগ করে, তাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়। কন্যাশিশুদের প্রতিভা ও নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়।

আরও পড়ুন : নারীর মানবাধিকার কতটা নিশ্চিত? 

তিনি বলেন, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীশিশুদের প্রতি বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি তাদের উন্নয়নের ও বিকাশের বিভিন্ন সুচকে পিছিয়ে রাখে। তাই ছোটবেলা থেকেই ছেলেশিশু ও কন্যাশিশুদের সমানভাবে মূল্যায়ন করা, কন্যাশিশুদের সম্পদ মনে করা, তাদের প্রতি বিনিয়োগ করা, দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্তিতে সহায়তা করা, বিশেষত কন্যা শিশুদের মধ্যে ক্ষমতায়নের বোধ জাগ্রত করা প্রয়োজন। একইভাবে সমাজে কন্যা শিশুদের প্রতি সামাজিক রীতি আরোপিত বাধাসমূহ, যা তাদের অধিকার প্রাপ্তি ও প্রতিভা বিকাশের অন্তরায় তা দূর করে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির চর্চার মাধ্যমে লিঙ্গ সমতার বৈষম্য কমিয়ে আনা সম্ভব।

সরকারি উদ্যোগের ব্যাপক প্রচারণা করতে হবে
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পরিচালক (গার্লস রাইটস) কাশফিয়া ফিরোজ বলেন, মেয়েদের শিক্ষা নিশ্চিতে সরকারের যেসব উদ্যোগ রয়েছে সেগুলোর আরও ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা জরুরি। মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে উৎসাহিত করতে বাবা-মা’দের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। প্রতি অর্থবছরে জেন্ডার বাজেটে কন্যা-শিশুদের ঝরে পড়া, বাল্যবিয়ে ইত্যাদি সংক্রান্ত যথাযথ তথ্য-উপাত্ত থাকলে নারী-পুরুষের সমতা আনয়নে সরকারি উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন আরও কার্যকরীভাবে করা সম্ভব।

কাশফিয়া ফিরোজ বলেন, আমাদের দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে যুগান্তকারী আইন আছে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আইন বিদ্যমান। কিন্তু সেই আইন কী সহিংসতা পুরোপুরি রোধ করতে পারছে? তাছাড়া, আমাদের বিশ্লেষণে জাতীয় বাজেটে এই আইন বাস্তবায়নের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ এখন পর্যন্ত দেখতে পাইনি।

তিনি আরও বলেন, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে কী করা হচ্ছে, এর কোনো সুস্পষ্ট তথ্য নেই। অথচ সমন্বিত বাজেট পরিকল্পনায় এসব তথ্য-উপাত্ত খুব প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যাশা, আমাদের আইনে এবং জাতীয় বাজেটে এর সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটবে। আমাদের এখনো অনেকটা পথ চলতে হবে এই ভয়কে দূর করতে।

চাকরির বাজারে গরিব মেয়েদেরও প্রাধান্য দিতে হবে
বেসরকারি সংস্থা ফ্রেন্ডশিপের নির্বাহী পরিচালক রুনা খান বলেন, অনেক চাকরির ক্ষেত্রে পুরুষদের প্রাধান্য দেওয়া হয়। সরকারি, বেসরকারি, এনজিওসহ সব ক্ষেত্রেই কাজের বিবরণী পরিবর্তন করতে হবে, মেয়েদের প্রাধান্য দিতে হবে। লিঙ্গ সমতার বিষয়ে শুধুমাত্র

সচেতন করলেই হবে না, মেয়েদের সুযোগও দিতে হবে। এক্ষেত্রে গরিবদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিতে হবে।
লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল ঢাকা পোস্টকে বলেন, লিঙ্গ বৈষম্য যেটুকু ছিল, আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সেটা কমেছে। আমাদের যে ফিগার, সেখান থেকে খুব একটা পিছিয়ে যাইনি বরং চাকরি, ব্যবসাসহ অনেক ক্ষেত্রেই আমরা কিন্তু এগোচ্ছি। তবে আমরা এও মনে করি না যে, এই অবস্থানে থেমে থাকলে চলবে।

তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ইনকাম জেনারেটিং প্রোগ্রাম একটা বড় প্রকল্প। করোনাকালীন আমরা অনেক নারীকে ই-প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কম্পিউটার, কুটির শিল্প, কারু শিল্পের মতো বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়েছি। করোনার কারণে দুই বছর গার্মেন্টস সেক্টরে নারীদের বেশ কষ্টের মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে। কিন্তু বাল্যবিয়ে বাড়েনি। আমরা অবশ্যই পলিসি লেভেলে নারীদের পিছিয়ে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধান করব এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের আর কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেটাও ভাববো।

জাতীয় সংসদের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ বলেন, লিঙ্গ সমতায় বাংলাদেশ পিছিয়েছে, এটাকে আমি এত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি না এই কারণে যে, করোনার ধাক্কা ছিল। বাংলাদেশের মতো একটি দেশ করোনার মহামারি ও এর পরবর্তী সময়ে উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। এক্ষেত্রে অনেক কর্মজীবী নারী হয়তো চাকরি হারিয়ে ঘরে ঢুকে গেছে, অনেক বাল্যবিয়ে হয়েছে, কিন্তু এটাও মানতে হবে এই সময়টা আমাদের অনুকূলে ছিল না।

তিনি বলেন, মেয়েদের যাতে পরিবারে গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেজন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে আমাদের মন্ত্রণালয়। আশা রাখি, এটা আমরা খুব দ্রুত এটা ওভারকাম করব। কারণ, সরকার এসব বিষয়ে বিশেষভাবে সচেতন।

এএজে/এসএম