নারীর ক্ষমতায়ন ও শিশুকল্যাণে সরকারের পরিকল্পনার কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পাঁচটি ব্যয় খাতকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে তিনি বাজেটে মাত্র ১০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে বরাদ্দ প্রস্তাব করেছেন।

২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য ৪ হাজার ২৯০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী। যা ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ছিল ৪ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (৯ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী এ কথা জানান।

অর্থমন্ত্রী বলেন, সরকার শিশুর অধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং তাদের সামগ্রিক উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শিশুদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহ করা, খাদ্য ও পুষ্টির প্রাপ্য নিশ্চিত করা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে অভিগম্যতা নিশ্চিত করা ইত্যাদি অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্রে আমরা আগামী বাজেটেও গুরুত্ব দেব। কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যকৌশল বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় পুষ্টি-সংবেদনশীল পদ্ধতি এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে শিশুসহ দরিদ্র পরিবারগুলোর অগ্রাধিকারের বিষয়টি আমরা বিবেচনায় রাখছি।

ইতোপূর্বে প্রণীত ‘বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭’, ‘২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন-২০২০’ এর কঠোর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া নারী শ্রমিকের শিশুদের দিবাকালীন পরিচর্যা ও নিরাপত্তার নিমিত্ত ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইন, ২০২১’ প্রণীত হয়েছে এবং এরই মধ্যে দেশের ৬,১৬০টি শিল্প-কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে ‘শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র’ গড়ে তোলা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন ও শিশুকল্যাণে সরকারের পরিকল্পনার কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী বাজেটে আমরা পাঁচটি ব্যয় খাতকে গুরুত্ব দিয়েছি। যেগুলো হচ্ছে— দুস্থ মাতাদের খাদ্য সহায়তা (ভিজিডি) কর্মসূচি, জীবন-চক্রভিত্তিক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড বেনিফিট প্রোগ্রাম, শিশু বিকাশ কেন্দ্র ও কিশোর-কিশোরীদের ক্ষমতায়ন কর্মসূচি, নারীদের জন্য কারিগরি, বৃত্তিমূলক, আয়বর্ধক ও উৎপাদনশীল প্রশিক্ষণ প্রদান এবং নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রতিরোধ ও আইনগত সহায়তা প্রদান।

‘কোভিডের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ স্লোগান নিয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে পেশ করা হয়েছে। নতুন এ বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫ শতাংশে রাখার কথা বলা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। নতুন বাজেটে সরকারের আয়ের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। আর অনুদানসহ ঘাটতি ২ লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা।

আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের তুলনায় ৪৪ হাজার ৭৯ কোটি টাকা বেশি। কর বাবদ ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা আয় করার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাধ্যমে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে এনবিআরকে আগের বছরের তুলনায় ৪০ হাজার কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দিচ্ছে সরকার। এনবিআর বহির্ভূত কর থেকে আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর কর ছাড়া আয় ধরা হয়েছে ৪৫ হাজার কোটি। বৈদেশিক অনুদান থেকে আয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা।

জেইউ/এসএসএইচ