হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জের ত্রাস আক্কাসা বাহিনীর প্রধান আক্কাস মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। বুধবার (৩১ আগস্ট) দিবাগত রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন এলাকা থেকে র‍্যাব-৩ এর একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে। তিনি সুনামগঞ্জের শাল্লা থানার বাসিন্দা।

গ্রেপ্তার আক্কাস নেত্রকোনা জেলার খালীয়াজুড়িঁ থানায় খুন ও ডাকাতি মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি।

র‍্যাব জানায়, আক্কাস মিয়া একজন পেশাদার খুনি ও ডাকাত। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১২টি মামলা রয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তার স্ত্রী কেরানীগঞ্জের একটি ইট-ভাটায় কাজ করতেন। সর্বশেষ সেখানে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ এসব তথ্য জানান।

কর্নেল আরিফ বলেন, গত ২০১১ সালে নেত্রকোনার মনোরঞ্জন সরকারের বাড়িতে ডাকাতি করে আক্কাস ও তার দল। ডাকাতির সময় মনোরঞ্জনের ছেলে বাঁধা দেওয়ায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নেত্রকোনা খালীয়াজুড়িঁ থানায় আক্কাসকে প্রধান আসামি করে ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর একটি মামলা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ১৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে সেই মামলায় আক্কাসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত।

আক্কাসের বাহিনী হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ এলাকায় অর্ধ-শতাধিক বাড়িতে ডাকাতি করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে ডাকাতি ও ডাকাতির মালামাল হেফাজতে রাখার মোট ৪টি মামলা, চুরি ও চোরাই করা মালামাল হেফাজতে রাখার ৩টি মামলা রয়েছে। এছাড়া ২০১৬ সালে আক্কাস সুনামগঞ্জের শাল্লায় ভাড়ায় মারামারি করতে গিয়ে দুই জনকে হত্যা করে। এ ঘটনায় শাল্লা  থানায় তার বিরুদ্ধে আরও ৩টি মামলা দায়ের হয়।

এর আগে ২০১৪ সালে সুনামগঞ্জের দিরাই এলাকায় ভাড়ায় বাহিনী নিয়ে মারামারি করতে গিয়ে ১০ জনকে মারাত্মক আহত করে আক্কাস। এ ঘটনায় দিরাই থানায় আরও একটি মামলা হয় আক্কাসের বিরুদ্ধে।

গ্রেপ্তার আক্কাসকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তিনি পেশায় একজন খুনি ও ডাকাত। এছাড়া অর্থের বিনিময়ে ভাড়ায় মারামারিও করতেন। আক্কাসের ডাকাত দলের সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন। দলটি আক্কাস বাহিনী নামে পরিচিত। ডাকাতির কাজে কেউ বাঁধা দিলে আক্কাস তাদের খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না। হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ এবং নেত্রকোনা এলাকায় আক্কাস বাহিনী ছিল একটি আতঙ্কের নাম।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আক্কাসের বিরুদ্ধে ২০০৬ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত খুন, ডাকাতি, খুনসহ ডাকাতি, চুরি, মারামারি, লুটপাট, দাঙ্গা-হামলাসহ ১২টি মামলা রয়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জের শাল্লা থানায় একটি সাজা ওয়ারেন্টসহ মোট ৬টি ওয়ারেন্ট তামিলের অপেক্ষায় রয়েছে।

মামলাগুলোতে আক্কাস একাধিক বার গ্রেপ্তার হন এবং জামিনে বের হয়ে পুনরায় একই অপরাধে লিপ্ত হন। শুরুতে তিনি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিতেন। শাল্লা থানা এলাকার ট্রিপল মার্ডার ঘটনার পর তার পলাতক জীবন শুরু হয়।

২০১৬ সালে আক্কাস সুনামগঞ্জ থেকে পালিয়ে রাজধানীতে এসে ছদ্মনামে বসবাস করতে শুরু করে। ঢাকায় কখনো রিকশা বা সিএনজি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। একপর্যায়ে ঢাকায় একটি ডাকাত দল তৈরির চেষ্টা করেন। কিন্তু তার দলের অধিকাংশ সদস্য গ্রেপ্তার হওয়ায় তিনি ডাকাতি ছেড়ে মাছ বিক্রি শুরু করেন।

পরে ২০১৯ সালে নেত্রকোনার খুনসহ ডাকাতি মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা হওয়ার পর তিনি কেরানীগঞ্জ এলাকায় ইট ভাটায় স্ত্রীর কাছে আশ্রয় নেন। ঘুমানোর সময় সঙ্গে রাখতেন ধারালো ছুরি।

গ্রেপ্তার আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলেও জানান আরিফ।

এমএসি/এমএইচএস