জাতীয় সঞ্চয়পত্র কেনার সময় মিথ্যা তথ্য দিলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল এবং এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ‘সরকারি ঋণ বিল-২০২২’ সংসদে পাস হয়েছে। 

বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি নিজের বা কারো পক্ষে সরকারি সিকিউরিটি বা জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের আওতায় ইস্যু করা সার্টিফিকেটের স্বত্ব অর্জনের জন্য মিথ্যা তথ্য দিলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের জেল বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা হবে।

বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিলটি সংসদে পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগের বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

গত বছরের ১৬ নভেম্বর বিলটি সংসদে তোলেন অর্থমন্ত্রী। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিদ্যমান আইনে কোনো জরিমানা সুনির্দিষ্ট করা ছিল না। ১৯৪৪ সালের এ সংক্রান্ত আইনটি বাতিল করে নতুন করে বিলটি প্রণয়ন করা হয়। সরকারের ঋণ গ্রহণ প্রক্রিয়াকে আরও আধুনিক করার লক্ষ্যে আইনটি করা হয়েছে।

টেকসই ঋণ নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়ন, ঋণ কৌশলপত্র তৈরি, ঋণের ঝুঁকি নিরূপণ এবং সরকারের দায়ের হিসাবকে আরও প্রসারিত করার লক্ষ্যে নতুন আইনে ৪০টি ধারা রয়েছে। ‘সরকারি ঋণ বিল-২০২১’- এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বা জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অভিযোগ ছাড়া কোনো আদালত মিথ্যা তথ্য সম্পর্কিত সংঘটিত অপরাধ আমলে নিতে পারবেন না।

কোনো সরকারি সিকিউরিটি বা জাতীয় সঞ্চয় স্কিমের সার্টিফিকেটের মেয়াদ পূর্তির পর আসল ও মুনাফা দিয়ে দেওয়া হলে এ বিষয়ে সরকারের আর কোনো দায় থাকবে না। সরকারি সিকিউরিটির ধারক কোনো প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হলে বা অবসায়ন হলে ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে নিযুক্ত প্রশাসক সিকিউরিটির বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন বলে বিধান রাখা হয়েছে।

কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তার সরকারি সিকিউরিটি নিয়ম মেনে হস্তান্তর করার পর ওই ব্যক্তিকে সিকিউরিটির আসল বা সুদের বিষয়ে দায়ী করা যাবে না। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সরকার যে ঋণ নেবে তার যথাযথ গ্যারান্টি এ বিলের মাধ্যমে থাকবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। বিলে সরকারি ঋণ অফিসগুলোর ভূমিকা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। শরিয়াহভিত্তিক সরকারি সিকিউরিটি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিধান রাখা হয়েছে।

স্বাভাবিক ডিপোজিট ব্যবস্থার পাশাপাশি শরিয়াহভিত্তিক ডিপোজিট ব্যবস্থা ‘সুকুক’ নামে শুরু করা ‘বন্ড’ এ আইনের অধীনে আনা হয়েছে। এটি আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সার্কুলার দিয়ে চালু করা হয়েছিল।

সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে অর্থায়ন বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক গৃহীত বা দেশি বা বিদেশি মুদ্রায় গৃহীত সুদ বা মুনাফা যুক্ত বা সুদ বা মুনাফা মুক্ত যেকোনো প্রকারের ঋণ ও বিনিয়োগ সংগ্রহ করতে পারবে।

বিলে বলা হয়েছে, সরকারি ঋণ আইনের মাধ্যমে কত টাকা হলো এবং তার কী অবস্থা বা মুনাফা বা সুদ দেওয়া হলো তা জনগণকে জানানো হবে।

বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, যুগোপযোগী একটি ঋণ আইনের অধীনে বাংলাদেশে সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনার সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহের জন্য অধিকতর আধুনিক প্রক্রিয়ায় ঋণ সংগ্রহ, টেকসই ঋণনীতি ও ঋণ পরিকল্পনা প্রণয়ন, ঋণ কৌশলপত্র প্রস্তুত, ঋণের ঝুঁকি নিরূপণ, ঋণ বাজেট প্রস্তুতসহ সরকারের প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন দায় হিসাবায়নের পথ অধিকতর সম্প্রসারিত হবে। 

এসআর/আরএইচ