হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেছেন, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বিরোধী দলগুলো যদি প্রকৃত অর্থেই গণতন্ত্র চায় তাহলে তাদের ৭২-এর সংবিধান মানতে হবে। ধর্ম নিরেপক্ষতা মানতে হবে।

সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তাফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত ধর্ম মন্ত্রণালয় বাজেট বৈষম্য শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন।

নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু এখন ধর্মীয় বৈষম্য চরম পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশে বিশ্বাসী হলে মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী হতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী হলে জাতীয় চার নীতি মানতে হবে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন সূচকে আমরা পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। গণতন্ত্রের বদলে ধর্মীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা হলে পাকিস্তান বা আফগানিস্তানের মতো মসজিদে মসজিদে বোমা হামলা করবে জঙ্গিরা। এদেশেও মসজিদে, ঈদের জামাতে হামলা হয়েছে। এজন্য তামাশা করে লাভ নেই।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, আমরা ভেবেছিলাম ২০০৮-এর নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের অবস্থার পরিবর্তন হবে। বরং তা না হয়ে সরকারের মধ্যে সাম্প্রদায়িক শক্তি আরও গাঢ় হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরকার সরে পড়ছে। আমরা সংখ্যালঘুদের নিয়ে বৈষম্যের অবসান চাই।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রানা দাশ গুপ্ত সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাজেটে ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের জন্য মোট বরাদ্দের হার ৯৭.৮৭ শতাংশ। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্যে ২.১৩ শতাংশ।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যের সঙ্গে বলতে হয় ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতি বাজেট বরাদ্দ সীমাহীন অবজ্ঞা, অবহেলা, বৈষম্যের এক সুস্পষ্ট প্রমাণ। আজকের এই সংবাদ সম্মেলন থেকে আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

সংবাদ সম্মেলনে ৪ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে-

১. ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও কল্যাণে জাতীয় রাজস্ব বাজেট থেকে বার্ষিক বরাদ্দ প্রদান করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টগুলোকে ফাউন্ডেশনে রূপান্তরিত করে বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সব ধর্মসম্প্রদায়ের জন্য উন্নয়নের কার্যক্রমকে অধিকতর সম্প্রসারিত করা হোক।

২. সংবিধানের ২ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রধর্মের পক্ষে কাজ করছে বিধায় এ অনুচ্ছেদের অন্য অংশে বিধৃত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ধর্মের সম-অধিকার বাস্তবায়নার্থে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্যে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হোক।

৩. ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সার্বিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বরাদ্দ নিরূপণকল্পে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঠিক শুমারির উদ্যোগ নেওয়া হোক।

৪. ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি সম্পাদন ও ধর্মীয় সংস্কৃতির উন্নয়নে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মডেল মন্দির/প্যাগোডা/গির্জা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হোক।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, মহীন্দ্র নাথ চন্দ্র, প্রমুখ।

আইবি/এমএইচএস