আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহারসহ ১২টি পরিকল্পনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) রোডম্যাপ প্রস্তুত হয়েছে। এর মধ্যে সাতটি বিষয়ের ওপর প্রাধান্য দিয়ে চলতি মাসেই (সেপ্টেম্বর) চূড়ান্ত রোডম্যাপ প্রকাশ করবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

সেপ্টেম্বর থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত কোন মাসে কী কাজ করা হবে— বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে আউয়াল কমিশনের ওই পরিকল্পনায়।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান কমিশনের রোডম্যাপের পরিকল্পনার মধ্যে আছে— সংসদ নির্বাচন সমানে রেখে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণের জন্য আগের নীতিমালা পর্যালোচনা করে একটি নতুন নীতিমালা প্রস্তুত করা; ওই বছরের (২০২৩ সাল) মার্চে নীতিমালার আলোকে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া প্রস্তুত করা এবং ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনী আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা করা। এছাড়া একই বছরের আগস্টে খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকার ওপর দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করা এবং জুনে নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।

আরও পড়ুন >> কাউকে ধরে-বেঁধে নির্বাচনে আনব না : সিইসি

তারা আরও জানান, ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন। দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কয়েক দফা সংলাপ করেছে বর্তমান কমিশন। এবার নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ছক অনুসারে এগোতে চাইছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।

২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন / ফাইল ছবি

আউয়াল কমিশনের কর্মপরিকল্পনায় যা থাকছে

আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার। নির্বাচন প্রক্রিয়া সময়োপযোগীকরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ গ্রহণ। সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ। নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ। বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক ভোটকেন্দ্র স্থাপন। নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ। নির্বাচনে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহার। দক্ষ নির্বাচনী কর্মকর্তার প্যানেল তৈরি ও প্রশিক্ষণ। ভোটার সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম। পর্যবেক্ষণ সংস্থার নিবন্ধন ও নবায়ন কার্যক্রম। নির্বাচনী কার্যক্রমে গণমাধ্যমকে আইনি কাঠামোর আওতায় সম্পৃক্তকরণ।

আরও পড়ুন >> ‘বার্ডেন অব প্রুফ’ নির্বাচন কমিশনের, সিইসিকে সুজন

ইসি কর্মকর্তারা জানান, নির্বাচনে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে— জিআইএস (ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা) পদ্ধতিতে ভোটকেন্দ্রের তথ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ডাটাবেজ ও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন। নির্বাচনী ক্যালেন্ডার, অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল ও গ্রহণ, প্রার্থীর তথ্য ব্যবস্থাপনা, পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম, ভোট গ্রহণ ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডাটাবেজ তৈরি, কেন্দ্রের তথ্য ব্যবস্থাপনা এবং কেন্দ্র হতে নিরাপদ ও দ্রুত সময়ে নির্বাচনী ফল প্রেরণ সংক্রান্ত সিস্টেমের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন। নির্বাচন তথ্য-সংক্রান্ত অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন। সফটওয়্যারের মাধ্যমে অডিট ও বিভিন্ন রিপোর্ট প্রস্তুতের ব্যবস্থা আধুনিকায়ন, কমপ্লেইন্ট ও কমপ্লায়েন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন। প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন।

এছাড়া ভোটার সংখ্যা, জনশুমারি ও ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে জিআইএস পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত ডাটাবেজ ও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন। এক্ষেত্রে আগামী জানুয়ারিতে আগের নীতিমালা পর্যালোচনা করে একটি নতুন নীতিমালা প্রস্তুত করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে জিআইএস সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে ইসি। মার্চে নীতিমালার আলোকে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া প্রস্তুত করা হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল / ফাইল ছবি

কর্মকর্তারা আরও জানান, কর্মপরিকল্পনার মধ্যে আরও আছে— আগামী মাসে (অক্টোবর) নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সংলাপ। একই মাসে নির্বাচন পরিচালনা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ। আগামী নভেম্বর মাসে নারী-নেতৃত্বের সঙ্গে সংলাপ। একই মাসে সুপারিশমালার খসড়া চূড়ান্ত করা এবং ডিসেম্বরে সুপারিশমালা চূড়ান্ত করা।

আরও পড়ুন >> জনসংখ্যার প্রতিবেদন পেলে সীমানা পুনর্নির্ধারণ হবে : ইসি 

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এসব বিষয়ে বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় বিরোধী দলগুলো। নির্বাচন কমিশনও সেটি চায়। সে লক্ষ্যে ভোটার তালিকা আগামী বছরের মার্চে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হবে। এছাড়া রোডম্যাপ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্তভাবে অবহিত করতে পারবে নির্বাচন কমিশন।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। সেই হিসাবে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। যদি এটি (নির্বাচন) ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে নভেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে শিডিউল দিতে হবে। আর যদি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হয় তাহলে নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ঘোষণা দিতে হবে। এছাড়া নির্বাচনের মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী। গুরুত্ব অনুসারে তারা ঠিক করে নেবে কোথায় কোথায় থাকবে।

এসআর/এমএআর/