প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেছেন আশরাফুল আলম খোকন। রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) নিজ ভেরিফাইড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এমন তথ্য জানান তিনি।

স্ট্যাটাসে আশরাফুল আলম খোকন লেখেন, ‘যাত্রাটা শুরু হয়েছিল ১৮ আগস্ট ২০১৩ সালে। বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদের মাত্র পাঁচ মাস বাকি তখন। যুক্তরাষ্ট্রের আয়েশি জীবন ছেড়ে অনিশ্চয়তার পথে এসে হেঁটে ছিলাম। কারণ তখন সবেমাত্র আওয়ামীলীগ ৫টা সিটি করপোরেশনে লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে হেরেছে। হেফাজত, বিএনপি, জামায়াতের বাঁশেরকেল্লা বাহিনীর অপপ্রচারে ত্রাহি অবস্থা। ওই সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে সুযোগ দিয়েছেন তার উপ-প্রেস সচিব হিসেবে কাজ করার। সরকারের কাজের প্রচার-প্রচারণা, গুজব প্রতিরোধ ও মিডিয়া সেক্টর নিয়ে কাজ করেছি। তবে তখনও সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের সুনাম ছিল। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিইমেজ ছিল এখনকার মতোই প্রতিদ্বন্দ্বীহীন।’

আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, আমি আমার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আবেদনপত্র দিয়েছি। কারণ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে শিক্ষা ছুটির কোনো বিধান নাই। খারাপ সময়ে যোগদান করে ভালো সময়ে এসে সাড়ে সাত বছরের জার্নি আপাতত শেষ করতে যাচ্ছি। হয়তো আবার দেখা হবে

আশরাফুল আলম খোকন

খোকন আরও লেখেন, ‘ছোট সময় থেকে এ দলটির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার কারণে এ দায়িত্ব ছিল আমার জন্য বিশাল প্রাপ্তি ও সম্মানের। একে তো দেশের প্রধানমন্ত্রী আবার তিনি যদি হন বঙ্গবন্ধুকন্যা। পরপর তিন তিনবার নিয়োগ পাবার মতো ভাগ্যবান একজন আমি। ১৭ কোটি মানুষের দেশে এ সৌভাগ্য কয়জনের হয়। আমি সেই ভাগ্যবানদের একজন। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি। আমৃত্যু এ ঋণ শোধ হবে না। জীবনে যখন, যেখানে, যেভাবে থাকব; শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও দল ও নেত্রীর জন্য কাজ করে যাব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আশরাফুল আলম খোকন

‘অতঃপর সুখবর হচ্ছে, আমি সাংবাদিকতার ওপর আরও পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের Hofstra University-তে একটি স্কলারশিপ পেয়েছি। গত সেপ্টেম্বরেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিশ্চিত করা হয়। সুযোগটা আমি হাতছাড়া করতে চাইনি। কারণ আমি মিডিয়াতে কাজ করা মানুষ। এ সেক্টরেই কাজ করে যেতে চাই। আর উচ্চ শিক্ষার প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্বলতা সবাই জানেন। তাদের পরিবারের সকলকেই তিনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমাকেও তিনি সেই সুযোগটি দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতা নেত্রীর প্রতি।’ 

অব্যাহতি প্রসঙ্গে সর্বশেষ তিনি লেখেন, ‘আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১, আমি আমার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আবেদনপত্র দিয়েছি। কারণ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে শিক্ষা ছুটির কোনো বিধান নাই। খারাপ সময়ে যোগদান করে ভালো সময়ে এসে সাড়ে সাত বছরের জার্নি আপাতত শেষ করতে যাচ্ছি। হয়তো আবার দেখা হবে। এই দীর্ঘযাত্রা পথে যাদের সহযোগিতা পেয়েছি তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, ব্যক্তিগত অনুবিভাগ, দলের নেতাকর্মী এবং সর্বোপরি দেশের সকল মিডিয়ার আলোকিত মানুষরা। যাদের সহযোগিতা পাইনি, ক্রমাগত বিরোধিতা ও প্রতিবন্ধকতা পেয়েছি তাদের প্রতিও অনেক কৃতজ্ঞতা। কারণ তাদের কারণে আমি এ বয়সেই অনেক কিছু শিখেছি যা বাকি জীবনে পথ চলতে অনেক সহায়ক হবে। সবাই ভালো থাকবেন। জয়বাংলা...’

একনজরে আশরাফুল আলম খোকন

স্কুলজীবন থেকে শুরু করে ছাত্রজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন খোকন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী খোকন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক হিসেবে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব পদে যোগদানের আগে আশরাফুল আলম খোকন চ্যানেল আইয়ের নর্থ আমেরিকার প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ পদে তিনি ছয় বছর কাজ করেছেন।

এইউএ/এমএআর