ফুটপাত দখলমুক্ত করতে রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে এই অভিযান। এসময় ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে হকারদের লুকোচুরি খেলার খবর পাওয়া গেছে।

সিটি করপোরেশন বলছে, গুলিস্তানে তিন দিন মাইকিং করে অবৈধ দোকান উচ্ছেদের বিষয়ে হকারদের জানানো হয়েছে। তবে হকারদের অভিযোগ, অভিযানের বিষয়ে তারা আগে থেকে কিছুই জানতেন না। এমনকি মাইকিংও শুনতে পাননি।

হকাররা বলছেন, তারা এই এলাকার রাস্তা ও ফুটপাতে জিনিসপত্র বিক্রি করে সংসার চালান। তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। বিকল্প কর্মসংস্থান না হলে যতবারই অভিযান পরিচালনা করা হোক, তারা ফুটপাত ছাড়বেন না। 

১৫ বছর ধরে গুলিস্তানে বাচ্চাদের ছোট জামা বিক্রি করেন ত্রিশোর্ধ মাসুদ ভূইয়া। নারায়ণগঞ্জে থাকেন এই হকার। তিনি বলেন, আমরা সিটি করপোরেশনের কোনো মাইকিং শুনিনি। একদিন পরে মঙ্গলবার আড়াই হাজার টাকা কিস্তি দিতে হবে। ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় বাচ্চাদের জামা তুলছি। ব্যবসা করে কিস্তি দিয়ে বৌ-বাচ্চা নিয়ে কোনোরকমে খেয়ে পরে বেঁচে আছি। আজ অভিযান চালিয়েছে। জানি না পরশু কিস্তি দেব কোত্থেকে।

আরও পড়ুন: গুলিস্তানে ডিএসসিসির অভিযানে জরিমানা গুনল হকাররা

তিনি বলেন, আজ বাসা থেকে আসার সময় বউয়ের কাছ থেকে ১০০ টাকা এনেছি। নিজের কাছে ছিল ১২০ টাকা। সেটা দিয়েই কোনোরকমে দিন পার হয়েছে। কাল কোত্থেকে টাকা আসবে জানি না। আমাদের হকারদের অতিরিক্ত কোনো টাকা নেই। দৈনিক যা আয় করি, তা দিয়েই কষ্ট করে চালিয়ে নিতে হয়।

মাসুদ আরও বলেন, একদিনে যদি ২০ বারও অভিযান চালানো হয়, ২০ বারই অভিযানের পর আমরা ফুটপাতে বসব। কারণ আমাদের যাওয়ার জায়গা নেই। সোজা কথায় বলতে গেলে, বিকল্প ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত আমরা ফুটপাতেই থাকব, এ জায়গা ছাড়ব না।

পুরাতন হকার্স মার্কেট ভেঙে সেখানে ১০ তলা বিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউ বহুতল বিপণিবিতান বা বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হকার্স মার্কেটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এই ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। হকাররা বলছেন, এই মার্কেটে তাদের দোকান নেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না।

হকার মাসুদ ভুইয়া বলেন, এই মার্কেটে কোনো দোকান হকারের নয়, সবগুলো কোটিপতি দোকানদারদের। একেকজন দোকানদার ৫০ লাখ থেকে ১/২ কোটি টাকার মালিক। হকাররা তো এক হাজার টাকাই পকেটে রাখতে পারে না, দোকান নিবে কোত্থেকে। হকারদের নামে মার্কেট করে বড় ব্যবসায়ীরা দুই থেকে পাঁচটা দোকান নিচ্ছে।

ফুটপাতে ফল বিক্রি করেন পঞ্চাশোর্ধ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। থাকেন ঢাকার কেরানীগঞ্জে। সকালে গুলিস্তান আসেন, রাত ৮টার পর ফিরে যান বাসায়।

তিনি বলেন, আগে রাত ১০টায় দোকান-পাট, মার্কেট বন্ধ হতো। তখন সন্ধ্যার পর ভালোই বেচাকেনা হতো। কিন্তু এখন সন্ধ্যার পরপরই দোকান বন্ধ করার প্রস্তুতি চলে। শুনছি, বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার জন্য নাকি ৮টায় সবকিছু বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাতে লাইট না জ্বললে আমরাও কিছু বিক্রি করতে পারি না। প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। হকারি না করলে এই টাকা কে দেবে আমাদের। তাই যতই অভিযান চালানো হোক, ফুটপাত ছাড়ব না।

তিনি বলেন, হকার মানে এক একজন সিকিউরিটি গার্ড। এই রাস্তায় রাতে অনেক ছিনতাই, চাঁদাবাজি হয়। হকার থাকলে ছিনতাই-চাঁদাবাজি দূরে থাক, একটা নেশাখোরও এই রাস্তা দিয়ে যেতে পারে না।

এএজে/এসএসএইচ