অভিযুক্ত মাইক্রোবাস চালক জিয়াউল হক। ইনসেটে নিহত ছাত্র আলী হোসেন/ ছবি : ঢাকা পোস্ট

কোচিং সেন্টারে যাওয়ার জন্য রোববার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে বাসা থেকে বের হয়েছিল সরকারি বিজ্ঞান হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মো. আলী হোসেন (১৭)। সকাল সোয়া ৭টার দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় তাকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায় একটি মাইক্রোবাস। 

পুলিশ বলছে, দুর্ঘটনা হয়েছে বুঝতে পেরে পুলিশের সিগন্যাল অমান্য করে দ্রুত গতিতে পালিয়ে যান মাইক্রোবাসের চালক জিয়াউল হক। রুট পরিবর্তন করে মাইক্রোবাস নিয়ে তিনি আশুলিয়ায় চলে যান। সেখানেও তিনি নিজের অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখেন তিনি।

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তেজগাঁওয়ের নিজ কার্যালয়ে সংবাদিকদের এসব তথ্য জানান উপ-কমিশনার (ডিসি) আজিমুল হক।

তিনি জানান, দুর্ঘটনার পর ৩৭টি সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। সেগুলো পর্যালোচনার পর মাইক্রোবাসটি শনাক্ত করা হয়। এরপর চালকের অবস্থান শনাক্ত করে সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে আশুলিয়ার বিশ মাইল এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সঙ্গে মাইক্রোবাসটিও জব্দ করা হয়। 

নিজ কার্যালয়ে সংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডিসি আজিমুল হক

ডিসি আজিমুল হক বলেন, গতকাল সকালে দুর্ঘটনার পর ওই এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা আহত আলী হোসেনকে প্রথমে শমরিতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।  

আরও পড়ুন : বেঁচে থাকতে মুখ খোলেননি, পেট কেটে মিলল ইয়াবা

আজিমুল হক বলেন, নিহত আলী হোসেনের বাবা মিরপুরে একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। দুই ভাই-বোনের মধ্যে আলী হোসেন বড়। পরিবারের সঙ্গে আলী হোসেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার কুনিপাড়া হ্যাপি হোমস এলাকায় বসবাস করত।

ডিসি আজিমুল হক বলেন, গাড়ির মালিকের কর্মস্থল ঢাকায়। তিনি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করেন। গাড়িটি সাভারে তার পারিবারিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। চালক আশুলিয়ায় থাকেন। তিনি মালিককে পিক করতে রোববার এখানে আসেন।

জব্দ করা মাইক্রোবাসটিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড লেখা স্টিকার ছিল। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আজিমুল বলেন, অনেকে সাংবাদিক বা পুলিশ না হয়েও সাংবাদিক বা পুলিশ লেখা স্টিকার গাড়িতে ব্যবহার করেন। আমরা তদন্ত করে দেখব মাইক্রোবাসের মালিক আসলে কে। কারণ গ্রেপ্তারকৃত চালক জিয়াউল একেক সময় একেক ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। তাই এটি কোনো রাজস্ব কর্মকর্তার গাড়ি কি না তা এখনো নিশ্চিত নই। চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছি। সেটা সঠিক কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।

জব্দ করা গাড়ি

এদিকে অভিযুক্ত চালকের শাস্তির দাবিতে আলী হোসেনের সহপাঠীরা আজ ফার্মগেট ও বিজয় সরণিতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করেছেন। এ সময় তারা বেশ কিছু দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। 

সেসব দাবি বাস্তবায়নে পুলিশ উদ্যোগ নেবে উল্লেখ করে আজিমুল বলেন, আমাদের দায়িত্বের আওতায় যেসব দাবি রয়েছে তা বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া ওই কলেজের সামনে যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।  

 জেইউ/এসএএ/এসকেডি